Dhaka মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সুদের টাকা পরিশোধ করে ১ মণ দুধ দিয়ে গোসল

শেরপুর জেলা প্রতিনিধি : 

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় এনজিওর ঋণের টাকা পরিশোধ করে এক মণ দুধ দিয়ে গোসল করেছেন এক রাজমিস্ত্রি। এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) ঘটনাটি ঘটে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার বাঘবের ইউনিয়নের জাংগালিয়াকান্দা গ্রামে। পেশায় রাজমিস্ত্রি শহিদুল নালিতাবাড়ী উপজেলার বাঘবের ইউনিয়নের জাংগালিয়াকান্দা গ্রামের আবদুল কাদেরের ছেলে।

তিন সন্তানের জনক শহিদুল ইসলাম। সংসারের অভাবে স্থানীয় এক সুদ কারবারির সমিতি থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেন। এ ঋণই যেন তার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ায়। সেই সমিতির সুদ কারবারিদের চাপে তিনি অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন। পরে বাধ্য হয়ে সংসারের শেষ সম্বল একটি ষাঁড় গরু বিক্রি করেন শহিদুল। সেই গরু বিক্রির টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করেন। ঋণ পরিশোধ করে ৪০ লিটার দুধ দিয়ে গোসল করেন তিনি। এ সময় শপথ করেন আর কোনো দিন সুদ না নেওয়ার।

ছবিতে দেখা যাচ্ছে, গাছপালা ঘেরা উঠানের মধ্যে বসে শহিদ দুধ দিয়ে গোসল করছেন। তাকে ঘিরে রেখেছেন কয়েকজন প্রতিবেশী। সামনের একটি বড় সিলভারের পাত্রে দুধ রাখা।

শহিদুল ইসলাম বলেন, এক বছর আগে স্থানীয় একটি সুদ সমিতি থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিই। ওই ঋণের টাকা সাপ্তাহিক কিস্তিতে পরিশোধ করার কথা ছিল। তবে সময়মতো কিস্তি পরিশোধ করতে পারিনি। ফলে ওই সমিতির লোকজন আমাকে নানাভাবে চাপ দেয়। চাপের মুখে বাধ্য হয়ে হাঁস-মুরগি ও ডিম বিক্রি করে কিস্তি দিয়েছিলাম। কিন্তু এতেও ঋণ পরিশোধ করা যায়নি। পরে বাধ্য হয়ে গরুটি বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করি।

তিনি বলেন, আমি হার্টের রোগী। শরীর অসুস্থ থাকায় নিয়মিত কাজেও যেতে পারিনি। সে কারণে কিস্তি দিতে পারিনি।

দুধ দিয়ে গোসল করার কারণ জানতে চাইলে শহিদুল বলেন, আমি রাজমিস্ত্রির কাজ করে সংসার চালাই। তিন কন্যাসন্তান, স্ত্রীসহ পাঁচজনের সংসার। সংসার চালাতে গিয়ে সমিতি থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছিল। সংসারের শেষ সম্বল গরুটি বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করি। পরে ঋণমুক্ত হয়ে দুধ দিয়ে গোসল করে সুদ না নেওয়ার শপথ করি।

প্রত্যক্ষদর্শী প্রতিবেশী সাইফুল ইসলাম বলেন, তিন মেয়ে, স্ত্রীকে নিয়ে পাঁচ সদস্যের পরিবার শহিদুলের। প্রায় এক বছর আগে স্থানীয় একটি এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেন শহিদুল। ঋণের টাকা সাপ্তাহিক কিস্তিতে পরিশোধ করার কথা থাকলেও সংসারের আর্থিক টানাপোড়েনে তিনি নিয়মিত পরিশোধ করতে পারছিলেন না।

এ বিষয়ে সৃষ্টি হিউম্যান রাইটস সোসাইটির জেলা সভাপতি আলমগীর আল আমিন বলেন, শেরপুরের বিভিন্ন গ্রামে, হাটবাজারে ব্যাঙের ছাতার মতো সুদ সমিতি গড়ে উঠেছে। কেউ সমবায় থেকে অনুমোদন নিয়েছে আবার কেউ না নিয়েই সুদের কারবার চালাচ্ছে। আর এসব কারবারি সহজসরল মানুষের অভাবের সুযোগ কাজে লাগিয়ে টাকা দিচ্ছে। পরে মোটা অঙ্কের লাভ নেওয়া হচ্ছে। টাকা আদায়ের ক্ষেত্রে অনেক সময় মারধরের ঘটনাও ঘটছে। সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বেশিরভাগ সুদ সমিতি চালানো হচ্ছে। এদিকে প্রশাসনের নজর দেওয়া জরুরি।

 

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

বিদ্যালয়ে নির্মাণ কাজে পুরোনা রড ব্যবহারের অভিযোগ

সুদের টাকা পরিশোধ করে ১ মণ দুধ দিয়ে গোসল

প্রকাশের সময় : ০২:২৩:২৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ জুলাই ২০২৩

শেরপুর জেলা প্রতিনিধি : 

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় এনজিওর ঋণের টাকা পরিশোধ করে এক মণ দুধ দিয়ে গোসল করেছেন এক রাজমিস্ত্রি। এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) ঘটনাটি ঘটে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার বাঘবের ইউনিয়নের জাংগালিয়াকান্দা গ্রামে। পেশায় রাজমিস্ত্রি শহিদুল নালিতাবাড়ী উপজেলার বাঘবের ইউনিয়নের জাংগালিয়াকান্দা গ্রামের আবদুল কাদেরের ছেলে।

তিন সন্তানের জনক শহিদুল ইসলাম। সংসারের অভাবে স্থানীয় এক সুদ কারবারির সমিতি থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেন। এ ঋণই যেন তার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ায়। সেই সমিতির সুদ কারবারিদের চাপে তিনি অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন। পরে বাধ্য হয়ে সংসারের শেষ সম্বল একটি ষাঁড় গরু বিক্রি করেন শহিদুল। সেই গরু বিক্রির টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করেন। ঋণ পরিশোধ করে ৪০ লিটার দুধ দিয়ে গোসল করেন তিনি। এ সময় শপথ করেন আর কোনো দিন সুদ না নেওয়ার।

ছবিতে দেখা যাচ্ছে, গাছপালা ঘেরা উঠানের মধ্যে বসে শহিদ দুধ দিয়ে গোসল করছেন। তাকে ঘিরে রেখেছেন কয়েকজন প্রতিবেশী। সামনের একটি বড় সিলভারের পাত্রে দুধ রাখা।

শহিদুল ইসলাম বলেন, এক বছর আগে স্থানীয় একটি সুদ সমিতি থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিই। ওই ঋণের টাকা সাপ্তাহিক কিস্তিতে পরিশোধ করার কথা ছিল। তবে সময়মতো কিস্তি পরিশোধ করতে পারিনি। ফলে ওই সমিতির লোকজন আমাকে নানাভাবে চাপ দেয়। চাপের মুখে বাধ্য হয়ে হাঁস-মুরগি ও ডিম বিক্রি করে কিস্তি দিয়েছিলাম। কিন্তু এতেও ঋণ পরিশোধ করা যায়নি। পরে বাধ্য হয়ে গরুটি বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করি।

তিনি বলেন, আমি হার্টের রোগী। শরীর অসুস্থ থাকায় নিয়মিত কাজেও যেতে পারিনি। সে কারণে কিস্তি দিতে পারিনি।

দুধ দিয়ে গোসল করার কারণ জানতে চাইলে শহিদুল বলেন, আমি রাজমিস্ত্রির কাজ করে সংসার চালাই। তিন কন্যাসন্তান, স্ত্রীসহ পাঁচজনের সংসার। সংসার চালাতে গিয়ে সমিতি থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছিল। সংসারের শেষ সম্বল গরুটি বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করি। পরে ঋণমুক্ত হয়ে দুধ দিয়ে গোসল করে সুদ না নেওয়ার শপথ করি।

প্রত্যক্ষদর্শী প্রতিবেশী সাইফুল ইসলাম বলেন, তিন মেয়ে, স্ত্রীকে নিয়ে পাঁচ সদস্যের পরিবার শহিদুলের। প্রায় এক বছর আগে স্থানীয় একটি এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেন শহিদুল। ঋণের টাকা সাপ্তাহিক কিস্তিতে পরিশোধ করার কথা থাকলেও সংসারের আর্থিক টানাপোড়েনে তিনি নিয়মিত পরিশোধ করতে পারছিলেন না।

এ বিষয়ে সৃষ্টি হিউম্যান রাইটস সোসাইটির জেলা সভাপতি আলমগীর আল আমিন বলেন, শেরপুরের বিভিন্ন গ্রামে, হাটবাজারে ব্যাঙের ছাতার মতো সুদ সমিতি গড়ে উঠেছে। কেউ সমবায় থেকে অনুমোদন নিয়েছে আবার কেউ না নিয়েই সুদের কারবার চালাচ্ছে। আর এসব কারবারি সহজসরল মানুষের অভাবের সুযোগ কাজে লাগিয়ে টাকা দিচ্ছে। পরে মোটা অঙ্কের লাভ নেওয়া হচ্ছে। টাকা আদায়ের ক্ষেত্রে অনেক সময় মারধরের ঘটনাও ঘটছে। সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বেশিরভাগ সুদ সমিতি চালানো হচ্ছে। এদিকে প্রশাসনের নজর দেওয়া জরুরি।