নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য খাতে সহায়তা বাড়াতে ধনী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বিশ্বের ধনী দেশগুলোকে অর্থায়ন করতে হবে। এর জন্য ফান্ড তৈরি করতে হবে।
বৃহস্পতিবার (১১ মে) সকালে ‘স্মার্ট বাংলাদেশে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত’ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক সেমিনারে এ কথা বলেন তিনি। দেশের সকল পর্যায়ে অবকাঠামো তৈরির মাধ্যমে তৃণমূলের মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এরই অংশ হিসেবে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত সেমিনারটি আয়োজন করা হয়। তাতে আলোচনা পর্ব সঞ্চলনা করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাসচিবের মানসিক স্বাস্থ্য ও অটিজম বিষয়ক উপদেষ্টা সায়মা ওয়াজেদ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধনী দেশগুলোকে সবার স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে এগিয়ে আসতে হবে। এ ক্ষেত্রে তাদের বড় ফান্ড দিতে হবে এবং স্বাস্থ্যখাতে বড় আকারের তহবিল গঠন করে অনুন্নত দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় সহায়তা করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ছোট ভূখণ্ডে বিশাল জনসংখ্যার চ্যালেঞ্জের মধ্যেও স্বাস্থ্যসেবায় নিশ্চিত সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য খাদ্য নিশ্চিতে তার সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, গ্রামীণ জনপদের নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক করেছে সরকার। ছোট্ট একটি দেশে এতো বিপুল সংখ্যক মানুষের জন্য খাদ্য এবং স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা কঠিন হলেও সরকার তা সুচারুভাবেই পালন করে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, চিকিৎসকদের গবেষণায় আরও গুরুত্ব দিতে হবে। যেন প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ সহজে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পায়।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করাই সরকারের পরবর্তী লক্ষ্য। স্বাস্থ্যখাতের প্রতিটি ক্ষেত্রে ডিজিটাল সেবা নিশ্চিতের জন্য দেশে দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তৃণমূলে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে ক্ষমতায় এসেই কমিউনিটি ক্লিনিক ব্যবস্থা চালু করে আওয়ামী লীগ সরকার। দেশে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি বেসরকারী খাতকে উন্মুক্ত করায় মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছেছে।
সরকার প্রধান আরও বলেন, সরকারের পদক্ষেপের ফলে দেশে দারিদ্র ও অতি দারিদ্রসীমা নেমে এসেছে। যা স্বাস্থ্যখাতে ইতিবাচক প্রভাব রেখেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ভৌগোলিকভাবে এমন একটা অবস্থানে রয়েছে, যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের বড় একটি প্রভাব রয়েছে। বাংলাদেশকে খরা, বন্যা ও সাইক্লোনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়তে হয় এবং এর প্রভাব আমাদের স্বাস্থ্যখাতে পড়ে।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর কমিউনিটি হেলথ কেয়ার সেন্টার চালু করার পর আমরা মোট বাজেটের বিরাট একটি অংশ স্বাস্থ্যখাতে দিয়ে থাকি; যাতে শুধু চিকিৎসা নয়, এ সংশ্লিষ্ট সব সেবা প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে পৌঁছায়। বিনা পয়সায় ওষুধ দেয়া থেকে শুরু করে মাতৃত্বকালীন সেবা, মেয়েদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা ইত্যাদি আমরা করে থাকি। প্রতিবারই বাজেটের একটা বড় অংশ আমরা স্বাস্থ্যখাতে দিই।
স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বেসরকারি খাতে হাসপাতালের জন্য প্রয়োজনীয় সব উপকরণ কেনায় যে ট্যাক্স লাগত, তা কমিয়ে দেয়া হয়েছে। শিশুদের যেসব প্রয়োজন, সেগুলো ট্যাক্সমুক্ত করে দেয়া হয়েছে। বেসরকারি খাতে যাতে আরও উন্নতমানের হাসপাতাল এবং মেডিকেল কলেজ গড়ে ওঠে, সেই ব্যবস্থাও আমরা নিয়েছি। যার ফলে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা এত উন্নত হয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে বিভিন্ন ইনস্টিটিউশন তৈরির কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্যাস্ট্রোলিভার, বার্ন ইনস্টিটিউট অথবা কিডনি, নিউরো, ক্যানসার–এ রকম একটার পর একটা বিষয়ভিত্তিক ইনস্টিটিউট আমরা গড়ে তুলছি। প্রাইভেট সেক্টরগুলোকে যথেষ্ট সুযোগ দেয়া হয়েছে এবং সেই সঙ্গে সরকারি যেসব হাসপাতাল রয়েছে, সেগুলোর সুযোগ-সুবিধা আরও বাড়ানো হয়েছে। এতে জিডিপিতে আমরা ২ শতাংশ ধরলেও টাকার অঙ্কে কিন্তু অনেক বেশি সহযোগিতা দিয়ে থাকি।
দারিদ্র্য বিমোচনে সরকারের সাফল্যের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০০৬ সালে যেখানে দারিদ্র্য ছিল ৪১ শতাংশ, এখন তা ১৮.৭ শতাংশে নেমে এসেছে। এক্সট্রিম পভার্টি যেটা ছিল ২৫ শতাংশের ওপরে, সেটা এখন মাত্র ৫.৬ শতাংশ। সেটাও থাকবে না বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে যথেষ্ট কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, যাতে মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি না হয়।
বাংলাদেশের প্রথম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিষ্ঠা করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোনো মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না। বর্তমান সরকার পাঁচটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ করেছে। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে গবেষণায় গুরুত্ব দিয়েছি। সেই সঙ্গে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি নিরাপত্তা এবং চিকিৎসাসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা নিচ্ছি।
সরকারপ্রধান বলেন, মাতৃত্বকালীন কিংবা এর পরবর্তী সময়ের জন্য ভালো সুযোগ-সুবিধা ছিল না, কিন্তু সে বিষয়ে আমরা মিডওয়াইফ ট্রেনিং, নতুন নার্স নিয়োগ, ডাক্তার নিয়োগ দেয়া এবং সেভাবে আমরা স্বাস্থ্যসেবাটা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছি। কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে ৩০ ধরনের ওষুধ বিনা পয়সায় দিচ্ছি। একসময় অ্যান্টিবায়োটিক দিতাম, তা বন্ধ করে এখন ইনসুলিন দেয়া হচ্ছে।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্বে বর্তমানে অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা চলছে মন্তব্য করে এমন পরিস্থিতিতে অনুন্নত দেশগুলোর পাশে দাঁড়াতে ধনী দেশগুলোকে জাতিসংঘের অধিবেশনে আহবান জানানো হবে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।