Dhaka মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫, ৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘সর্বত মঙ্গল রাধে’ গানের আসল মালিক কে?

  • বিনোদন প্রতিবেদক
  • প্রকাশের সময় : ০৬:৪৪:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর ২০২০
  • ২১১ জন দেখেছেন

ফাইল ছবি

নতুন একটি গানে কণ্ঠে রীতিমতো সংগীতাঙ্গনে হৈচৈ ফেলে দিয়েছেন চঞ্চল চৌধুরীমেহের আফরোজ শাওন। দুজনে মিলে একটি লোকগানে কণ্ঠ দিয়েছেন। ‘সর্বত মঙ্গল রাধে’ শিরোনামের গানটি তাদের কণ্ঠে আলোচনায় এসেছে নতুন করে। এটি ভাইরাল হয়ে পড়ে দ্রুতই। তবে এই গানের বিরুদ্ধে আপত্তি জানায় সরলপুর ব্যান্ড। তাদের আপত্তির কারণেই ইউটিউব ভিডিওটি কপিরাইট ক্লেইমের আওতায় ‘টেকডাউন’ করে।

বুধবার রাতে সরলপুর ব্যান্ড গণমাধ্যমের কাছে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ও কপিরাইটের কাগজপত্র পাঠিয়েছে। যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, গানটির মালিক সরলপুর ব্যান্ড।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তারা বলেছে, আমরা সরলপুর ব্যান্ড ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশে সংগীতচর্চা করে আসছি। এ পর্যন্ত আমরা ৫০টির মতো মৌলিক গান করেছি। এর মধ্যে আমাদের লোকজ ধারার মৌলিক গান যুবতী রাধে মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয়, গানটি নিয়ে মানুষের মাঝে নানা ধরনের বিভ্রান্তিও ছড়িয়ে পড়েছে যে এটি মৈমনসিংহগীতিকা থেকে সংগৃহীত একটি গান।

মূলত আমাদের ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা ভোকাল ও গিটারিস্ট তারিকুল ইসলাম তপনের লেখা ও সুর করা এ গানটি সরলপুর ব্যান্ড শুরু থেকেই পরিবেশন করে আসছে। কিন্তু বিভিন্ন সময় আমাদের গানটি অনেকেই নিজের বলে প্রকাশের চেষ্টা করে এসেছেন। যার ফলে ২০১৮ সালে আমরা গানটির কপিরাইট সংগ্রহ করি।

সরলপুর ব্যান্ড বলে, ‘যুবতী রাধে’ গানটি আমরা লেখা শুরু করি ২০০৬/২০০৭ সাল থেকে। তখনকার সময়ে আমরা কয়েকজন একদিন রাতে রাতব্যাপী পালাগান দেখতে যাই। যেখানে রাধাকৃষ্ণ সম্পর্কিত বিভিন্ন পালাগান হয়েছিল। যা আমাদের খুবই ভালো লাগে এবং মন কাড়ে।

তার পর থেকে রাধা কৃষ্ণর গানগুলোর ওপর নির্ভর করে আমরা এ গানটি লেখা শুরু করি। রাধা কৃষ্ণের গল্প থেকে আমরা বিভিন্ন তথ্য-ভাবধারা, শব্দচয়ন সংগ্রহ করে থাকি। কিন্তু কোনো হুবহু কথা আমরা সংগ্রহ করিনি। আমাদের এ গানের সঙ্গে কোথাও কোনো গানের হুবহু মিল নেই।

সরলপুর ব্যান্ড সংগীতশিল্পী সুমী মির্জাকে ‘কথিত সংগীতশিল্পী’ আখ্যা দিয়ে বলেন, গানটি নিয়ে প্রথম বিভ্রান্তি তৈরি করেন সুমি মির্জা নামের এক কথিত শিল্পী। তিনি গানটির কথা পরিবর্তন করে লেজার ভিশনের ব্যানারে তাদের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ করেন। ইউটিউবের কমেন্টে আমাদের সে গানটিকে তিনি পালা গান, মহুয়া গান, গোয়ালিনী গানসহ নানা নামে প্রচার করেন।

আমরা আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হই। পরে কপিরাইট অফিস থেকে আমাদের দুই পক্ষকে ডাকা হয়, সুমী মির্জা গানটিকে মৈমনসিংহগীতিকার মহুয়া গান কিংবা গোয়ালিনী গান বলে দাবি করলেও কোনো প্রমাণ দেখাতে না পারায় দুটি শুনানির মাধ্যমে গানটির সত্যতা প্রকাশ হয় এবং গানটির কপিরাইট আমরা পাই।

পরবর্তী সময়ে তিনি আমাদের ‘যুবতী রাধে’ গানটির সুর ও কথার অংশ হুবহু নকল করেন, ‘বিনোদিনী রাই’ নামে আরেকটি গান প্রকাশ করেন এবং সঙ্গে সঙ্গে গানটির কপিরাইট নিয়ে নেন।’



তবে সরল ব্যান্ডের এসব দাবিকে নাকচ করে দেন কণ্ঠশিল্পী সুমী মির্জা। তিনি বলেন, আমি কখনো অন্যের সৃষ্টিকে নিজের বলে দাবি করতে চাই না। আমি গানটি প্রথম শুনি যাযাবর ব্যান্ডের রাসেল ভাইয়ের কণ্ঠে। এরপর এই গানটি আমি নিজে গাই। ২০১৮ সালের ১৯ এপ্রিল আমার গানটি লেজার ভিশনের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ হলে এটি ভাইরাল হয়ে পড়ে।

গানটি যখন মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে তখন সরল ব্যান্ড ওই বছরের ৪ জুন গানটির কপিরাইট নিয়ে নেয়। এমনকী তারা বিরুদ্ধে এমনভাবে অভিযোগ আনার চেষ্টা করে যাতে গানটি গাইতেই না পারি। পরে ২০১৯ সালে আমি নতুন করে গানটি তৈরি করে “বিনোদিনী রাই” নামে কপিরাইট সনদ নেই।

সুমী বলেন, আসলে এই গানের প্রথম ৮ লাইন আমি লিখেছি। গানটি লেখার জন্য সহায়তা নিয়েছি মৈমনসিংহ গীতিকা, মহুয়াপালাসহ আরো দু-একটি লোকজ অনুষঙ্গের। আমি তো জোর গলায় দাবি করতে পারি না এই গানের রচয়িতা আমি। এই গানের জন্য আমাকে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে।

কিন্তু আমি হেরে যাই নি, কারণ আমি তাদের মতো প্রতারণার আশ্রয় নিইনি। তারা বলছে গানের কথা তাদের, সুরও করেছে। তাহলে যেখান থেকে তারা বলেছে ৩০ ভাগ কথা নিয়েছে তখন কি গানের সুর ছিল না? ওই বাউল ও তার স্ত্রী কি গানটা গাইতো না?’

জানা গেছে, ‘যুবতী রাধে’ গানটি সরলপুর ব্যান্ড গ্রাম-গঞ্জের এক বাউলশিল্পী/সাধকের কাছ থেকে গানটা সংগ্রহ করেছিল। এ গানের কপিরাইট নিয়ে এখনো একটি অভিযোগ পর্যালোচনাধীন রয়েছে, তার সঠিক সুরাহা হয়নি বলে জানা গেছে।

মার্জিয়া তুরিন অবশ্য নিজেই এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ২০০৮ সালে বকশীগঞ্জের এক সাধুর কাছ থেকে গানটি পাই। তখন তিনি খুবই বৃদ্ধ ছিলেন, তার সঙ্গে একজন সাধন সঙ্গিনীও ছিলেন। এই সাধুর কাছে পুরো গানটি পাইনি, ৩০ ভাগ পেয়েছিলাম।

তারপর আমাদের ব্যান্ড দলের সদস্য আল আমিন ভাই এবং তপন বাকি সত্তর শতাংশ গান রচনা করেন। পরে গানটির কম্পোজিশন করেন তপন- অর্থাৎ আমার স্বামী। ২০১২ সালে গানটি আমরা রেকর্ড করি।’

অবশ্য সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তপনকে একমাত্র গীতিকার ও সুরকার হিসেবে উল্লেখ করেছে সরলপুর ব্যান্ড। এখানে স্পষ্ট হচ্ছে, একই গানের কপিরাইট দুই পক্ষের হাতে রয়েছে। শুধু গানের নাম পরিবর্তনের কারণে।

সুমী মির্জা বুধবার রাতে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘যে নিয়মে গান কপিরাইট হয়, ঠিক একই নিয়মে আমার লেখা বিনোদিনী রাই কপিরাইট স্বীকৃতি পেয়েছে।’ সুমী তার সার্টিফিকেট পোস্ট করেছেন। সুমী মির্জাকে একজন মন্তব্য করেন, ‘গানটির আসল লেখকের নাম জাতি জানতে চাই।’ সুমি উত্তরে বলেন, আমরাও। অর্থাৎ তিনি কপিরাইট সার্টিফিকেট পাওয়া সত্ত্বেও গানের প্রকৃত লেখকের নাম জানতে চান।

গানটির সংগীত আয়োজন করেছেন পার্থ বড়ুয়া। পার্থ বড়ুয়ার বরাত দিয়ে চঞ্চল চৌধুরী বলেন, পার্থদার সঙ্গে কথা হয়েছে বুধবার রাতে। তিনি বললেন, আমরা তো জানতাম না এই গানের কথা অন্য কেউ লিখেছেন। জানলে তো আর সংগৃহীত লিখতাম না।

ওরা যদি কাগজপত্র দেখিয়ে বলত, অবশ্যই তাদের ক্রেডিট দিতাম। তার মানে এই নয়, অভিযোগ করে ইউটিউব থেকে গান নামিয়ে দিতে হবে! আমি বা পার্থদা আমাদের কারো ফোন নম্বর জোগাড় করা কঠিন কিছু না। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যর্থ হওয়ার পর কপিরাইট ক্লেইম করতে পারত।’

আরও পড়ুন :‘বিহাইন্ড দ্যা সিন’ দিয়ে আলোচনায় নুসরাত জাহান

চঞ্চল চৌধুরী বলেন, এই যে ‘বকুল ফুল বকুল ফুল’ গানটা, এটা কিন্তু বাংলাদেশে সবার আগে আমার কণ্ঠে রেকর্ড হয়েছে। এরপর ‘জলের গান’ করেছে, তারও পরে মুন্নী (দিনাত জাহান) আপা। একজনের কাছ থেকে মোবাইলে রেকর্ড করে এনে গেয়েছিলাম। জিজ্ঞেস করেছিলাম? কোথায় পেলেন, কার গান এটা? কিছুই বলতে পারেনি। প্রচলিত একটা গান। তো আমি কি এই গানের কপিরাইট দাবি করব!

এদিকে সরলপুর ব্যান্ডের প্রধান শিল্পী মার্জিয়া তুরিন ও প্রধান গিটারিস্ট তরিকুল ইসলাম তপন তাদের ফেসবুকে এক ভিডিওবার্তায় সব মাধ্যম থেকে আইপিডিসি ফিন্যান্স লিমিটেডকে গানটি সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। অন্যথায় আইন অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছে ব্যান্ডদলটি। শুক্রবার গানটির কপিরাইটের কাগজপত্রসহ লিখিত বিবৃতি প্রকাশ করবে বলেও জানিয়েছে।

অন্যদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিষয়টি নিয়ে বেশ হৈচৈ হচ্ছে। অনেকেই শাওন-চঞ্চলের গানটি নামিয়ে দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সদ্য পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সরলপুর ব্যান্ড সংগৃহীত কথাটি উল্লেখ করেনি।

সংগীতশিল্পী লুৎফর হাসান নিজের ফেসবুকে লিখেছেন, ‘চঞ্চল চৌধুরী ও মেহের আফরোজ শাওনের গাওয়া গানটি এক দিনেই ব্যাপক ভাইরাল হয়েছিল। এই গান সব গানের রেকর্ড ভেঙে দিত। কপিরাইট ক্লেইমের কারণে গানটি নামিয়ে ফেলতে হয়েছে।

লোকজ গানের মূল ভাবের সঙ্গে নিজে এক-দুটি অন্তরা যুক্ত করে কেউ কপিরাইট নিজের নামে করে নিতে পারে- এ বড় অদ্ভুত দৃশ্য। এই দেশ ছাড়া আর কোথাও দেখা যাবে না এমনটি। একটা গান উড়ছিল, ডানা ভেঙে দিয়ে পাপ করেছেন আপনারা, পাপ।’

 

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

‘সর্বত মঙ্গল রাধে’ গানের আসল মালিক কে?

প্রকাশের সময় : ০৬:৪৪:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর ২০২০

নতুন একটি গানে কণ্ঠে রীতিমতো সংগীতাঙ্গনে হৈচৈ ফেলে দিয়েছেন চঞ্চল চৌধুরীমেহের আফরোজ শাওন। দুজনে মিলে একটি লোকগানে কণ্ঠ দিয়েছেন। ‘সর্বত মঙ্গল রাধে’ শিরোনামের গানটি তাদের কণ্ঠে আলোচনায় এসেছে নতুন করে। এটি ভাইরাল হয়ে পড়ে দ্রুতই। তবে এই গানের বিরুদ্ধে আপত্তি জানায় সরলপুর ব্যান্ড। তাদের আপত্তির কারণেই ইউটিউব ভিডিওটি কপিরাইট ক্লেইমের আওতায় ‘টেকডাউন’ করে।

বুধবার রাতে সরলপুর ব্যান্ড গণমাধ্যমের কাছে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ও কপিরাইটের কাগজপত্র পাঠিয়েছে। যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, গানটির মালিক সরলপুর ব্যান্ড।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তারা বলেছে, আমরা সরলপুর ব্যান্ড ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশে সংগীতচর্চা করে আসছি। এ পর্যন্ত আমরা ৫০টির মতো মৌলিক গান করেছি। এর মধ্যে আমাদের লোকজ ধারার মৌলিক গান যুবতী রাধে মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয়, গানটি নিয়ে মানুষের মাঝে নানা ধরনের বিভ্রান্তিও ছড়িয়ে পড়েছে যে এটি মৈমনসিংহগীতিকা থেকে সংগৃহীত একটি গান।

মূলত আমাদের ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা ভোকাল ও গিটারিস্ট তারিকুল ইসলাম তপনের লেখা ও সুর করা এ গানটি সরলপুর ব্যান্ড শুরু থেকেই পরিবেশন করে আসছে। কিন্তু বিভিন্ন সময় আমাদের গানটি অনেকেই নিজের বলে প্রকাশের চেষ্টা করে এসেছেন। যার ফলে ২০১৮ সালে আমরা গানটির কপিরাইট সংগ্রহ করি।

সরলপুর ব্যান্ড বলে, ‘যুবতী রাধে’ গানটি আমরা লেখা শুরু করি ২০০৬/২০০৭ সাল থেকে। তখনকার সময়ে আমরা কয়েকজন একদিন রাতে রাতব্যাপী পালাগান দেখতে যাই। যেখানে রাধাকৃষ্ণ সম্পর্কিত বিভিন্ন পালাগান হয়েছিল। যা আমাদের খুবই ভালো লাগে এবং মন কাড়ে।

তার পর থেকে রাধা কৃষ্ণর গানগুলোর ওপর নির্ভর করে আমরা এ গানটি লেখা শুরু করি। রাধা কৃষ্ণের গল্প থেকে আমরা বিভিন্ন তথ্য-ভাবধারা, শব্দচয়ন সংগ্রহ করে থাকি। কিন্তু কোনো হুবহু কথা আমরা সংগ্রহ করিনি। আমাদের এ গানের সঙ্গে কোথাও কোনো গানের হুবহু মিল নেই।

সরলপুর ব্যান্ড সংগীতশিল্পী সুমী মির্জাকে ‘কথিত সংগীতশিল্পী’ আখ্যা দিয়ে বলেন, গানটি নিয়ে প্রথম বিভ্রান্তি তৈরি করেন সুমি মির্জা নামের এক কথিত শিল্পী। তিনি গানটির কথা পরিবর্তন করে লেজার ভিশনের ব্যানারে তাদের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ করেন। ইউটিউবের কমেন্টে আমাদের সে গানটিকে তিনি পালা গান, মহুয়া গান, গোয়ালিনী গানসহ নানা নামে প্রচার করেন।

আমরা আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হই। পরে কপিরাইট অফিস থেকে আমাদের দুই পক্ষকে ডাকা হয়, সুমী মির্জা গানটিকে মৈমনসিংহগীতিকার মহুয়া গান কিংবা গোয়ালিনী গান বলে দাবি করলেও কোনো প্রমাণ দেখাতে না পারায় দুটি শুনানির মাধ্যমে গানটির সত্যতা প্রকাশ হয় এবং গানটির কপিরাইট আমরা পাই।

পরবর্তী সময়ে তিনি আমাদের ‘যুবতী রাধে’ গানটির সুর ও কথার অংশ হুবহু নকল করেন, ‘বিনোদিনী রাই’ নামে আরেকটি গান প্রকাশ করেন এবং সঙ্গে সঙ্গে গানটির কপিরাইট নিয়ে নেন।’



তবে সরল ব্যান্ডের এসব দাবিকে নাকচ করে দেন কণ্ঠশিল্পী সুমী মির্জা। তিনি বলেন, আমি কখনো অন্যের সৃষ্টিকে নিজের বলে দাবি করতে চাই না। আমি গানটি প্রথম শুনি যাযাবর ব্যান্ডের রাসেল ভাইয়ের কণ্ঠে। এরপর এই গানটি আমি নিজে গাই। ২০১৮ সালের ১৯ এপ্রিল আমার গানটি লেজার ভিশনের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ হলে এটি ভাইরাল হয়ে পড়ে।

গানটি যখন মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে তখন সরল ব্যান্ড ওই বছরের ৪ জুন গানটির কপিরাইট নিয়ে নেয়। এমনকী তারা বিরুদ্ধে এমনভাবে অভিযোগ আনার চেষ্টা করে যাতে গানটি গাইতেই না পারি। পরে ২০১৯ সালে আমি নতুন করে গানটি তৈরি করে “বিনোদিনী রাই” নামে কপিরাইট সনদ নেই।

সুমী বলেন, আসলে এই গানের প্রথম ৮ লাইন আমি লিখেছি। গানটি লেখার জন্য সহায়তা নিয়েছি মৈমনসিংহ গীতিকা, মহুয়াপালাসহ আরো দু-একটি লোকজ অনুষঙ্গের। আমি তো জোর গলায় দাবি করতে পারি না এই গানের রচয়িতা আমি। এই গানের জন্য আমাকে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে।

কিন্তু আমি হেরে যাই নি, কারণ আমি তাদের মতো প্রতারণার আশ্রয় নিইনি। তারা বলছে গানের কথা তাদের, সুরও করেছে। তাহলে যেখান থেকে তারা বলেছে ৩০ ভাগ কথা নিয়েছে তখন কি গানের সুর ছিল না? ওই বাউল ও তার স্ত্রী কি গানটা গাইতো না?’

জানা গেছে, ‘যুবতী রাধে’ গানটি সরলপুর ব্যান্ড গ্রাম-গঞ্জের এক বাউলশিল্পী/সাধকের কাছ থেকে গানটা সংগ্রহ করেছিল। এ গানের কপিরাইট নিয়ে এখনো একটি অভিযোগ পর্যালোচনাধীন রয়েছে, তার সঠিক সুরাহা হয়নি বলে জানা গেছে।

মার্জিয়া তুরিন অবশ্য নিজেই এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ২০০৮ সালে বকশীগঞ্জের এক সাধুর কাছ থেকে গানটি পাই। তখন তিনি খুবই বৃদ্ধ ছিলেন, তার সঙ্গে একজন সাধন সঙ্গিনীও ছিলেন। এই সাধুর কাছে পুরো গানটি পাইনি, ৩০ ভাগ পেয়েছিলাম।

তারপর আমাদের ব্যান্ড দলের সদস্য আল আমিন ভাই এবং তপন বাকি সত্তর শতাংশ গান রচনা করেন। পরে গানটির কম্পোজিশন করেন তপন- অর্থাৎ আমার স্বামী। ২০১২ সালে গানটি আমরা রেকর্ড করি।’

অবশ্য সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তপনকে একমাত্র গীতিকার ও সুরকার হিসেবে উল্লেখ করেছে সরলপুর ব্যান্ড। এখানে স্পষ্ট হচ্ছে, একই গানের কপিরাইট দুই পক্ষের হাতে রয়েছে। শুধু গানের নাম পরিবর্তনের কারণে।

সুমী মির্জা বুধবার রাতে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘যে নিয়মে গান কপিরাইট হয়, ঠিক একই নিয়মে আমার লেখা বিনোদিনী রাই কপিরাইট স্বীকৃতি পেয়েছে।’ সুমী তার সার্টিফিকেট পোস্ট করেছেন। সুমী মির্জাকে একজন মন্তব্য করেন, ‘গানটির আসল লেখকের নাম জাতি জানতে চাই।’ সুমি উত্তরে বলেন, আমরাও। অর্থাৎ তিনি কপিরাইট সার্টিফিকেট পাওয়া সত্ত্বেও গানের প্রকৃত লেখকের নাম জানতে চান।

গানটির সংগীত আয়োজন করেছেন পার্থ বড়ুয়া। পার্থ বড়ুয়ার বরাত দিয়ে চঞ্চল চৌধুরী বলেন, পার্থদার সঙ্গে কথা হয়েছে বুধবার রাতে। তিনি বললেন, আমরা তো জানতাম না এই গানের কথা অন্য কেউ লিখেছেন। জানলে তো আর সংগৃহীত লিখতাম না।

ওরা যদি কাগজপত্র দেখিয়ে বলত, অবশ্যই তাদের ক্রেডিট দিতাম। তার মানে এই নয়, অভিযোগ করে ইউটিউব থেকে গান নামিয়ে দিতে হবে! আমি বা পার্থদা আমাদের কারো ফোন নম্বর জোগাড় করা কঠিন কিছু না। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যর্থ হওয়ার পর কপিরাইট ক্লেইম করতে পারত।’

আরও পড়ুন :‘বিহাইন্ড দ্যা সিন’ দিয়ে আলোচনায় নুসরাত জাহান

চঞ্চল চৌধুরী বলেন, এই যে ‘বকুল ফুল বকুল ফুল’ গানটা, এটা কিন্তু বাংলাদেশে সবার আগে আমার কণ্ঠে রেকর্ড হয়েছে। এরপর ‘জলের গান’ করেছে, তারও পরে মুন্নী (দিনাত জাহান) আপা। একজনের কাছ থেকে মোবাইলে রেকর্ড করে এনে গেয়েছিলাম। জিজ্ঞেস করেছিলাম? কোথায় পেলেন, কার গান এটা? কিছুই বলতে পারেনি। প্রচলিত একটা গান। তো আমি কি এই গানের কপিরাইট দাবি করব!

এদিকে সরলপুর ব্যান্ডের প্রধান শিল্পী মার্জিয়া তুরিন ও প্রধান গিটারিস্ট তরিকুল ইসলাম তপন তাদের ফেসবুকে এক ভিডিওবার্তায় সব মাধ্যম থেকে আইপিডিসি ফিন্যান্স লিমিটেডকে গানটি সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। অন্যথায় আইন অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছে ব্যান্ডদলটি। শুক্রবার গানটির কপিরাইটের কাগজপত্রসহ লিখিত বিবৃতি প্রকাশ করবে বলেও জানিয়েছে।

অন্যদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিষয়টি নিয়ে বেশ হৈচৈ হচ্ছে। অনেকেই শাওন-চঞ্চলের গানটি নামিয়ে দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সদ্য পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সরলপুর ব্যান্ড সংগৃহীত কথাটি উল্লেখ করেনি।

সংগীতশিল্পী লুৎফর হাসান নিজের ফেসবুকে লিখেছেন, ‘চঞ্চল চৌধুরী ও মেহের আফরোজ শাওনের গাওয়া গানটি এক দিনেই ব্যাপক ভাইরাল হয়েছিল। এই গান সব গানের রেকর্ড ভেঙে দিত। কপিরাইট ক্লেইমের কারণে গানটি নামিয়ে ফেলতে হয়েছে।

লোকজ গানের মূল ভাবের সঙ্গে নিজে এক-দুটি অন্তরা যুক্ত করে কেউ কপিরাইট নিজের নামে করে নিতে পারে- এ বড় অদ্ভুত দৃশ্য। এই দেশ ছাড়া আর কোথাও দেখা যাবে না এমনটি। একটা গান উড়ছিল, ডানা ভেঙে দিয়ে পাপ করেছেন আপনারা, পাপ।’