নিজস্ব প্রতিবেদক :
সিলেট নগরীর একেকটি ফুটপাত যেন মরণফাঁদ। উঁচু-নিচু ও সরু ফুটপাতে পথচারীদের চলাচল অনেকটা অনিরাপদ। নগরবিদরা বলেছেন, ফুটপাত হবে সড়কের মতো সমতল। হাঁটতে গিয়ে কোথাও থাকবে না প্রতিবন্ধকতা। কিন্তু সিলেট নগরীর ফুটপাতগুলো পথচারীবান্ধব নয়। যার জন্য ফুটপাত ব্যবহারে অনীহা দেখা দিয়েছে পথচারীদের।
সরজমিন দেখা গেছে, সিলেট নগরীর ব্যাপক উন্নয়নযজ্ঞ চলছে। চলছে সড়ক প্রশস্তকরণ কাজ। একই সঙ্গে সড়কের পাশে ফুটপাত ও সড়ক বিভাজক এবং সড়ক দ্বীপ বা চত্বরগুলো নতুন করে সংস্কার হচ্ছে। সড়ক দ্বীপে সিলেটের ঐতিহ্যের সঙ্গে মিল রেখে নির্মাণ করা হচ্ছে স্থাপনা। ফুটপাতগুলো সংস্কার ও প্রশস্ত করা হচ্ছে। উন্নত টালি বসিয়ে ফুটপাত রঙিন করে তোলা হচ্ছে। তবে বিভিন্ন বাসাবাড়ি, মার্কেট, দোকান ও পাড়ার সড়কের সঙ্গে মিলিয়ে ফুটপাত নির্মাণ করতে গিয়ে কোথাও উঁচু কোথাও নিচু হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও সরু ফুটপাত দিয়ে দুই বা তার অধিক ব্যক্তির একসঙ্গে স্বাভাবিকভাবে চলাচলের সুযোগ নেই।
নগরীর জিন্দাবাজারের সিটি সেন্টারে একটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার আব্দুল মুহিত দিদার। প্রতিদিন সকালে আম্বরখানা থেকে হেঁটে অফিসে আসার চেষ্টা করেন। তবে আম্বরখানা থেকে শুরু করে জিন্দাবাজার পর্যন্ত দৃশ্যমান ফুটপাত থাকলেও বেশির ভাগ জায়গায় উঁচু-নিচু। পড়ে যাওয়ার ভয়ে সড়কের পাশ দিয়েই তাকে হেঁটে আসতে হয়। আবার ভোরে অনেক নারী-পুরুষ প্রাতঃভ্রমণে বের হন। তাদেরও ফুটপাত দিয়ে চলতে দেখা যায় না।
শামীমাবাদ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা প্রদীপ চন্দ্র দাস জানান, মেডিকেল রোড দিয়ে রিকাবীবাজার-জিন্দাবাজার হয়ে মধুবন মার্কেটে অফিসে হেঁটে আসেন তিনি। তবে খুব ঝুঁকির মধ্যে তাকে পথ চলতে হয়। আবার একসঙ্গে ফুটপাত দিয়ে দুজন চলাও যায় না। একজনের সঙ্গে আরেকজনের ধাক্কা লেগে যাওয়ারও পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
শাহজালাল উপশহর এলাকার বাসিন্দা রিয়াজুল ইসলাম বলেন, জিন্দাবাজারের পুরো এলাকায় উঁচু-নিচু ফুটপাত রয়েছে, যা হাঁটার জন্য উপযুক্ত নয়। ফুটপাত দিয়ে হেঁটে ছেলেমেয়েদের স্কুলে দিতে বা চলাচল করতে সতর্কতার সঙ্গে পা ফেলতে হয়। এছাড়া বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আবার ফুটপাতগুলো হকারদের দখলে চলে যায়। ফলে নগরীতে পথচারীদের চলাচলের সুবিধা অনেকটা সংকুচিত।
সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নগরবিদ ড. জহির বিন আলম বলেন, স্থানীয়দের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করে যতটা পারা যায় ফুটপাত নির্মাণ করতে হবে। শহরের বর্ধিত অংশে ফুটপাত নির্মাণ নিয়ে এখনই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেয়া উচিত। না হয় এ সমস্যা প্রকট হবে। কারণ রাস্তাঘাট যত প্রশস্ত হচ্ছে, এর সঙ্গে ফুটপাত নির্মাণে আরো সচেতন হওয়া প্রয়োজন। তার মতে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ফুটপাত অবকাঠামো বৃদ্ধি করা সম্ভব না হলেও প্রয়োজন শৃঙ্খলার মধ্য নিয়ে আসা। যত্রতত্র পার্কিং বন্ধ করা, ফুটপাত দখল রোধ, হকার বসতে না দেয়া সর্বোপরি ফুটপাতের সঠিক ব্যবস্থাপনা থাকলে জনগণ এর সুবিধা ভোগ করতে পারবে।
অন্যদিকে সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আলী আকবর জানান, নগরীতে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার ফুটপাত রয়েছে। নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থার সঙ্গে ফুটপাত গড়ে উঠেছে। যে স্থানে ড্রেন যেমন, সেই স্থানে তেমনভাবে ফুটপাত নির্মাণ করা হচ্ছে। নগরীতে ৬ ফুট চওড়া ফুটপাত নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় ফুটপাত বড় করা যাচ্ছে না।
সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, ‘রাস্তার সঙ্গে ফুটপাতের উঁচু-নিচুর বিষয়টি একটি নির্দিষ্ট মাপের মধ্যে করা হয়, যাতে ব্যবধানটা বেশি না হয়। যাতে পথচারীরা হেঁটে চলাচলের সময় অনিরাপদ মনে না করে। তবে কিছু কিছু জায়গায় এ ব্যবধানটা ঠিকমতো মানা হয়নি। এটা রাস্তা ও মার্কেট উঁচু-নিচুর কারণে করতে হয়েছে।