নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার কথায় কথায় সংবিধানের দোহাই দেয়। আজ রাষ্ট্রপতি দেশের বাইরে। সংবিধান অনুযায়ী কাউকে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব দিতে হয়। আসলে এই সংবিধান এক পরিবারের জন্য উৎসর্গ করা হয়েছে। সংবিধানের কথা বলে দেশকে সহিংস রাজনীতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে সরকার।
বুধবার (১৮ অক্টোবর) সরকার পতনের এক দফা দাবিতে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত জনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, তারা সংবিধানকে পুরোপুরি লঙ্ঘন করছে। এরা মুখে সংবিধানের কথা বলে, কিন্তু সংবিধানের মূল বিষয়গুলো সংশোধন করে তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা সংবিধানের এক-তৃতীয়াংশ একজন ব্যক্তি ও একটি পরিবারের জন্য সম্পূর্ণভাবে উৎসর্গ করে দিয়েছে। আমি আবারও বলছি, এই সরকার সম্পূর্ণ অবৈধ সরকার। এরা বলছে সংবিধানের বাইরে যাবে না। এরা সংবিধান কাটাছেঁড়া করে জনগণের সাথে প্রতারণা করেছে।
তিনি আরো বলেন, পরিষ্কার করে বলতে চাই। সামনে কয়েকটা দিন সময় আছে। এই পূজার ছুটিতে আপনারা সিদ্ধান্ত নিন, আপনারা কী করবেন। পদত্যাগ করে সসম্মানে সেফ এক্সিট নেবেন, নাকি জনগণ দ্বারা বিতাড়িত হবেন? আমরা আবার তাদের আহ্বান জানাই, জনগণের ভাষা বুঝতে পেরে পদত্যাগ করে শান্তিপূর্ণভাবে একটা নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠন করে নির্বাচন দিন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এ সরকার ক্ষমতায় আর নাই, এই সরকার আর ক্ষমতায় নাই। ভালোর ভালো এই কয়েকদিনে ক্ষমতা ছেড়ে দেন, বিদায় নেন, অন্যত্থায় ফয়সালা হবে রাজপথে।
বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, তাদের (আওয়ামী লীগ) পরিকল্পনা হচ্ছে আমরা যারা নির্বাচন করতে পারি, এই ধরনের সব ব্যক্তিকে সাজা দিয়ে যদি নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণা করতে পারে তাহলে তাদের মাঠ পরিষ্কার। সেই আগের মতোই তারা নির্বাচন করে নিয়ে যাবে। কতটা ভীত হলে তারা আজ এই ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে!
সরকার অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ফেসবুকে আজকের কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে এমন মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে প্রথম আলো জানিয়েছে এটা ফেইক নিউজ। এই সরকার জনগণের ভাষা বুঝে গেছে। তাই ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বিভিন্ন অকৌশল নিচ্ছে। তার একটি বড় অংশ সামাজিক মাধ্যমে ব্যবহার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চাচ্ছে। কিন্তু আজ লাখো মানুষের জনসমাবেশ প্রমাণ করেছে জনগণ তাদের প্রপাগান্ডায় বিশ্বাস করে না।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, এখান থেকে ঘরে ফিরে বসে থাকবেন না। ফিরে গিয়ে প্রত্যেকটি ঘরে ঘরে এই বার্তা পৌঁছাবেন বাংলাদেশ জেগে উঠেছে, আপনারা জেগে উঠেছেন? এই জাগরণের মধ্য দিয়ে দেশের মানুষ এই সরকারের পতন ঘটাবে।
বিএনপি মহসচিব বলেন, যখনই আমাদের সমাবেশ হয়, তখনই নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের মাত্রা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। আজকের সমাবেশকে কেন্দ্র ২৫০ জনেরও বেশি গ্রেফতার করা হয়েছে। এ থেকে প্রমাণ হয় সরকার ভীতু হয়েছে। এদের পায়ে কোনো মাটি নেই। ভয় থেকেই সরকার এগুলো করছে।
ফখরুল বলেন, আজকের এই সমাবেশে অনেক জেলা থেকে সাধারণ মানুষ ও দলীয় কর্মীরা ছুটে এসেছে। কারণ, তারা নতুন কর্মসূচি চায়। দেশব্যাপী উদগ্রীব হয়ে আছে, কখন এ সরকার বিদায় নেবে। আজকে হামলা-মামলা জনগণ ভয় পায় না। কোনোকিছু করে দেশের মানুষকে ঠেকিয়ে রাখা যাবে না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, খালেদা জিয়াকে গতকালও দেখতে গিয়েছিলাম। ডাক্তাররা বলেছেন- তাকে বাঁচাতে হলে অবিলম্বে বিদেশে সুচিকিৎসার কোনো বিকল্প নাই। যে মানুষটি আজীবন দেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করে গেছেন, তাকে বিনা চিকিৎসায় ধুকে ধুকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এ সরকার কতটা ভয়াবহ, নিষ্ঠুর!
আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে মিথ্যা মামলা দিয়ে ৯৬ জন নেতাকে সাজা দিয়েছে। সরকারের পরিকল্পনা হচ্ছে- তাদের সাজা দিতে পারলে মাঠ পরিষ্কার, কত ভীতু হলে ও কাপুরুষ হলে তারা তা করতে পারে। এরা ক্ষমতায় থাকলে শুধু রাজনীতি নয়, দেশ রসাতলে যাবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের মানুষ আপনাদের ক্ষমতায় দেখতে চায় না। রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য পাঁচ বছরে একদিনই জনগণ ভোটের অধিকার পায়, কিন্তু ২০১৪ ও ১৮ সালে সে অধিকারগুলো তারা কেড়ে নিয়েছে। এ সরকারের কোনো ভিত্তি নেই। এখনো বলছি- মানে মানে ক্ষমতা ছাড়ুন। আজকে মানুষ জেগে উঠেছে। এই জাগ্রত জনতা ফুঁসে ওঠার আগে জনগণের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন।
তিনি বলেন, এরা ২০১৪ সালে ১৫৪ জন এমপি বিনা ভোটে এমপি হয়েছে, ২০১৮ সালে রাতে ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় এসেছে। এবারো আবার সেই অপচেষ্টা করছে বিনা ভোটে নির্বাচন করার জন্য।
আগামী কর্মসূচি ঘোষণাকালে মির্জা ফখরুল বলেন, আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকয় মহাসমাবেশ করবে বিএনপি। এই কর্মসূচি যুগপৎ আন্দোলনের আংশিক কর্মসূচি। এই মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে আমাদের মহাযাত্রা শুরু হবে। এর সরকার পতন না করে আমরা ঘরে ফিরে যাব না। এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে অনেক বাধা বিপত্তি আসবে। এই প্রোগ্রাম হবে শান্তিপূর্ণ, আমাদের সকল কর্মসূচি হবে শান্তিপূর্ণ, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা অশান্তি সৃষ্টিকারী সরকারের পতন ঘটাবো।
ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক এবং দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব লিটন মাহমুদের যৌথ সঞ্চালনায় আয়োজিত ওই সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, বরকত উল্লাহ বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, হাবিবুর রহমান হাবিব, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এছাড়াও সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, সমাজকল্যাণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক আ ন ম সাইফুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।