Dhaka শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৮ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সহিংস ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের ওপর মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

পশ্চিম তীরে চরম সহিংসতার অপরাধে ইসরায়েলের বসতি স্থাপনকারীদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এ কথা জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, পশ্চিম তীরে নিরাপত্তা, শান্তি নষ্ট করে এমন ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর নিশ্চিত করেছে।

পশ্চিম তীরে সহিংসতাকারী ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের পরিবারেরও সদস্যরাও এই নিষেধাজ্ঞার অধীনে থাকবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে সহিংসতার সাথে জড়িত ইসরায়েলি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা ভুক্তভোগী হবেন।

ব্লিঙ্কেন বলেন, পশ্চিম তীরে শান্তি নষ্ট করে এমন ইসরায়েলিদের আগে থেকেই প্রতিরোধ করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। এরমধ্যে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি হামলা এই প্রতিরোধে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলি হামলাকারীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে আমরা এর আগেও জোর দিয়েছি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও এ বিষয়ে বারবার তাগাদা দিয়েছেন।

এদিকে শীর্ষ মার্কিন কূটনীতিক বলেছেন, সহিংসতার অভিযোগে অভিযুক্ত ফিলিস্তিনিদের ক্ষেত্রেও এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে।

৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হামলা চালায় মুক্তিকামী ফিলিস্তিনিদের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এতে ১৪০০ ইসরায়েলি নাগরিক প্রাণ হারায় জবাবে গাজা উপত্যকায় নির্বিচারে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। বিমান হামলা ও স্থল অভিযানে ১৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ২৫ হাজারেরও বেশি। তাদের বেশিরভাগই বেসামরিক। সামরিক হতাহত এড়াতে বিশ্বজুড়ে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হচ্ছিল। হামাসের পক্ষ থেকেও প্রথম এমন আভাস মিলে মঙ্গলবার। ২২ নভেম্বর মধ্যস্থতাকারী কাতার জানায়, বেশ কিছু শর্ত মেনে দুই পক্ষ রাজি হয়েছে। দুই দফায় বাড়া সেই যুদ্ধবিরতি শেষ হয় শুক্রবার। এরপর থেকেই গাজায় হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল।

তবে এই সময়ে পশ্চিম তীরে সহিংসতা থেমে নেই। প্রতিদিনই সেখান থেকে ফিলিস্তিনিদের মৃত্যুর খবর আসছে। এই সহিংসতায় অবৈধভাবে বসবাসকারী ইসরায়েলিরাও জড়িয়ে পড়ছে বলে জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, উগ্র যেসব ইসরায়েলি বসবাসকারী সেখান শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করবে, তাদের ভিসা নিষেধাজ্ঞার দেওয়া হবে।

গত কয়েক সপ্তাহে পশ্চিম তীরে বসবাসরত ফিলিস্তিনিরা বিবিসিকে জানাচ্ছিল যে ইসরায়েলি সেটেলাররা আরও ভূমি দখলের জন্য গাজার যুদ্ধকে ব্যবহার করছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এ পদক্ষেপকে বসতি স্থাপনকারীদের প্রতি ইসরায়েল সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হতাশার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইউসেফ বুন্ডেল বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ আসলে যুদ্ধে ইসরায়েলের সমর্থন থেকে কিছুটা সরে যাওয়া। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আসলে বলতে চাইছে ‘যথেষ্ট হয়েছে।’ যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ তারই বহিঃপ্রকাশ।

তবে একে খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখতে নারাজ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিংক ট্যাংক ফেলোশিপ অব রিকনসিলিয়েশন এর নির্বাহী পরিচালক অ্যারিয়েল গোল্ড। তিনি বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না। কারণ পশ্চিমতীরে বসবাসকারী অনেক ইসরায়েলির যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব রয়েছে। তাদের সেখানে যেতে ভিসার প্রয়োজন পড়বে না।

যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট সাংবাদিকদের বলেন, দুঃখজনকভাবে, ইসরায়েলি চরমপন্থিরা সহিংসতার সৃষ্টি করেছে যা অবশ্যই নিন্দনীয়। আইন অনুযায়ী, রাষ্ট্র যাদেরকে বিশেষ অধিকার দিয়েছে তারা বাদে কেউ সহিসংতার জন্ম দিতে পারে না।

১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর থেকে ইসরায়েলের পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেম দখল করে ইসরায়েলিরা। তখন থেকে ২৫০টিরও বেশি বসতিতে ৭ লাখের বেশি মানুষের বসবাস। যদিও সংখ্যাগরিষ্ঠ এই জনগোষ্ঠীকে অবৈধ বলে মনে করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তবে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই এর বিরোধিতা করে আসছে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

সহিংস ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের ওপর মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা

প্রকাশের সময় : ০৩:৫৮:০৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

পশ্চিম তীরে চরম সহিংসতার অপরাধে ইসরায়েলের বসতি স্থাপনকারীদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এ কথা জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, পশ্চিম তীরে নিরাপত্তা, শান্তি নষ্ট করে এমন ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর নিশ্চিত করেছে।

পশ্চিম তীরে সহিংসতাকারী ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের পরিবারেরও সদস্যরাও এই নিষেধাজ্ঞার অধীনে থাকবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে সহিংসতার সাথে জড়িত ইসরায়েলি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা ভুক্তভোগী হবেন।

ব্লিঙ্কেন বলেন, পশ্চিম তীরে শান্তি নষ্ট করে এমন ইসরায়েলিদের আগে থেকেই প্রতিরোধ করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। এরমধ্যে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি হামলা এই প্রতিরোধে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলি হামলাকারীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে আমরা এর আগেও জোর দিয়েছি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও এ বিষয়ে বারবার তাগাদা দিয়েছেন।

এদিকে শীর্ষ মার্কিন কূটনীতিক বলেছেন, সহিংসতার অভিযোগে অভিযুক্ত ফিলিস্তিনিদের ক্ষেত্রেও এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে।

৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হামলা চালায় মুক্তিকামী ফিলিস্তিনিদের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এতে ১৪০০ ইসরায়েলি নাগরিক প্রাণ হারায় জবাবে গাজা উপত্যকায় নির্বিচারে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। বিমান হামলা ও স্থল অভিযানে ১৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ২৫ হাজারেরও বেশি। তাদের বেশিরভাগই বেসামরিক। সামরিক হতাহত এড়াতে বিশ্বজুড়ে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হচ্ছিল। হামাসের পক্ষ থেকেও প্রথম এমন আভাস মিলে মঙ্গলবার। ২২ নভেম্বর মধ্যস্থতাকারী কাতার জানায়, বেশ কিছু শর্ত মেনে দুই পক্ষ রাজি হয়েছে। দুই দফায় বাড়া সেই যুদ্ধবিরতি শেষ হয় শুক্রবার। এরপর থেকেই গাজায় হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল।

তবে এই সময়ে পশ্চিম তীরে সহিংসতা থেমে নেই। প্রতিদিনই সেখান থেকে ফিলিস্তিনিদের মৃত্যুর খবর আসছে। এই সহিংসতায় অবৈধভাবে বসবাসকারী ইসরায়েলিরাও জড়িয়ে পড়ছে বলে জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, উগ্র যেসব ইসরায়েলি বসবাসকারী সেখান শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করবে, তাদের ভিসা নিষেধাজ্ঞার দেওয়া হবে।

গত কয়েক সপ্তাহে পশ্চিম তীরে বসবাসরত ফিলিস্তিনিরা বিবিসিকে জানাচ্ছিল যে ইসরায়েলি সেটেলাররা আরও ভূমি দখলের জন্য গাজার যুদ্ধকে ব্যবহার করছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এ পদক্ষেপকে বসতি স্থাপনকারীদের প্রতি ইসরায়েল সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হতাশার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইউসেফ বুন্ডেল বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ আসলে যুদ্ধে ইসরায়েলের সমর্থন থেকে কিছুটা সরে যাওয়া। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আসলে বলতে চাইছে ‘যথেষ্ট হয়েছে।’ যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ তারই বহিঃপ্রকাশ।

তবে একে খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখতে নারাজ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিংক ট্যাংক ফেলোশিপ অব রিকনসিলিয়েশন এর নির্বাহী পরিচালক অ্যারিয়েল গোল্ড। তিনি বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না। কারণ পশ্চিমতীরে বসবাসকারী অনেক ইসরায়েলির যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব রয়েছে। তাদের সেখানে যেতে ভিসার প্রয়োজন পড়বে না।

যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট সাংবাদিকদের বলেন, দুঃখজনকভাবে, ইসরায়েলি চরমপন্থিরা সহিংসতার সৃষ্টি করেছে যা অবশ্যই নিন্দনীয়। আইন অনুযায়ী, রাষ্ট্র যাদেরকে বিশেষ অধিকার দিয়েছে তারা বাদে কেউ সহিসংতার জন্ম দিতে পারে না।

১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর থেকে ইসরায়েলের পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেম দখল করে ইসরায়েলিরা। তখন থেকে ২৫০টিরও বেশি বসতিতে ৭ লাখের বেশি মানুষের বসবাস। যদিও সংখ্যাগরিষ্ঠ এই জনগোষ্ঠীকে অবৈধ বলে মনে করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তবে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই এর বিরোধিতা করে আসছে।