নিজস্ব প্রতিবেদক :
আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে শিল্পাঞ্চল সাভারের পোশাক কারখানাগুলো ছুটি হয়ে যাওয়ায় ঢাকা ছাড়তে শুরু করছে এখানকার প্রায় লক্ষাধিক মানুষজন। তাই স্বাভাবিকের তুলনায় যানবাহনের চাপ বাড়তে শুরু করেছে সাভারের সড়ক ও মহাসড়কগুলোতে। তবে এখনো কোথাও যানজটের সৃষ্টি হয়নি। অন্যদিকে ঘরমুখো মানুষের স্বস্তির যাত্রা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ সর্তকতায় আছে।
বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) বিকেল ৫টা পর্যন্ত নবীনগর-চন্দ্রা ও আব্দুল্লাহপুর বাইপাইল সড়ক ঘুরে দেখে যায়, সড়কে যানবাহনের চাপ গত কয়েক দিনের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। পাশাপাশি যাত্রীর চাপ বেড়েছে কয়েকগুণ। যাত্রী ও যানবাহনের চাপে সৃষ্টি হয়েছে ধীরগতি।
সরেজমিন দেখা যায়, নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের নবীনগর থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত প্রায় ১৮ কিলোমিটার সড়কে ধীরগতির সৃষ্টি হয়েছে। আব্দুল্লাহপুর-বাইপাইল সড়কের বাইপাইল থেকে জামগড়া পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার সড়কে সৃষ্টি হয়েছে যানজট। এছাড়া ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে নবীনগর থেকে বিশমাইল পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার সড়কে ধীরগতির সৃষ্টি হয়েছে। বাসস্ট্যান্ডগুলোতে দেখা গেছে অতিরিক্ত যাত্রীর পদচারণা। প্রতিটি পয়েন্টে নিরাপত্তার দায়িত্বে আছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের নবীনগর, সাভার, হেমায়েতপুর, আমিনবাজার ও নবীনগর-চন্দ্রা সড়কের বাইপাইল, পল্লীবিদ্যুত, পলাশবাড়ীতে যানবাহনের দীর্ঘ সারি আছে। তবে টঙ্গী-আশুলিয়া সড়কে দুপুরের পর বাড়তি চাপ লক্ষ্য করা গেছে। কয়েকটি পয়েন্টে আছে যানবাহনের দীর্ঘ সারি।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের নবীনগর এলাকায় কথা হয় পোশাক শ্রমিক রেশমা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, গাবতলি থেকে শান্তিতে নবীনগর পৌঁছেছি। কয়েকটি সিগন্যাল ছাড়া মহাসড়কে তেমন জটলা ছিল না।
মোবারক হোসেন নামের এক যাত্রী বলেন, ঈদের সময় যে যানজট লাগে তা এবার তেমন দেখছি না। দ্রুতই পৌঁছালাম গন্তব্যে। তবে পরিবহনের বাসস্ট্যান্ডগুলোতে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া হাতিয়ে নিচ্ছে।
জামগড়া থেকে রংপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়া পোশাকশ্রমিক সুজন চন্দ্র বলেন, আমাদের কারখানা আজ ছুটি হয়েছে। কারখানার সকল শ্রমিক প্রস্তুতি নিয়েই অফিসে এসেছিলেন। ছুটি পাওয়া মাত্র আমরা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছি। বিকেল ৪টার দিকে আমরা জামগড়ায় রিজার্ভ গাড়িতে উঠেছি। কিন্তু জামগড়া থেকে বাইপাইল পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার যানজটে পড়েছিলাম। এরপর নবীনগর চন্দ্রা সড়কে গাড়ির ধীরগতির সৃষ্টি হয়েছে। অন্যান্যবারের তুলনায় এবার যানজট অনেক কম। নেই বললেই চলে।
অপর শ্রমিক শান্তনা বলেন, ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে আমরা বাড়ির দিকে রওনা হয়েছি। গাড়ি থেমে থেমে চলছে। ট্র্যাফিক সিগনালের কারণে ধীরগতির সৃষ্টি হতে পারে। এবার তবু গাড়ির চাকা ঘুরছে। তবে এবার অত্যন্ত গরম। যদি যানজটে পড়ি তাহলে অনেক ভোগান্তি হবে।
ঠিকানা পরিবহনের চালক আল আমিন বলেন, জামগড়া থেকে রিজার্ভ যাত্রী নিয়ে রওনা হয়েছি। দুপুর পর্যন্ত সড়কে যাত্রী ও গাড়ির চাপ কম ছিল। বিকেল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা কয়েকগুণ বেড়েছে। প্রশাসনের যথেষ্ট সক্রিয়তার কারণে এখনও যানজট হয়নি। তবে ধীরগতির সৃষ্টি হয়েছে।
পরিবহন ভাড়া কয়েকগুণ বেশি হওয়ায় অনেককে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পণ্যবাহী ট্রাকে চড়তে দেখা গেছে। মিন্টু মিয়া নামে এক যাত্রী বলেন, ২০০ টাকার ভাড়া নিচ্ছে ৪০০-৪৫০ টাকা। কয়েকগুণ বেশি টাকা হাতিয়ে নিলেও কেউ প্রতিবাদ করছে না। তা বাধ্য হয়েই বেশি ভাড়ায় যেতে হচ্ছে।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) আসাদুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, সড়কের শৃঙ্খলা রাখতে পুলিশ কাজ করছে। একসঙ্গে যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। যেখানেই বেশি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া যাবে, সেখানেই ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।
এ ব্যাপারে সাভার হাইওয়ে থানার অফিসার্স ইনচার্জ ওসি আজিজুল হক বলেন, ঈদে ঘরমুখো মানুষকে নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার লক্ষে ঈদের ছুটির আগে থেকেই মহাসড়কে যান চলাচল নির্ভীঘ্ন রাখতে নানা পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।
এ বছর পর্যাপ্ত পরিমাণে জেলা পুলিশ ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি আমাদের হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে মহাসড়কের ৭টি স্থানে স্পেশাল ফোর্স রাখা হয়েছে। এর পাশাপাশি আরো ৫টি মোবাইল টিম রাউন্ড ডিউটিতে আছে। এবারের ঈদযাত্রা সুন্দর এবং সুশৃঙ্খল করতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।