Dhaka রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫, ৮ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সাংবাদিকদের কারণে রাষ্ট্রদূতরা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মাতব্বরি করেন : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনাদের কারণে রাষ্ট্রদূতগণ বিভিন্ন রকমের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মাতব্বরি করেন। আর আপনারা সবসময় ময়লা খোঁজেন। আপনাদের অভ্যাসটা খারাপ হয়ে গেছে।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘দেশ এগিয়ে চলেছে’ বইয়ের প্রকাশনা উৎসব শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মন্ত্রী।

সম্প্রতি ঢাকা- ১৭ আসনের উপনির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনা নিয়ে বিবৃতি দেয় ১৩টি পশ্চিমা মিশন। ওই বিবৃতির পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বুধবার পশ্চিমা ১৩ মিশনকে ডেকে ঢাকার অসন্তোষের কথা জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

একই বিষয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। মন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়, প্রধানমন্ত্রী রোম সফর করে ঢাকায় ফিরেছেন। হিরো আলমকে নিয়ে বিবৃতি দেয়া দেশগুলোর মধ্যে ইতালিও ছিল। দেশটির সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে মন্ত্রীপর্যায়ে এ বিষয়ে কোনো অসন্তোষ জানানো হয়েছে কি না? উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা এটা নিয়ে কিছু বলিনি। এটা ভদ্রতার জায়গা। আপনারা (গণমাধ্যমকর্মী) ময়লা, এগুলো নিয়ে আলাপ করবেন। আমরা এটা নিয়ে আলাপ করিনি। আর আপনারা সবসময় ময়লা খোঁজেন। আপনাদের (গণমাধ্যমকর্মী) অভ্যাসটা খারাপ হয়ে গেছে। আপনাদের কারণেই বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা এক্সট্রা অ্যাকটিভ। রাষ্ট্রদূতরা বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ বিষয়েও মাতব্বরি করেন। যেকোনো ভাবেই হোক এর একটি কালচার তৈরি হয়েছে অনেকদিন ধরে। এটি বন্ধ হওয়া উচিত। এখনই সময় এটি বন্ধ করার।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশিদের কথা বলা সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে মোমেন বলেন, সাম হাউ, এটা একটা কালচার তৈরি হয়েছে অনেক দিনের। এটা বন্ধ করা উচিত। এখন সময় এসেছে এটা বন্ধ করার।

এ দায় কি রাজনীতিবিদদের নেই? এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, অনেক দিন ধরে এটি তৈরি করেছেন। আমরা কালচারটা পছন্দ করি না।

আরেক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইউরোপে আমাদের দেশের রাষ্ট্রদূতদের সবাইকে নিয়ে একটা গোলটেবিল বৈঠক করেছি। সেখানে আমরা বলেছি আমাদের দেশ সম্পর্কে অন্যদের জ্ঞান সীমিত। আমরা বিভিন্ন ইস্যুতে- মানবাধিকার, গণতন্ত্র, নির্বাচন প্রক্রিয়া, নির্বাচন কমিশন নিয়ে প্রায় ১০টি ব্রিফ তৈরি করেছি। এমনকি এই আগুনসন্ত্রাস নিয়ে বই তেরি করেছি। আমরা বলেছি আপনারা এসব নিয়ে ওদের (বিভিন্ন দেশের) সঙ্গে শেয়ার করবেন। তাদের জানাবেন এগুলোর কী অবস্থা। তাতে তারা আহাম্মকের মতো হঠাৎ করে একটা স্টেটমেন্ট দেবে না।

ইতালি সফরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠক প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, ইতালির প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে যে সম্মান দিয়েছেন এটা দুর্লভ, রাষ্ট্রীয় সফরের মতো। ওনাকে (বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী) রিসিভ করেছেন, গার্ড অব অনার দিয়েছেন। ঘণ্টাখানেক বৈঠক করে খুব আন্তরিকতার সঙ্গে আলাপ করেছেন। খুবই ভালো আলোচনা হয়েছে।

বৈঠকে শ্রম ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সেখানে আলোচনায় লেবার ইস্যু এসেছে। আমাদের অনেক প্রবাসী ওখানে আছেন, অনেকে বৈধ আবার অনেকে অবৈধ। তারা বৈধদের চায়। তারা বৈধের পরিমাণ আরও বাড়াবে বলেছে। কিন্তু তারা অবৈধ নিয়ে খুবৃআমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বৈধ-অবৈধ যারাই আছে তারা আপনার এবং আমার দেশের জন্য অবদান রাখছেন। যারা অবৈধ আছে, তাদের মধ্যে যারা ভালো তাদের দেখেশুনে রেখে দেন।

ইতালিতে অবৈধ উপায়ে বাংলাদেশিরা প্রবেশ করুক সেটা ঢাকাও চায় না বলে বার্তা দেওয়া হয়েছে রোমকে। এ প্রসঙ্গে মোমেন বলেন, কৃষিতে তারা অনেক লেবার নেবে, ট্যুরিজমে অনেক লোক নেবে। তবে বৈধ। তারা অবৈধ লোক চায় না। আমরা বলেছি, আমরা চাই বৈধভাবে লোক যাক। আমরা চাই না অবৈধভাবে সাগর দিয়ে লোক মারা যাক। এছাড়া দুই সরকারপ্রধানের বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর ইতালি সফরে রাষ্ট্রদূতদের কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, আমরা সেখানে কিছু বলিনি। একটা ভদ্রতাজ্ঞান আছে। আপনি ময়লা- এগুলো নিয়ে আলাপ করবেন কেন? আমরা এটা নিয়ে ওখানে আলাপ করিনি।

ইতালিতে নতুন কর্মী নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সমঝোতার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, তারা নতুন একটি প্রস্তাবনা আমাদের দিয়েছে। আমরা সেই প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করছি। পরে এটা সই হবে দ্রুত। আমরা দুইটা এমওইউ সই করেছি সেখানে। তবে ওটা এখনও হয়নি। কারণ তা এখনো আলাপ-আলোচনার মধ্যে আছে।

কেউ একজন গিয়ে তাকে ধরলো আর তিনি না জেনে একটা বক্তব্য দিয়ে দিলেন। কখনো কখনো কেউ তার ফান্ডে পয়সা দিলেন, তারপক্ষে বলে ফেললেন। আমরা বলেছি এজন্য আপনাদের একটা বড় দায়িত্ব আপনারা তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আমাদের বড় বড় ইস্যু সম্পর্কে তাদের জানাবেন। তাহলে এ ব্যাপারে তাদের জ্ঞান বাড়বে, যোগ করেন ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

সেনাবাহিনীর সমর্থন না থাকলে এই সরকার টিকবে না : ফরহাদ মজহার

সাংবাদিকদের কারণে রাষ্ট্রদূতরা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মাতব্বরি করেন : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ১০:৪০:৩২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ জুলাই ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনাদের কারণে রাষ্ট্রদূতগণ বিভিন্ন রকমের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মাতব্বরি করেন। আর আপনারা সবসময় ময়লা খোঁজেন। আপনাদের অভ্যাসটা খারাপ হয়ে গেছে।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘দেশ এগিয়ে চলেছে’ বইয়ের প্রকাশনা উৎসব শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মন্ত্রী।

সম্প্রতি ঢাকা- ১৭ আসনের উপনির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনা নিয়ে বিবৃতি দেয় ১৩টি পশ্চিমা মিশন। ওই বিবৃতির পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বুধবার পশ্চিমা ১৩ মিশনকে ডেকে ঢাকার অসন্তোষের কথা জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

একই বিষয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। মন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়, প্রধানমন্ত্রী রোম সফর করে ঢাকায় ফিরেছেন। হিরো আলমকে নিয়ে বিবৃতি দেয়া দেশগুলোর মধ্যে ইতালিও ছিল। দেশটির সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে মন্ত্রীপর্যায়ে এ বিষয়ে কোনো অসন্তোষ জানানো হয়েছে কি না? উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা এটা নিয়ে কিছু বলিনি। এটা ভদ্রতার জায়গা। আপনারা (গণমাধ্যমকর্মী) ময়লা, এগুলো নিয়ে আলাপ করবেন। আমরা এটা নিয়ে আলাপ করিনি। আর আপনারা সবসময় ময়লা খোঁজেন। আপনাদের (গণমাধ্যমকর্মী) অভ্যাসটা খারাপ হয়ে গেছে। আপনাদের কারণেই বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা এক্সট্রা অ্যাকটিভ। রাষ্ট্রদূতরা বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ বিষয়েও মাতব্বরি করেন। যেকোনো ভাবেই হোক এর একটি কালচার তৈরি হয়েছে অনেকদিন ধরে। এটি বন্ধ হওয়া উচিত। এখনই সময় এটি বন্ধ করার।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশিদের কথা বলা সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে মোমেন বলেন, সাম হাউ, এটা একটা কালচার তৈরি হয়েছে অনেক দিনের। এটা বন্ধ করা উচিত। এখন সময় এসেছে এটা বন্ধ করার।

এ দায় কি রাজনীতিবিদদের নেই? এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, অনেক দিন ধরে এটি তৈরি করেছেন। আমরা কালচারটা পছন্দ করি না।

আরেক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইউরোপে আমাদের দেশের রাষ্ট্রদূতদের সবাইকে নিয়ে একটা গোলটেবিল বৈঠক করেছি। সেখানে আমরা বলেছি আমাদের দেশ সম্পর্কে অন্যদের জ্ঞান সীমিত। আমরা বিভিন্ন ইস্যুতে- মানবাধিকার, গণতন্ত্র, নির্বাচন প্রক্রিয়া, নির্বাচন কমিশন নিয়ে প্রায় ১০টি ব্রিফ তৈরি করেছি। এমনকি এই আগুনসন্ত্রাস নিয়ে বই তেরি করেছি। আমরা বলেছি আপনারা এসব নিয়ে ওদের (বিভিন্ন দেশের) সঙ্গে শেয়ার করবেন। তাদের জানাবেন এগুলোর কী অবস্থা। তাতে তারা আহাম্মকের মতো হঠাৎ করে একটা স্টেটমেন্ট দেবে না।

ইতালি সফরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠক প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, ইতালির প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে যে সম্মান দিয়েছেন এটা দুর্লভ, রাষ্ট্রীয় সফরের মতো। ওনাকে (বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী) রিসিভ করেছেন, গার্ড অব অনার দিয়েছেন। ঘণ্টাখানেক বৈঠক করে খুব আন্তরিকতার সঙ্গে আলাপ করেছেন। খুবই ভালো আলোচনা হয়েছে।

বৈঠকে শ্রম ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সেখানে আলোচনায় লেবার ইস্যু এসেছে। আমাদের অনেক প্রবাসী ওখানে আছেন, অনেকে বৈধ আবার অনেকে অবৈধ। তারা বৈধদের চায়। তারা বৈধের পরিমাণ আরও বাড়াবে বলেছে। কিন্তু তারা অবৈধ নিয়ে খুবৃআমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বৈধ-অবৈধ যারাই আছে তারা আপনার এবং আমার দেশের জন্য অবদান রাখছেন। যারা অবৈধ আছে, তাদের মধ্যে যারা ভালো তাদের দেখেশুনে রেখে দেন।

ইতালিতে অবৈধ উপায়ে বাংলাদেশিরা প্রবেশ করুক সেটা ঢাকাও চায় না বলে বার্তা দেওয়া হয়েছে রোমকে। এ প্রসঙ্গে মোমেন বলেন, কৃষিতে তারা অনেক লেবার নেবে, ট্যুরিজমে অনেক লোক নেবে। তবে বৈধ। তারা অবৈধ লোক চায় না। আমরা বলেছি, আমরা চাই বৈধভাবে লোক যাক। আমরা চাই না অবৈধভাবে সাগর দিয়ে লোক মারা যাক। এছাড়া দুই সরকারপ্রধানের বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর ইতালি সফরে রাষ্ট্রদূতদের কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, আমরা সেখানে কিছু বলিনি। একটা ভদ্রতাজ্ঞান আছে। আপনি ময়লা- এগুলো নিয়ে আলাপ করবেন কেন? আমরা এটা নিয়ে ওখানে আলাপ করিনি।

ইতালিতে নতুন কর্মী নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সমঝোতার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, তারা নতুন একটি প্রস্তাবনা আমাদের দিয়েছে। আমরা সেই প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করছি। পরে এটা সই হবে দ্রুত। আমরা দুইটা এমওইউ সই করেছি সেখানে। তবে ওটা এখনও হয়নি। কারণ তা এখনো আলাপ-আলোচনার মধ্যে আছে।

কেউ একজন গিয়ে তাকে ধরলো আর তিনি না জেনে একটা বক্তব্য দিয়ে দিলেন। কখনো কখনো কেউ তার ফান্ডে পয়সা দিলেন, তারপক্ষে বলে ফেললেন। আমরা বলেছি এজন্য আপনাদের একটা বড় দায়িত্ব আপনারা তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আমাদের বড় বড় ইস্যু সম্পর্কে তাদের জানাবেন। তাহলে এ ব্যাপারে তাদের জ্ঞান বাড়বে, যোগ করেন ড. এ কে আব্দুল মোমেন।