নিজস্ব প্রতিবেদক :
সচিবসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকার স্বজনপ্রীতি করে না বলে জানিয়ে জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, যোগ্য লোককে যোগ্য স্থানেই নিয়োগ দেয়া হয়ে। অসঙ্গতি থাকলে সরকার যাচাই সাপেক্ষে ব্যবস্থাও নেয়।
মঙ্গলবার (২৮ মে) সচিবালয়ে গণমাধ্যম কেন্দ্রে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত ‘বিএসআরএফ সংলাপে’ অংশ নিয়ে তিনি কথা বলেন।
তিনি বলেন, ২০১৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত গত পাঁচ বছরে গ্রেড-১ থেকে ৯ পর্যন্ত ১৭৮ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে তদন্ত হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার মাধ্যমে তদন্ত করা হয়েছে। ১৭৮ জনের মধ্যে আমরা ২২ জনকে গুরুদণ্ড দিয়েছি। ৬৯ জনকে লঘুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে ৭৭ জনকে।
মন্ত্রী বলেন, কাজ করতে গেলে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ আসে। এখানে যে শুধু কর্মকর্তারা দায়ী থাকেন, সেটি নয়। যার কাজটি পছন্দ হচ্ছে না সেও কিন্তু এখানে ই-রাখে। আমরা সব সময় দেখি তার যে অভিযোগটি সেটির সত্যতা কি আছে? আমাদের বিভাগীয় ব্যবস্থা (ডিপার্টমেন্টাল প্রসেডিং-ডিপি) চালু করতে হয়।
২০১৪ সাল থেকে ২০২৪ পর্যন্ত গত ১০ বছরে গ্রেড-১ থেকে ৯ পর্যন্ত ৩৫১ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এরমধ্যে গুরুদণ্ড পেয়েছেন ৪১ জন, লঘুদণ্ড পেয়েছেন ১৪০ জন। ১৭০ জনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
সরকারি চাকরির ক্ষেত্র আগের চেয়ে বাড়ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ২০১৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ৩ লাখ ৫৮ হাজার ২৩৭ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সরকারের মোট অনুমোদিত পদ সংখ্যা ১৯ লাখ ১৫১ জন। শূন্য পদ রয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার ৪৪৭টি। ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৪২ হাজার ৯৩১ জনকে ক্যাডার পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নন ক্যাডারে নিয়োগ পেয়েছেন ৬৯ হাজার ২৩৯ জন। চলমান রয়েছে ৪৩, ৪৪, ৪৫ ও ৪৬ তম বিসিএস। এতে ৯ হাজার ৩২২ জন নিয়োগ পাবেন।
মন্ত্রী দাবি করেন, এক ক্যাডারের সাথে আরেক ক্যাডারের বৈষম্য সরকার করে না, করতে চায়ও না। এরপরও কোনো অসঙ্গতি ধরা পড়লে সরকার অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে। প্রশাসনে পদায়ন ও পদোন্নতিতে নীতিমালা যথাযথ অনুসরণ করা হয় না, এই অভিযোগ সত্য নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, প্রয়োজন ছাড়া পদায়ন-পদোন্নতি হয় না।
সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে ১৩ থেকে ২০তম গ্রেড (আগের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি) কর্মচারী নিয়োগে কমিটির সুপারিশ পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটি পিএসসির মাধ্যমে ১৩ থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীদের নিয়োগের সুপারিশ করেছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে তাদের সুপারিশ পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ফরহাদ হোসেন বলেন, প্রতিনিয়ত আমাদের বিভাগীয় ব্যবস্থা চলমান আছে। অভিযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। যদি কেউ কোনো কর্মকর্তা সম্পর্কে অভিযোগ দেয়, অভিযোগ আমরা আমলে নিয়ে তার বিরুদ্ধে ডিপি বা বিভাগীয় ব্যবস্থা চালু করি। প্রথমে প্রাথমিক তদন্তের মাধ্যমে অভিযোগের সত্যতা বোঝার চেষ্টা করি। এরপর বিভাগীয় ব্যবস্থা চালু হয়। তারপর শুনানি হয়, স্পট ভিজিট হয়, আমাদের টিম থাকে।
সংলাপে সভাপতিত্ব করেন বিএসআরএফের সভাপতি ফসিহ উদ্দীন মাহতাব। সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএসআরএফের সহ-সভাপতি এম এ জলিল মুন্না (মুন্না রায়হান), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহদী আজাদ মাসুম, সাংগঠনিক সম্পাদক তাওহীদুল ইসলাম, অর্থ সম্পাদক শফিউল্লাহ সুমন, দপ্তর সম্পাদক শাহাদাত হোসেন (রাকিব), প্রশিক্ষণ ও গবেষণা সম্পাদক ফারুক আলম, কার্যনির্বাহী সদস্য আসাদ আল মাহমুদ, ওবায়দুল্লাহ বাদল, মিজানুর রহমান চৌধুরী, মহসীনুল করিম লেবু, আয়নাল হোসেন প্রমুখ।