সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি :
সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের মুক্তির দাবিতে আবারো রাজপথে নেমে বিক্ষোভ মিছিল করেছে সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার শিক্ষার্থীরা।
রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) ১১টায় সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের শান্তিগঞ্জ পয়েন্টে এই মিছিলে অংশ নেয় শান্তিগঞ্জ আবদুল মজিদ কলেজ, টেক্সটাইল কলেজ, ডুংরিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ আশপাশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হাজারো শিক্ষার্থী মহাসড়ক অবরোধ করে ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ মিছিল করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মিছিলে শিক্ষার্থীরা এম এ মান্নানকে ‘সজ্জন নেতা’ দাবি করে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়ে বিভিন্ন স্লোগানে এলাকা প্রকম্পিত করে তোলে।
প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে তারা ‘ছাত্রদের মান্নান ভাই, আমরা তোমায় ভুলি নাই’, ‘উন্নয়নের মান্নান ভাই, আমরা তোমায় ভুলি নাই’, ‘জেলের তালা ভাঙবো, মান্নান ভাইকে আনব’ বলে স্লোগান দেন।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, এম এ মান্নান অবহেলিত সুনামগঞ্জে উচ্চশিক্ষার দ্বার উন্মোচন করেছেন। তাঁর চেষ্টায় সুনামগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, টেক্সটাইল ইনিস্টিটিউট, শিল্প ও কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, আজিজুননেসা ভোকেশনাল ইনিস্টিটিউটসহ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হয়েছে। সুনামগঞ্জের উন্নয়নে তিনি সব সময় আন্তরিক ছিলেন।
মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত পথসভায় শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান, আবিদুর রহমান, ইমতিয়াজ, বুশরা আক্তার চৌধুরী, রাব্বি হাসান জনি, মিজানুর রহমান বক্তব্য দেন।
এম এ মান্নান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন বলে দাবি শিক্ষার্থীদের। তাঁরা জানান, এম এ মান্নান শান্তিপ্রিয় মানুষ। কখনো ছাত্রদের বিরোধিতা করেননি। তিনি আন্দোলনে সহযোগিতা করেছেন। টেলিভিশনে তিনি সেই কথা বলেছেন। যে মামলা তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেই মামলায় ৯৯ জন আসামির নাম রয়েছে। অথচ পুলিশ শুধু এম এ মান্নানকে গ্রেপ্তার করেছে। এটা দুঃখজনক। ঘটনা ঘটেছে সুনামগঞ্জ শহরে, তিনি ছিলেন শান্তিগঞ্জে। তাঁকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের মিছিলের কারণে সড়কে যানজট দেখা দেয়। এ সময় সড়কে সেনা ও পুলিশ সদস্যদেরও দেখা গেছে।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুকান্ত সাহা বলেন, শিক্ষার্থীরা সাবেক মন্ত্রী এমএ মান্নানের মুক্তির দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করেছে। তবে অপ্রীতিকর কিছু হয়নি।
সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ মান্নানকে গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে শান্তিগঞ্জের হিজলবাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
সেসময় জেলা পুলিশ সুপার আ ফ ম আনোয়ার হোসেন খান জানান, গত ৪ অগাস্ট সুনামগঞ্জ জেলা শহরে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে করা মামলার আসামি হিসেবে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পরদিন শুক্রবার সকালে তাকে সুনামগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে নেওয়া হলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।
সেদিনও এম এ মান্নানের মুক্তির দাবিতে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত সড়কের শান্তিগঞ্জ পয়েন্ট অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছিলেন তারা।
একই দাবিতে রোববারও আশপাশের স্কুলের হাজারো শিক্ষার্থী ইউনিফর্ম পরে শান্তিগঞ্জ পয়েন্টে জড়ো হয়। পরে তারা সেখান থেকে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে।
গত ৪ অগাস্টে ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের হামলার সময় গুলিবিদ্ধ হন জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার এরোয়াখাই গ্রামের জহুর আলী।
এ ঘটনায় তার ভাই হাফিজ আহমদ ২ সেপ্টেম্বর এম এ মান্নানসহ ৯৯ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। সাবেক আমলা এম এ মান্নান ২০০৩ সালে চাকরি থেকে অবসরের পর ২০০৫ সালে সুনামগঞ্জ-৩ আসনের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে হেরে গিয়েছিলেন।
পরে ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে প্রথমবারের মত সংসদ সদস্য হন তিনি। এরপর ২০১৪ সালে দশম এবং ২০১৮ সালে একাদশ নির্বাচনেও জয় পান তিনি। ২০১৪ সালে শুরুতে তাকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর চার মাস পর তার দায়িত্বে যুক্ত হয় অর্থ মন্ত্রণালয়ও। ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর তাকে করা হয় পরিকল্পনামন্ত্রী।
তিনি টানা চতুর্থবার সংসদ সদস্য হন ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারিতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে। তবে এ মেয়াদে মন্ত্রিসভায় রাখা হয়নি মান্নানকে। তবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়। তিনি মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজ, টেক্সটাইল কলেজসহ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখেন।
এলাকাবাসী বলছেন, অগাস্টের শুরু থেকে নিজ বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন এমএ মান্নান। এলাকাবাসী তার হিজলবাড়ি পাহারা দিয়ে রেখেছিলেন। ফলে ৫ অগাস্টের পরও কেউ তার বাড়িতে হামলা করতে পারেনি।
এম এ মান্নানের আইনজীবী শফিকুল ইসলাম বলেন, রোববার দ্রুত বিচার আদালতে এম এ মান্নানের জামিনের জন্য শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।