সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি :
শুক্রবার (২০ অক্টোবর) থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হচ্ছে। সাতক্ষীরায় দুর্গোৎসবের সব প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। দেবী দুর্গার প্রতিমায় ভরে উঠেছে সাতক্ষীরার প্রতিটি পূজামণ্ডপ। নানান রঙ আর তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে দেবীর প্রতিচ্ছবি। শেষ মুহূর্তের রঙ আর সাজসজ্জায় দুর্গা দেবীকে সাজাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন সাতক্ষীরার প্রতিমা শিল্পীরা।
শুধু তাই নয় সরকারের উন্নয়নকে তুলে ধরতে ও ভক্তদের আকৃষ্ট করতে সাতক্ষীরা আশাশুনির মহেশ্বরকাটি সার্বজনীন পূজা কমিটির আয়োজনে মন্দিরের সামনে খালে তৈরি করা হয়েছে মেট্রোরেলের আদলে মন্দিরের প্রবেশপথ। যা ভক্তদের মন কেড়েছে। যা দেখতে অনেক দূরদূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসছে।
জানা গেছে, টানা দুই মাস ৫০ জন শ্রমিক কাজ করে হিম খালি নদীর উপরে তৈরি করেছে মেট্রো রেলসেতু। সেতু পার হয়ে যেতে হবে পূজা মন্ডপে। শুক্রবার (২০ অক্টোবর) মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা শুরু হয়ে মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) পর্যন্ত।
মহেশ্বরকাটে পূজা উদযাপন পরিষদের যুব কমিটির সদস্য সুমিত সরকার জানান, এবারের পূজোয় আমাদের বিশেষ আকর্ষণ হচ্ছে সেতুর উপরে মেট্রোরেল। সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরতে আমাদের এমন আয়োজন। গত বছর আমরা পদ্মাসেতু তৈরি করেছিলাম।
স্থানীয় সুমিত সরকার বলেন, ঢাকায় মেট্রোরেল আছে শিনেছি, তবে কখন দেখিনি। মেট্রোরেলে ওঠার আমার খুব ইচ্ছা, তাই পূজা উদযাপন কমিটির করা মেট্রোরেলে উঠে আমি আমার ইচ্ছা পূরণ করছি।
মহেশ্বরকাটে পূজা উদযাপন পরিষদের ক্যাশিয়ার পুলিন মন্ডল বলেন, আমাদের দর্শনার্থীদের প্রতি বছর আমরা নতুন কিছু দেওয়ার চেষ্টা করে। তারি ধারাবাহিকতায় এবার পদ্মাসেতুর ওপরে মেট্রোরেলের সেতু তৈরি করা হয়েছে। পূজা শুরু হওয়ার আগেই বিভিন্ন জেলা থেকে এ সেতু দেখতে বিভিন্ন দর্শনার্থী আসছে। আর দর্শনার্থীদের আগমন দেখে আমাদের কষ্ট সার্থক হয়েছে বলে মনে করছি।
প্রতিমা শিল্পী দেবাশীষ চক্রবর্তী জানান, একটি প্রতিমা তৈরি করতে শিল্পীদের সর্বনিম্ন ২৫-৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। সর্বোচ্চ তিন-চার লাখ টাকা খরচ হচ্ছে এ বছর। প্রতিমা তৈরির জন্য তাদের ৩/৪ ভ্যান মাটি লাগে। খড়ের আউর লাগে ৫/৬ পৌন। এছাড়াও কাঠ, বাঁশ, দড়ি, পেরেক, সুতা ও ধানের গুঁড়াসহ বিভিন্ন জিনিসের প্রয়োজন হয়। একটি প্রতিমা তৈরি করতে সময় লাগে ১৫/২০ দিন।
সাতক্ষীরা পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অসীম বরণ চক্রবর্তী বলেন, এ বছর জেলার সাত উপজেলায় মোট ৬০৬টি মণ্ডপে পূজা হবে। এ জন্য মন্দিরে বিভিন্ন কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে আমরা বিভিন্ন দাবি করেছি। আশাশুনি উপজেলার মহেশ্বরকাটি সার্বজনীন পূজা কমিটির আয়োজনে মন্দিরের সামনে খালে তৈরি করা হয়েছে মেট্রোরেলের আদলে মন্দিরে প্রবেশ পথ। যা ভক্তদের মন কেড়েছে।
আশাশুনি থানার ওসি বিশ্বজিৎ কুমার অধিকারী বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজায় প্রতি বছরের ন্যায় এবারও পুলিশের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। প্রতিটি পূজামণ্ডপে আনসার সদস্যরা ডিউটিতে থাকবে। গুরুত্বপূর্ণ মণ্ডপে থাকবে পুলিশ। পুলিশের টিম পূজামণ্ডপগুলো পরিদর্শন করবে। পাশাপাশি যে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো আছে তাদের ডিউটিগুলো সবসময় পর্যবেক্ষণ করবে। ভক্তদের মহেশ্বরকাটি সার্বজনীন পূজা দেখতে আশার আহ্বান জানান।
সাতক্ষীরা জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলার ৭টি উপজেলায় ৬০৬টি পূজামণ্ডপে এ বছর দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। যার মধ্যে কলারোয়া উপজেলার ৪৮টি, তালা ১৯৬টি, সাতক্ষীরা সদর ১১২টি, আশাশুনি ১০৮টি, দেবহাটা ২১টি, কালিগঞ্জ ৫১টি ও শ্যামনগরের ৭০টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। গত বছর পূজা মণ্ডপের সংখ্যা ছিল ৫৯৯টি ও চলতি বছর ৬০৬টি। গত বছরের তুলনায় এ বছর ৭টি পূজামণ্ডপের সংখ্যা বেড়েছে।