স্পোর্টস ডেস্ক :
মিরপুরের স্পিন স্বর্গে প্রথম ওয়ানডেতে বাজেভাবে হেরেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তাই ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে দ্বিতীয় ম্যাচে ৫ স্পিনার নিয়ে লড়াই করতে নেমেছিল সফরকারীরা। স্পিনাররা দাপট দেখালেও শেষ ওভারে ৫ রান তুলতে ব্যর্থ হন শাই হোপরা। এতে ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে, সেখানেও দাপট দেখিয়েছেন স্পিনার মুদাকেশ মোতি। সুপার ওভারে বাংলাদেশকে ১ রানে হারিয়ে সিরিজে ১-১ সমতা ফিরিয়েছে সফরকারীরা।
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) আগে ব্যাট করতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২১৪ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল বাংলাদেশ। জবাব দিতে নেমে নির্ধারিত ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ২১৩ রান তুলতে পারে ক্যারিবিয়ানরা। এতে ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে। সেখানেই বাজিমাত করেছে ক্যারিবিয়ানরা।
সুপার ওভারে বল হাতে নেন মোস্তাফিজুর রহমান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিংয়ে নামেন শাই হোপ আর শেরফান রাদারফোর্ড। প্রথম বলে সিঙ্গেলস নেন হোপ। কিন্তু পরের বলেই বড় শট খেলতে গিয়ে বাউন্ডারিতে মিরাজের লো ক্যাচ হন রাদারফোর্ড।
মোস্তাফিজ বেশ নিয়ন্ত্রিত বল করেন। পরের তিন বলে দেন ৫ রান। কিন্তু শেষ বলে চার মেরে দেন হোপ। ১ উইকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তোলে ১০ রান।
১১ রানের লক্ষ্যে বাংলাদেশের হয়ে সুপার ওভারে ব্যাটিংয়ে নামেন সৌম্য ও সাইফ। বোলিংয়ে এসে প্রথম বল ওয়াইড করেন আকিল। পরের বল করেন নো। তাতে কোনো বল করার আগেই ৪ রান খরচ করেন এই স্পিনার। ফলে সমীকরণ দাঁড়ায় ৬ বলে ৬ রান। প্রথম বৈধ বলে এক রান নেন সৌম্য। দ্বিতীয় বল ডট খেললেও তৃতীয় বলে এক রান নেন সাইফ। চতুর্থ বলে আউট হন সৌম্য। নতুন ব্যাটার শান্ত এসে পঞ্চম বলে এক রানের বেশি নিতে পারেননি। এরপর আবার ওয়াইড দিলে শেষ বলে ৩ রান প্রয়োজন হয় বাংলাদেশের। তবে কেবল এক রান নিতে পেরেছেন সাইফ। তাতে প্রথমবার কোনো সুপার ওভার খেলে হারল বাংলাদেশ।
আগের ম্যাচে টস হেরে ব্যাটিং পাওয়া বাংলাদেশ এবার আগে ব্যাটিং নেয় টস জিতে। নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবার দুই প্রান্তে স্পিন দিয়ে আক্রমণ শুরু করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথম সাফল্য পায় তারা পঞ্চম ওভারে। আগের রাত আড়াইটায় দলের সঙ্গে যোগ দেওয়া আকিল হোসেন এনে দেন প্রথম উইকেট। টানা ১৪ বলে রান না পেয়ে অবশেষে আকিলকে ছক্কা মেরে রানের দেখা পান সাইফ হাসান। পরের বলেই ক্যাচ দেন তিনি স্লিপে (১৬ বলে ৬)।
ওয়ানডে ক্যারিয়ারে মাত্র দ্বিতীয়বার তিনে নামা তাওহিদ হৃদয়ের অবস্থাও তথৈবচ। প্রথম রান করতে তিনি খেলেন ১০ বল। অন্য প্রান্তে সৌম্য সরকারও পিচের চরিত্র বুঝে আঁকড়ে রাখেন উইকেট।
প্রথম ১৫ ওভারে ডট ডেলিভারি ছিল ৬৫টি। হৃদয় (১৯ বলে ১২) উইকেট হারান দৃষ্টিকটু স্লগে। ক্রিজে কিছুটা সময় কাটিয়ে উইকেট বিলিয়ে দেন নাজমুল হোসেন শান্ত (২১ বলে ১৫) ও মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন (৩৫ বলে ১৭)।
এই পুরো সময় এক প্রান্ত আগলে ছিলেন সৌম্য। ৩০ ওভারের বেশি ক্রিজে কাটিয়ে উইকেট উপহার দিয়ে ফেরেন তিনিও। ৮৯ বল খেলেন তিনি। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এর চেয়ে বেশি বল খেলেছেন আর কেবল তিনবার, প্রতিটিতেই করেছেন সেঞ্চুরি। কিন্তু এ দিন তার নামের পাশে রান ৪৫। স্ট্রাইক রেট ৫০.৫৬। তার দু অঙ্ক ছোঁয়া ইনিংসগুলোর মধ্যে মন্থরতম ইনিংস এটিই।
একটি ছক্কা মারলেও নাসুম আহমেদ (২৬ বলে ১৪) সুবিধা করতে পারেননি। বাংলাদেশের ইনিংস একটু গতি পায় নুরুল হাসান সোহানের ব্যাটে। দুই চার এক ছক্কায় ২৪ বলে ২৩ করেন তিনি।
তার পরও দুইশ ছিল দূরের পথ। শেষ দুই ওভারে ঝড়ের বেগে সেই দূরত্ব ঘুচিয়ে দেন রিশাদ। ৪৯তম ওভারে গুডাকেশ মোটিকে দুটি ছক্কা ও একটি চার মারেন তিনি, শেষ ওভারে ছক্কা ও চার মারেন আকিলকে।
শেষ দুই ওভারে ৩৪ রান তোলে বাংলাদেশ, রিশাদের ব্যাট থেকেই আসে ৩৩।
তিনটি করে ছক্কা ও চারে ১৪ বলে ৩৯ রানে অপরাজিত থাকেন রিশাদ। বাংলাদেশের হয়ে এক ওয়ানডেতে ২০ ছোঁয়া ইনিংসগুলোর মধ্যে তার স্ট্রাইক রেটই (২৭৮.৫৭) সর্বোচ্চ।
অধিনায়ক মিরাজ অপরাজিত থাকেন ৫৮ বলে ৩২ রান করে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের পাঁচ স্পিনারের মধ্যে একমাত্র অনিয়মিত স্পিনার যিনি, সেই আলিক আথানেজ ছিলেন সবচেয়ে উজ্জ্বল। ১০ ওভারে স্রেফ ১৪ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন তিনি। বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডেতে ১০ ওভার বোলিং করা স্পিনারদের মধ্যে সবচেয়ে মিতব্যয়ী তিনিই।
ব্যাটিংয়ের শেষটার মতো বোলিংয়ের শুরুটাও ভালো করে বাংলাদেশ। প্রথম ওভারেই ব্র্যান্ডন কিংকে ফেরান ১০ মাস পর ওয়ানডে খেলতে নামা নাসুম আহমেদ।
সেই ধাক্কা সামলে অর্ধশত রানের জুটি গড়েন আথানেজ ও কেসি কার্টি। বাংলাদেশের দুর্ভাবনা দূর হয় রিশাদ বল হাতে নিতেই। প্রথম ওভারেই আথানেজকে (২৮) ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন তিনি।
আরেকপ্রান্তে জমে যাওয়া কার্টিও (৩৫) ফেরেন রিশাদের শিকার হয়ে।
একটু পর অভিষিক্ত আকিম ওগিসের (১৭) বিদায়েও ছিল রিশাদের হাত। তানভির ইসলামের বলে দারুণ রিফ্লেক্স ক্যাচ নেন তিনি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ উইকেট হারাতে থাকে নিয়মিত বিরতিতে। তানভিরের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হয় শেরফেন রাদারফোর্ড, নাসুমের দ্বিতীয় শিকার রোস্টন চেইস। রিশাদকে স্লগ করার চেষ্টায় বোল্ড গুডাকেশ মোটি।
১৩৩ রানে ৭ উইকেট হারানো তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ তখন হারের দুয়ারে। সেখান থেকে দলকে আবার লড়াইফে ফেরায় শেই হোপ ও জাস্টিন গ্রেভসের জুটি। ৯ নম্বরে নামলেও গ্রেভস মূলত ব্যাটসম্যানই। ঠাণ্ডা মাথায় খেলে হোপের সঙ্গে মিলে দলকে এগিয়ে নেন তিনি।
কোনো বোলারই যখন থামাতে পারছে না এই জুটিকে, মিরাজের দারুণ এক সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট হয়ে যান গ্রেভস (২৬)।
তবু লড়াইয়ে হাল ছাড়েনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এবার হোপের সঙ্গী হন আকিল। দুজনের জুটি দলকে নিয়ে যায় জয়ের খুব কাছে। ৪৮তম ওভারের শেষ বলে যখন মিরাজকে গ্যালারিতে আছড়ে ফেলেন আকিল, ক্যারিবিয়ানরাই তখন ম্যাচে ফেভারিট। কিন্তু শেষ ওভারে ৫ রানের সহজ সমীকরণে খেই হারান সেই আকিলই। সিরিজের শেষ ম্যাচ বৃহস্পতিবার।