রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি :
স্বরাষ্ট্র ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, সীমান্তের নিরাপত্তার কোন ঘাটতি নেই। সশস্ত্র বাহিনী যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত। সীমান্তে পুশইনের প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি ভারত সরকারকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশি নাগরিকদের পাঠানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৭ মে) সকালে রাজশাহী কারা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ১৪তম ডেপুটি জেলার ও ৬২তম কারারক্ষী ও মহিলা কারারক্ষীদের সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সীমান্তে পুশইন বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে তারাতো আমাদের দেশেরই লোক। আমার তাদের (ভারত) বলেছি আনুষ্ঠানিক চ্যানেলের মাধ্যমে অবৈধ বসবাসকারীদের ফেরত পাঠানোর জন্য। কিন্তু তারা সেটা করছে না। এটি নিয়ে বৈঠক হয়েছে। তবে সীমান্তে নিরাপত্তার কোনো অভাব নেই। আমার বাহিনী যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত। আর সীমান্তে পুশইনের প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। ভারত সরকারকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশিদের পাঠানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, কারাগারকে ‘কারেকশন সেন্টার’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। যেখানে বন্দিরা কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে পারবে। যাতে তাদের পরিবারের ভরণপোষণ সহজ হয় এবং কারাবন্দির পরিবেশ আরও উন্মুক্ত হবে। এসময় তিনি রাজনৈতিক বন্দিদের সঙ্গে আইনের শাসনের অধীনে সমতার সঙ্গে আচরণের ওপর জোর দেন।
তিনি বলেন, আসন্ন ঈদ এবং দেশের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রস্তুতি অতীতের তুলনায় গতবার বেশ ভালো ছিল। এবারও ভালো যাবে।
কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আন্তর্জাতিক মানের কারা ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সেজন্য বন্দিদের নিরাপদ আটক নিশ্চিত করতে মোবাইল জ্যামার, পৃথক ইন্টারনেট সিস্টেম, বডিস্ক্যানার, লাগেজ স্ক্যানার, সারকিট ডিটেক্টরসহ নানা ধরনের আধুনিক নিরাপত্তা সরমঞ্জামাদির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশ প্রিজন্সকে কারেকশন্স সার্ভিস বাংলাদেশ হিসেবে রূপান্তরের যে প্রক্রিয়া চলছে, তা শুধু একটি নাম পরিবর্তনের বিষয় নয়, এটি একটি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। বন্দিকে অপরাধী নয়, সংশোধনযোগ্য মানুষ হিসেবে দেখা- এই দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিষ্ঠার জন্যই সরকার কারেকশনাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক তৈরিসহ নানাবিধ উদ্ভাবনী পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে। যেখানে বন্দিরা প্রশিক্ষিত হয়ে দক্ষ জনবল হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার পাশাপাশি জেলে বসেই আয় রোজগারের সুবিধা পাবে এবং পরিবারকেও আর্থিকভাবে সহায়তা করতে পারবে। এটি বাংলাদেশ জেলের জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসাবে পরিগণিত হবে বলে আমি আশা প্রকাশ করছি।
তিনি বলেন, সরকার কারারক্ষীদের সাহসিকতা এবং কর্মদক্ষতার স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ জেল মেডেল প্রবর্তনের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, যা অতি শীঘ্রই বাস্তবায়ন করা হবে। এছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন অন্যান্য সংস্থার ন্যায় অবসরগামী কারা সদস্যদের আজীবন রেশন প্রদানের বিষয়েও নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নবীন কারা সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, ছাত্র জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনা এ জাতিকে জাগিয়ে তুলেছে। সেই চেতনা তোমাদের হৃদয়ে ধারণ করতে হবে। একটি বৈষম্যহীন, ন্যায়ভিত্তিক, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক কারা প্রশাসন গঠনে তোমরাই হবে প্রধান বাহক। আমরা এমন একটি সময় অতিবাহিত করছি, যখন নিরাপত্তা, মানবাধিকার ও মানবিক সংশোধনের বিষয়টি রাষ্ট্রীয় প্রতিটি স্তরে সর্বাধিক গুরুত্ব বহন করছে। বাংলাদেশ জেল এর ব্যতিক্রম নয়। বন্দিদের শুধু শাস্তি নয়, তাদের পুনর্বাসন ও সংশোধনের লক্ষ্যে কাজ করা-এটাই একটি আধুনিক ও মানবিক কারা ব্যবস্থার মূল দায়িত্ব। এ প্রেক্ষাপটে, আমাদের নবীন ডেপুটি জেলার এবং কারারক্ষীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রস্তুত করা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
এর আগে সকালে প্যারেড গ্রাউন্ডে ১৪তম ডেপুটি জেলার ও ৬২তম কারারক্ষী ও মহিলা কারারক্ষীদের সমাপনী কুচকাওয়াজের সালাম ও অভিবাদন গ্রহণ করেন তিনি। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ১৮ জন ডেপুটি জেলার ও ৫০৮ জন কারারক্ষী নতুনভাবে যোগদান করবেন।
এসময় রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ, জেলা পুলিশ, বিজিবি, কারা কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।