Dhaka বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৬ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সিকিমে আকস্মিক বন্যায় ভেসে গেল ২৩ ভারতীয় সেনা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য সিকিমে আকস্মিক বন্যায় ভেসে গেল ২৩ ভারতীয় সেনা সদস্য। অতিবৃষ্টিতে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নিখোঁজ সেনাদের এখনও হদিস পাওয়া যায়নি বলে নিশ্চিত করেছে সেনাবাহিনী। এছাড়া পার্বত্য এই উপত্যকার কিছু সামরিক স্থাপনাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বুধবার (৪ অক্টোবর) ভোরে ভারী বৃষ্টির কারণে লোনক হ্রদের পানি নেমে আসে তিস্তায়। ফলে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এর মধ্যেই ২৩ সেনার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।

এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রবল বৃষ্টির জেরে উত্তর সিকিমের লোনাক লেক উপচে অতিরিক্ত পানি তিস্তায় চলে আসার পর সেখানে আকস্মিক বন্যা দেখা দেয় এবং এতে ২৩ ভারতীয় সেনা সদস্য নিখোঁজ হয়েছেন।

এছাড়া পানির স্রোতে সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকটি গাড়ি এবং বেশ কয়েকটি সেনা ছাউনিও ভেসে গেছে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছে। বেশ কয়েক জায়গায় ধস নেমেছে বলেও স্থানীয় প্রশাসন সূত্র নিশ্চিত করেছে। বন্যা পরিস্থিতিতে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে চুংথাম এলাকা।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ড এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, চুংথাং বাঁধ থেকে পানি ছেড়ে দেওয়ার ফলে হঠাৎ করে পানির স্তর ১৫-২০ ফুট উঁচুতে চলে আসে। যার ফলে লাচেন উপত্যকার কিছু স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২৩ জন কর্মী নিখোঁজ হওয়ার পাশাপাশি কিছু যানবাহন কাদায় ডুবে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সিংটামের কাছে বারদাং-এ পার্ক করা সেনা গাড়িগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তল্লাশি অভিযান চলছে।

সিকিম প্রশাসন নিজ বাসিন্দাদের জন্য সতর্কতা জারি করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্থানীয় বাসিন্দাদের শেয়ার করা ভিডিওতে দেখা যায়, নদীর পানি বেড়ে রাস্তা ভেসে গেছে।

জানা গেছে, ২০ জনের বেশি সেনা এখন পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন। ওই এলাকায় হলুদ সতর্কতা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। জলপাইগুড়ি জেলার বিশাল অংশ দিয়ে তিস্তা প্রবাহিত হয়ে প্রবেশ করে বাংলাদেশে। তারপর তা মিশে যায় ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গে। পাহাড়ে বৃষ্টি বাড়লে তাই চিন্তা বৃদ্ধি পায় জলপাইগুড়িসহ গোটা উত্তরবঙ্গ এবং বাংলাদেশে।

সিকিমের চুংথামে হ্রদের পানির বেড়ে যাওয়ায় তিস্তার পানিও বাড়ছে। এর প্রভাব ইতোমধ্যেই পড়তে শুরু করেছে তিস্তার ওপরে তৈরি একাধিক ব্যারেজে। প্রশাসনের আশঙ্কা, পানির স্তর ২৫ থেকে ২৬ মিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। তিস্তার গতিপথের দু’পাশে পড়ছে গাজলডোবা ব্যারেজ, দোমহনি, মেখলিগঞ্জ, হলদিবাড়ি, জলপাইগুড়ি শহর। তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব এলাকা প্লাবিত হতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকাও।

এদিকে সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিং তামাং একটি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনকালে বলেছেন, কেউ আহত হয়নি তবে সরকারি সম্পত্তির উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে। সিংটামে কিছু লোক নিখোঁজ হওয়ার খবরও পাওয়া গেছে। ত্রাণ তৎপরতা চলছে।

ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর নাগরিকদের সতর্ক থাকার আহ্বান করে জানিয়েছে, সিকিমের চুংথাং হ্রদের পানি উপচে পড়ায় তিস্তা ফুলে উঠেছে। গাজলডোবা, দোমোহনী, মেখলিগঞ্জ এবং ঘিশের মতো নিচু এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

সিকিমে আকস্মিক বন্যায় ভেসে গেল ২৩ ভারতীয় সেনা

প্রকাশের সময় : ০১:৫০:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ অক্টোবর ২০২৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য সিকিমে আকস্মিক বন্যায় ভেসে গেল ২৩ ভারতীয় সেনা সদস্য। অতিবৃষ্টিতে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নিখোঁজ সেনাদের এখনও হদিস পাওয়া যায়নি বলে নিশ্চিত করেছে সেনাবাহিনী। এছাড়া পার্বত্য এই উপত্যকার কিছু সামরিক স্থাপনাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বুধবার (৪ অক্টোবর) ভোরে ভারী বৃষ্টির কারণে লোনক হ্রদের পানি নেমে আসে তিস্তায়। ফলে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এর মধ্যেই ২৩ সেনার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।

এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রবল বৃষ্টির জেরে উত্তর সিকিমের লোনাক লেক উপচে অতিরিক্ত পানি তিস্তায় চলে আসার পর সেখানে আকস্মিক বন্যা দেখা দেয় এবং এতে ২৩ ভারতীয় সেনা সদস্য নিখোঁজ হয়েছেন।

এছাড়া পানির স্রোতে সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকটি গাড়ি এবং বেশ কয়েকটি সেনা ছাউনিও ভেসে গেছে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছে। বেশ কয়েক জায়গায় ধস নেমেছে বলেও স্থানীয় প্রশাসন সূত্র নিশ্চিত করেছে। বন্যা পরিস্থিতিতে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে চুংথাম এলাকা।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ড এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, চুংথাং বাঁধ থেকে পানি ছেড়ে দেওয়ার ফলে হঠাৎ করে পানির স্তর ১৫-২০ ফুট উঁচুতে চলে আসে। যার ফলে লাচেন উপত্যকার কিছু স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২৩ জন কর্মী নিখোঁজ হওয়ার পাশাপাশি কিছু যানবাহন কাদায় ডুবে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সিংটামের কাছে বারদাং-এ পার্ক করা সেনা গাড়িগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তল্লাশি অভিযান চলছে।

সিকিম প্রশাসন নিজ বাসিন্দাদের জন্য সতর্কতা জারি করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্থানীয় বাসিন্দাদের শেয়ার করা ভিডিওতে দেখা যায়, নদীর পানি বেড়ে রাস্তা ভেসে গেছে।

জানা গেছে, ২০ জনের বেশি সেনা এখন পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন। ওই এলাকায় হলুদ সতর্কতা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। জলপাইগুড়ি জেলার বিশাল অংশ দিয়ে তিস্তা প্রবাহিত হয়ে প্রবেশ করে বাংলাদেশে। তারপর তা মিশে যায় ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গে। পাহাড়ে বৃষ্টি বাড়লে তাই চিন্তা বৃদ্ধি পায় জলপাইগুড়িসহ গোটা উত্তরবঙ্গ এবং বাংলাদেশে।

সিকিমের চুংথামে হ্রদের পানির বেড়ে যাওয়ায় তিস্তার পানিও বাড়ছে। এর প্রভাব ইতোমধ্যেই পড়তে শুরু করেছে তিস্তার ওপরে তৈরি একাধিক ব্যারেজে। প্রশাসনের আশঙ্কা, পানির স্তর ২৫ থেকে ২৬ মিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। তিস্তার গতিপথের দু’পাশে পড়ছে গাজলডোবা ব্যারেজ, দোমহনি, মেখলিগঞ্জ, হলদিবাড়ি, জলপাইগুড়ি শহর। তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব এলাকা প্লাবিত হতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকাও।

এদিকে সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিং তামাং একটি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনকালে বলেছেন, কেউ আহত হয়নি তবে সরকারি সম্পত্তির উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে। সিংটামে কিছু লোক নিখোঁজ হওয়ার খবরও পাওয়া গেছে। ত্রাণ তৎপরতা চলছে।

ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর নাগরিকদের সতর্ক থাকার আহ্বান করে জানিয়েছে, সিকিমের চুংথাং হ্রদের পানি উপচে পড়ায় তিস্তা ফুলে উঠেছে। গাজলডোবা, দোমোহনী, মেখলিগঞ্জ এবং ঘিশের মতো নিচু এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।