আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
সিরিয়ার উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ ইদলিবে রুশ বিমান বাহিনীর এক ঝটিকা অভিযানে নিহত হয়েছেন অন্তত ৩৬ জন সরকারবিরোধী বিদ্রোহী যোদ্ধা এবং আহত হয়েছেন আরও ৬০ জন।
সোমবার (১৩ নভেম্বর) রাশিয়ান বার্তা সংস্থা ইনটারফ্যাক্সের বরাত দিয়ে রয়টার্স এ তথ্য জানায়।
সিরিয়ায় অবস্থানরত রুশ বাহিনীর উপপ্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল ভাদিম কুলিত রাশিয়ার সংবাদমাধ্যমকে ইন্টারফ্যাক্সকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কুলিত বলেন, শনিবার গভীর রাতে এই অভিযান পরিচালিত হয়েছে। তার আগের ২৪ ঘণ্টায় ইদলিবের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ৭ বার সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। অবৈধ ও সরকারবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো এসব হামলার জন্য দায়ী। যারা নিহত এবং আহত হয়েছে, তারা সরকার বিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
পৃথক এক বিবৃতিতে সিরিয়ার সেনাবাহিনী জানিয়েছে, রুশ অভিযানে নিহত ও আহতরা সবাই ইরানের সমর্থন ও সহায়তাপুষ্ট গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদের সদস্য। কয়েক বছর ধরে ইদলিব ও পার্শ্ববর্তী আলেপ্পো শহরের বিভিন্ন বেসামরিক এলাকায় বোমা হামলা ও সহিংসতা চালানোর অভিযোগ রয়েছে ইসলমিক জিহাদের বিরুদ্ধে।
অন্যদিকে ইসলামিক জিহাদের হাইকমান্ডের একাধিক নেতা দাবি করেছেন- ইদলিব এবং আলেপ্পোর বাসিন্দারা সিরিয়ার ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের অধীনে থাকতে চান না এবং তারা আসলে এই জনগণের মুক্তির জন্য লড়াই করছেন।
তাদের অভিযোগ, বাশার এবং মিত্র রুশ বাহিনী হামাস ও ইসরায়েলি বাহিনীর মধ্যে চলমান যুদ্ধের সুযোগ নিয়ে ইসলামিক জিহাদকে উচ্ছেদ করতে চাইছে।
এদিকে, সিরিয়ার ইদলিব ও আলোপ্পোর সরকারনিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোতে হামলার জন্য বিদ্রোহীদের দায়ী করেছে সিরীয় সেনাবাহিনী। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন বেসামরিক এলাকায় নির্বিচারে হামলা চালানোর দায়ও অস্বীকার করেছে দেশটির সেনাবাহিনী।
তবে সিরিয়ার সরকার-বিরোধীরা বলছেন, বিশ্বের মনোযোগ এখন গাজার সংঘাতের দিকে। আর সেই সুযোগ খুব ভালোভাবেই নিচ্ছে মস্কো ও দামেস্ক।
সিরিয়ায় আসাদবিরোধীদের সর্বশেষ ঘাঁটি ইদলিব। ২০১৫ সাল থেকে এ শহরের নিয়ন্ত্রণ বিদ্রোহীদের হাতে। তাদের দাবি, এ অঞ্চলের প্রায় ৩০ লাখ মানুষ বাশার আল-আসাদের কর্তৃত্ববাদী শাসনের অধীনে থাকতে নারাজ।
সিরিয়ার সেনাবাহিনী ইদলিব ও আলেপ্পো প্রদেশে সংঘাতের জন্য বিদ্রোহীদের দায়ী করে আসছে। আসাদ বাহিনীর বিরুদ্ধেও এসব অঞ্চলে নির্বিচারে গোলাবর্ষণের অভিযোগ রয়েছে।
২০১৫ সালের অক্টোবর থেকে সিরিয়ার আসাদবিরোধী যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে নেমেছে রাশিয়া। মস্কোর দাবি, এসব যোদ্ধারা আইএসের সদস্য।
রাশিয়া আসাদকে সিরিয়ার ক্ষমতায় রাখতে চায়। কারণ মধ্যপ্রাচ্যে আসাদ-ই তাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র। সিরিয়ায় রাশিয়ার একটি বিমান ঘাঁটি ও একটি নৌঘাঁটি রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর হামাসকে সমর্থন জানিয়ে সিরিয়ার বিভিন্ন মার্কিন ঘাঁটিতে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া শুরু করে ইরানের সামরিক বাহিনীর এলিট ফোর্স ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড (আইআরজি) এবং ইসলামিক জিহাদ।
এসব হামলার জবাবে সম্প্রতি ইরানকে সতর্কবার্তা দেওয়ার পাশাপাশি সিরিয়ায় আইআরজি এবং ইসলামিক জিহাদের বিভিন্ন স্থাপনায় পাল্টা হামলা চালাতে মার্কিন সেনাদের নির্দেশ দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন।
রোববার বিমান অভিযান চালিয়ে ইসলামিক জিহাদের অন্তত ২টি স্থাপনা মার্কিন সেনারা ধ্বংস করেছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সদর দপ্তর পেন্টাগন।