Dhaka শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সাবেক স্ত্রীকে পদোন্নতি দিলেন বিমানের এমডি!

বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও মো. মোকাব্বির হোসেন

সচিব পদে পদোন্নতি পেয়ে বিমান ছাড়ার আগে সাবেক স্ত্রীকেসহ ৩০ জনকে পদোন্নতি দিয়েছেন বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং সিইও মো. মোকাব্বির হোসেন। তিনি জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে পদোন্নতি দিয়েছেন বলে অভিযোগ পদোন্নতিবঞ্চিতদের।

জানা গেছে, ৬৬ জনের জ্যেষ্ঠতার তালিকা করে বিমানের এমডি ১৫ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা নেন। এর প্রেক্ষিতে গত ৪ জানুয়ারি বিমানের অ্যাপয়েন্টমেন্ট প্রমোশন পোস্টিং (এপিপি) শাখা ৩০ জন সহকারী ব্যবস্থাপক বাণিজ্যিককে উপব্যবস্থাপক পদে পদোন্নতির আদেশ জারি করে।

তালিকা থেকে ৩০ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। কিন্তু জ্যেষ্ঠতার তালিকায় প্রথম ছিলেন এসএম কবীর হোসেন। তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। দ্বিতীয় গোলাম সারোয়ারকেও পদোন্নতি দেওয়া হয়নি।

অভিযোগ রয়েছে, পদোন্নতির তালিকা রয়েছে এমডির প্রাক্তন স্ত্রী কামরুন্নাহারের নাম। জ্যেষ্ঠতার তালিকায় যার নাম ছিল একবারে তলানিতে; ৬৫ নম্বরে। পদোন্নতিপ্রাপ্ত ৩০ জনের মধ্যে সর্বশেষ নামটি হচ্ছে কামরুন্নাহারের। জানা গেছে কামরুন্নাহার ও মোকাব্বিরের একটি মেয়েও রয়েছে।

জ্যেষ্ঠতার তালিকার প্রথম ও দ্বিতীয় কর্মী ছাড়া আরও যাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়নি তারা হলেন তালিকার ষষ্ঠ নম্বরে থাকা এএফএম আনিসুর রহমান, অষ্টম লুৎফর রহমান, ১২তম মুস্তফা ই কামাল, ১৪তম মো. আবদুর রহমান, ১৫তম রবিউল ইসলাম, ১৯তম মো. মোস্তাফিজুর রহমান, ২০তম মনোয়ারুল ইসলাম, ২২তম মো. শফিকুল ইসলাম, ২৩তম আর এন চক্রবর্তী, ২৫তম মো. হাবিবুর রহমান চৌধুরী, ২৬তম হুর ই জান্নাত, ২৭তম সঞ্জয় কুমার কুন্ডু, ৩২তম শহীদুল ইসলাম, ৩৩তম নাজমুস সাদাত, ৩৪তম তোফায়েল আহমদ, ৩৭তম মো. আনোয়ার হোসাইন সরদার, ৩৯তম মো. আবদুল জব্বার, ৪০তম হাফিজ আহমেদ, ৪২তম নূর নবি পাটোয়ারী, ৪৫তম আবদুল মজিদ, ৪৬তম সমীর চন্দ্র শীল, ৪৭তম সৈয়দ নাঈম আলী, ৪৮তম জাহিদুল ইসলাম বিশ্বাস, ৪৯তম গোলাম রহমান, ৫০তম দীপক কুমার মন্ডল, ৫২তম সুব্রত কুমার, ৫৩তম মো. আসাদুজ্জামান গাজী, ৫৪তম সোলাইমান, ৫৫তম সামসুল আলম, ৫৭তম মো. মনসুর আহমেদ ভূঁইয়া, ৬১তম জায়েদ তারিক খান, ৬২তম এম এনামুল আমীন, ৬৩তম মো. মাহফুজুল করীম সিদ্দকী এবং ৬৬তম আখতার হোসেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পদোন্নতি না পাওয়া কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, পদোন্নতির নামে খামখেয়ালি করা হয়েছে। জ্যেষ্ঠতা চরমভাবে লঙ্ঘন করা হয়েছে। পোস্ট ফাঁকা থাকার পরও অনেককে পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। এ পদোন্নতির সর্বময় ক্ষমতা এমডির হাতে। তার যাকে ভালো লেগেছে তাকে পদোন্নতি দিয়েছেন। আমাদের তো কিছু বলার নেই। কোন ক্রাইটেরিয়া দেখে পদোন্নতি দেওয়া হয়নি।

তারা জানান, এ পদোন্নতি হয়েছে গ্রুপ সিক্স থেকে গ্রুপ সেভেনে। কিছু কর্মকর্তা দুই আড়াই বছর গ্রুপ সিক্সে থেকে পদোন্নতি পেয়েছেন। অথচ এক যুগ ধরে গ্রুপ সিক্সে থেকেও পদোন্নতি মেলেনি। জ্যেষ্ঠতার তালিকায় থাকা ৬৬ জনকেই ভাইভায় ডাকা হয়েছে। যারা কাছাকাছি যোগ্যতাসম্পন্ন তারাই ভাইভায় ডাক পেয়েছেন।

তালিকার ১, ২, ৬ নম্বর সিরিয়ালের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। দেওয়া হয়েছে ৬৫ নম্বরকে। এতটা অস্বাভাবিক হয় কী করে। পদোন্নতিবঞ্চিতদের অনেকেই ১৯৮৮ সালে যোগ দিয়ে একই পে গ্রুপে ১২ থেকে ১৩ বছর ধরে চাকরি করছেন। আর ১৯৯৮ সালে যোগ দিয়ে ১০ বছরের জুনিয়ররা পদোন্নতি পেয়েছেন।

আরও পড়ুন : যুক্তরাজ্যে বিমান চলাচলে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা: বিমান সচিব

একজন সহকারী ব্যবস্থাপক বলেন, এখন জুনিয়রদের অধীনে আমরা কী করে কাজ করব। যারা সবসময় আমাদের স্যার বলেছে তাদের কী করে আমরা স্যার সম্বোধন করি। কী কারণে আমাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়নি তাও জানানো হয়নি। পদোন্নতির জন্য ১০০ নম্বরের ক্রাইটেরিয়া ঠিক করা হয়েছে।

এর মধ্যে ১৫ নম্বর রয়েছে ভাইভায়। এ ভাইভার নম্বর দিয়েই আমাদের বঞ্চিত করা হয়েছে। এ পদোন্নতির সর্বময় ক্ষমতা এমডির হাতে। তার যাকে ভালো লেগেছে তাকে পদোন্নতি দিয়েছেন। আমাদের তো কিছু বলার নেই। আমরা ২৫ থেকে ৩০ বছর ধরে বিমানে চাকরি করি। বাণিজ্যিক শাখায় এমন কোনো বিষয় নেই যা আমরা জানি না বা বুঝি না।

তারপরও আমাদের আনফিট করে দিল। রহমান, রবিন এরা তো খুবই দক্ষ কর্মী। এরা বিমানের অ্যাসেট। তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে। ইন্টারভিউ বোর্ড তাদের মনের মতো লোকদের পদোন্নতি দিয়ে দিয়েছে। আমাদের অনেক মানুষের সামনে এনে জুতাপেটা করা হয়েছে। এখানে আর চাকরি করা সম্ভব নয়। অনেকেই আর্লি রিটায়ারমেন্টে চলে যাবেন। এ পদোন্নতি বঞ্চনার কারণে আমরা সামাজিকভাবে হেয় হয়েছি। আত্মীয়স্বজনের সামনে ছোট করা হয়েছে।

২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর অতিরিক্ত সচিব মো. মোকাব্বির হোসেনকে বিমানের এমডি ও সিইও হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। এর আগে মোকাব্বির হোসেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিব ছিলেন।

পদোন্নতি বঞ্চনার বিষয়টি জানার জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সদর দপ্তর বলাকায় গেলে করোনাভাইরাসের কারণে সেখানে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার কথা জানানো হয়। বিমানের এমডি ও সিইও মো. মোকাব্বির হোসেনকে ফোন করা হলে তিনি সাড়া দেননি। একপর্যায়ে তার ফোনে মেসেজ পাঠানো হলেও তিনি উত্তর দেননি।

 

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড : আসামি টিটন গাজী ৫ দিনের রিমান্ডে

সাবেক স্ত্রীকে পদোন্নতি দিলেন বিমানের এমডি!

প্রকাশের সময় : ০৫:০৫:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ জানুয়ারী ২০২১

সচিব পদে পদোন্নতি পেয়ে বিমান ছাড়ার আগে সাবেক স্ত্রীকেসহ ৩০ জনকে পদোন্নতি দিয়েছেন বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং সিইও মো. মোকাব্বির হোসেন। তিনি জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে পদোন্নতি দিয়েছেন বলে অভিযোগ পদোন্নতিবঞ্চিতদের।

জানা গেছে, ৬৬ জনের জ্যেষ্ঠতার তালিকা করে বিমানের এমডি ১৫ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা নেন। এর প্রেক্ষিতে গত ৪ জানুয়ারি বিমানের অ্যাপয়েন্টমেন্ট প্রমোশন পোস্টিং (এপিপি) শাখা ৩০ জন সহকারী ব্যবস্থাপক বাণিজ্যিককে উপব্যবস্থাপক পদে পদোন্নতির আদেশ জারি করে।

তালিকা থেকে ৩০ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। কিন্তু জ্যেষ্ঠতার তালিকায় প্রথম ছিলেন এসএম কবীর হোসেন। তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। দ্বিতীয় গোলাম সারোয়ারকেও পদোন্নতি দেওয়া হয়নি।

অভিযোগ রয়েছে, পদোন্নতির তালিকা রয়েছে এমডির প্রাক্তন স্ত্রী কামরুন্নাহারের নাম। জ্যেষ্ঠতার তালিকায় যার নাম ছিল একবারে তলানিতে; ৬৫ নম্বরে। পদোন্নতিপ্রাপ্ত ৩০ জনের মধ্যে সর্বশেষ নামটি হচ্ছে কামরুন্নাহারের। জানা গেছে কামরুন্নাহার ও মোকাব্বিরের একটি মেয়েও রয়েছে।

জ্যেষ্ঠতার তালিকার প্রথম ও দ্বিতীয় কর্মী ছাড়া আরও যাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়নি তারা হলেন তালিকার ষষ্ঠ নম্বরে থাকা এএফএম আনিসুর রহমান, অষ্টম লুৎফর রহমান, ১২তম মুস্তফা ই কামাল, ১৪তম মো. আবদুর রহমান, ১৫তম রবিউল ইসলাম, ১৯তম মো. মোস্তাফিজুর রহমান, ২০তম মনোয়ারুল ইসলাম, ২২তম মো. শফিকুল ইসলাম, ২৩তম আর এন চক্রবর্তী, ২৫তম মো. হাবিবুর রহমান চৌধুরী, ২৬তম হুর ই জান্নাত, ২৭তম সঞ্জয় কুমার কুন্ডু, ৩২তম শহীদুল ইসলাম, ৩৩তম নাজমুস সাদাত, ৩৪তম তোফায়েল আহমদ, ৩৭তম মো. আনোয়ার হোসাইন সরদার, ৩৯তম মো. আবদুল জব্বার, ৪০তম হাফিজ আহমেদ, ৪২তম নূর নবি পাটোয়ারী, ৪৫তম আবদুল মজিদ, ৪৬তম সমীর চন্দ্র শীল, ৪৭তম সৈয়দ নাঈম আলী, ৪৮তম জাহিদুল ইসলাম বিশ্বাস, ৪৯তম গোলাম রহমান, ৫০তম দীপক কুমার মন্ডল, ৫২তম সুব্রত কুমার, ৫৩তম মো. আসাদুজ্জামান গাজী, ৫৪তম সোলাইমান, ৫৫তম সামসুল আলম, ৫৭তম মো. মনসুর আহমেদ ভূঁইয়া, ৬১তম জায়েদ তারিক খান, ৬২তম এম এনামুল আমীন, ৬৩তম মো. মাহফুজুল করীম সিদ্দকী এবং ৬৬তম আখতার হোসেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পদোন্নতি না পাওয়া কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, পদোন্নতির নামে খামখেয়ালি করা হয়েছে। জ্যেষ্ঠতা চরমভাবে লঙ্ঘন করা হয়েছে। পোস্ট ফাঁকা থাকার পরও অনেককে পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। এ পদোন্নতির সর্বময় ক্ষমতা এমডির হাতে। তার যাকে ভালো লেগেছে তাকে পদোন্নতি দিয়েছেন। আমাদের তো কিছু বলার নেই। কোন ক্রাইটেরিয়া দেখে পদোন্নতি দেওয়া হয়নি।

তারা জানান, এ পদোন্নতি হয়েছে গ্রুপ সিক্স থেকে গ্রুপ সেভেনে। কিছু কর্মকর্তা দুই আড়াই বছর গ্রুপ সিক্সে থেকে পদোন্নতি পেয়েছেন। অথচ এক যুগ ধরে গ্রুপ সিক্সে থেকেও পদোন্নতি মেলেনি। জ্যেষ্ঠতার তালিকায় থাকা ৬৬ জনকেই ভাইভায় ডাকা হয়েছে। যারা কাছাকাছি যোগ্যতাসম্পন্ন তারাই ভাইভায় ডাক পেয়েছেন।

তালিকার ১, ২, ৬ নম্বর সিরিয়ালের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। দেওয়া হয়েছে ৬৫ নম্বরকে। এতটা অস্বাভাবিক হয় কী করে। পদোন্নতিবঞ্চিতদের অনেকেই ১৯৮৮ সালে যোগ দিয়ে একই পে গ্রুপে ১২ থেকে ১৩ বছর ধরে চাকরি করছেন। আর ১৯৯৮ সালে যোগ দিয়ে ১০ বছরের জুনিয়ররা পদোন্নতি পেয়েছেন।

আরও পড়ুন : যুক্তরাজ্যে বিমান চলাচলে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা: বিমান সচিব

একজন সহকারী ব্যবস্থাপক বলেন, এখন জুনিয়রদের অধীনে আমরা কী করে কাজ করব। যারা সবসময় আমাদের স্যার বলেছে তাদের কী করে আমরা স্যার সম্বোধন করি। কী কারণে আমাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়নি তাও জানানো হয়নি। পদোন্নতির জন্য ১০০ নম্বরের ক্রাইটেরিয়া ঠিক করা হয়েছে।

এর মধ্যে ১৫ নম্বর রয়েছে ভাইভায়। এ ভাইভার নম্বর দিয়েই আমাদের বঞ্চিত করা হয়েছে। এ পদোন্নতির সর্বময় ক্ষমতা এমডির হাতে। তার যাকে ভালো লেগেছে তাকে পদোন্নতি দিয়েছেন। আমাদের তো কিছু বলার নেই। আমরা ২৫ থেকে ৩০ বছর ধরে বিমানে চাকরি করি। বাণিজ্যিক শাখায় এমন কোনো বিষয় নেই যা আমরা জানি না বা বুঝি না।

তারপরও আমাদের আনফিট করে দিল। রহমান, রবিন এরা তো খুবই দক্ষ কর্মী। এরা বিমানের অ্যাসেট। তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে। ইন্টারভিউ বোর্ড তাদের মনের মতো লোকদের পদোন্নতি দিয়ে দিয়েছে। আমাদের অনেক মানুষের সামনে এনে জুতাপেটা করা হয়েছে। এখানে আর চাকরি করা সম্ভব নয়। অনেকেই আর্লি রিটায়ারমেন্টে চলে যাবেন। এ পদোন্নতি বঞ্চনার কারণে আমরা সামাজিকভাবে হেয় হয়েছি। আত্মীয়স্বজনের সামনে ছোট করা হয়েছে।

২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর অতিরিক্ত সচিব মো. মোকাব্বির হোসেনকে বিমানের এমডি ও সিইও হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। এর আগে মোকাব্বির হোসেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিব ছিলেন।

পদোন্নতি বঞ্চনার বিষয়টি জানার জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সদর দপ্তর বলাকায় গেলে করোনাভাইরাসের কারণে সেখানে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার কথা জানানো হয়। বিমানের এমডি ও সিইও মো. মোকাব্বির হোসেনকে ফোন করা হলে তিনি সাড়া দেননি। একপর্যায়ে তার ফোনে মেসেজ পাঠানো হলেও তিনি উত্তর দেননি।