সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি :
সুনামগঞ্জে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার সুনামগঞ্জ-৫ (ছাতক-দোয়ারাবাজার) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিককে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে তাকে সুনামগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আলমগীরের আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে আদালত তাকে জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
মুহিবুর রহমানের আইনজীবী আব্দুল হামিদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আদালত সূত্র জানায়, আদালতে তোলার পর মুহিবুর রহমানের আইনজীবীরা তার জামিনের আবেদন করেন। মামলার মূল নথি দায়রা জজ আদালতে থাকায় জামিন শুনানি আগামী সোমবার (১৫ অক্টোবর) ধার্য করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।
আইনজীবী আব্দুল হামিদ জানান, মুহিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে আজ আদালতের তোলা হয়েছে। সেখানে আমরা জামিন আবেদন করি। সংশ্লিষ্ট আদালত না থাকায় তার জামিন হয়নি। ৪ আগস্টের ঘটনায় তাকে অযথাই মামলার আসামি করা হয়েছে। মিথ্যাভাবে তার ওপর মামলা করায় তিনি হয়রানির শিকার হয়েছেন। তিনি গুরুতর অসুস্থ থাকায় তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এবং কারাগার আইন অনুযায়ী তাকে মর্যাদা দেওয়ার জন্য আদেশ হয়। তিনি পাঁচবারের এমপি। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন। আমরা আগামী ১৫ তারিখ তার জামিন আবেদন করব।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা মহিবুর রহমান মানিককে গত মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) রাত ৯টার দিকে রাজধানীর ভাটারা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে র্যাবের একটি দল। তিনি ‘বোমা মানিক’ হিসেবে পরিচিত।
মুহিবুর রহমান মানিক প্রথমে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ও পরে গণতন্ত্রী পার্টির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি ১৯৯০ সালে ছাতক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সুনামগঞ্জ-৫ আসন থেকে গণতন্ত্রী পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রথমবার জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে পরাজিত হন। ১৯৯৪ সালে গণতন্ত্রী পার্টি বিলুপ্তির পর তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যোগ দেন।
মহিবুর রহমান মানিক ১২ জুন ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুনামগঞ্জ-৫ আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন। এর পর ২০০৮ সাল থেকে পরপর চারটি নির্বাচনে সুনামগঞ্জ-৫ আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
তিনি প্রথমবার এমপি হওয়ার পর ছাতকে নিজ বাসায় বোমা বানাতে গিয়ে বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনা ঘটে। সেই থেকে তাকে সবাই ‘বোমা মানিক’ হিসেবে চেনেন। বিরোধী দল ও মতের মানুষদের দমন করতে তার বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কথা মানুষের মুখে মুখে ঘুরে বেড়ায়।
উল্লেখ্য, গত ৪ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে সুনামগঞ্জে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর হামলা, গুলি, টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এতে শতাধিক ছাত্রজনতা আহত হন। ওই ঘটনায় ৯৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন গুলিবিদ্ধ জহুর আহমদের ভাই হাফিজুর রহমান। দ্রুত বিচার আইনে মামলা করার গ্রেপ্তার করা হয় এমএ মুহিবুর রহমান মানিককে।