চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি :
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এই সরকার জনগণের কাছে পরাজিত হয়ে এখন বেঁচে থাকার শেষ চেষ্টা করছে। আগামী দিনগুলোতে আপনাদের জন্য কঠিন সময় আসছে। বাংলাদেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। আপনাকে যেতে হবে। আপনারা কিভাবে যাবেন ঠিক করেন। একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে যাবেন নাকি জনগণ আপনাদের বিতাড়িত করবে। আমরা শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরে বিশ্বাস করি। শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণের ভোটের নির্বাচিত সংসদ ও নির্বাচন।
শুক্রবার (৪ আগস্ট) বিকেলে কাজীর দেউরী নুর আহম্মেদ সড়কে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও ডা. জোবায়দা রহমানকে সাজা দেওয়ার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির কেন্দ্রঘোষিত প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি অংশকে সঙ্গে নিয়ে যারা জনগণের লড়াই বন্ধ করার চেষ্টা করছে, আগামী দিনগুলোতে আপনাদের জন্য কঠিন সময় আসছে। বাংলাদেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। আপনাকে যেতে হবে। আপনি থাকতে পারবেন না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারি একটি অংশকে ব্যবহার করে থাকতে পারবেন না। ঢাকায় ২৮ জুলাই ১৫ থেকে ২০ লাখ মানুষ সমাবেশ করে একটি বার্তা দিয়েছে শেখ হাসিনা বিদায় হও।
তিনি আরো বলেন, বিএনপি অফিসে কত রাষ্ট্রদূত গেছে কোনোদিন দেখছেন ফুলের তোড়া নিয়ে দাঁড়াতে? আওয়ামী লীগ সকালে আমেরিকাকে গালি দেয়, বিকেলে ফুলের তোড়া নিয়ে হাজির হয়। আবার যখন তার পরের দিন তারা বুঝে যায়, আমেরিকা তাদের গণতন্ত্রবিরোধী, মানবতা-বিরোধী, ভোট চুরির বিরোধী। আবার তারা তাদের গালি দেয়।
আমীর খসরু বলেন, বিএনপি নাকি বিদেশিদের দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলাতে দেয়। আপনারা ফুলের তোড়া নিয়ে ওখানে কী গলাতে গিয়েছিলেন? আবার বের হয়ে এসে সুখবর দিচ্ছে রাষ্ট্রদূত এটা বলেনি, ওটা বলেনি। কী আনন্দ! তাহলে কে নাক গলালো? ফুলের তোড়া নিয়ে নাক গলাতে হয়? এই হচ্ছে আপনাদের দূর অবস্থা।
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমানকে কিছু করতে পারেননি, তাই জোবায়দা রহমানের পেছনে লেগেছেন। এখন শুধু জাইমা রহমানের অপেক্ষায়? এবার জাইমা রহমানকে নিয়ে সরকার কি ওঠে পড়ে লাগবে? বাংলাদেশের মানুষ তাদের অনুপস্থিতে আপনার বিদায়ের ঘণ্টা বাজিয়ে দিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, প্রথমে বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে মনে করেছিলেন ক্ষমতায় অব্যাহতভাবে আবার থাকবেন। তারপর তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে মনে করেছিলেন আপনাদের কাজ হয়ে গেছে। তারপরও আপনাদের সন্দেহ কাটছে না। আপনাদের ভয় কাটছে না। আপনাদের ভেতরে কম্পন শুরু হয়ে গেছে। খালেদা জিয়াকে জেলে দিয়েছেন, তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়েছেন। এখন ভয় পাচ্ছেন জোবায়দা রহমান যদি বাংলাদেশে আসে আপনাদের কী অবস্থা হবে। তারেক রহমান জনগণকে সঙ্গে নিয়ে শেখ হাসিনার পতনের যে ডাক দিয়েছেন সেটাই যথার্থ।
আমীর খসরু বলেন, ওই আওয়ামী সন্ত্রাসী ও আওয়ামী পুলিশ বাহিনীর একটি অংশ, সরকারি একটি অংশ এবং কিছু বিচারককে নিয়ে টিকে থাকার যে চেষ্টা করছে তা আর হবে না। আপনার সঙ্গে বাংলাদেশের কেউ নেই। জনগণ নেই। বিশ্বের গণতন্ত্রকামী মানুষ আপনার সঙ্গে নেই। বিশ্বের বিবেক আপনার সঙ্গে নেই। যারা লুটপাট ও হালুয়ারুটির ভাগ নিয়েছেন তারা কিছুটা লাফালাফি করছেন। হালুয়া রুটি যারা খেয়েছে তারা আরও খাওয়ার জন্য লাফালাফি করছে। এদের সংখ্যা বাংলাদেশের মানুষের এক শতাংশও হবে না। এই এক শতাংশ নিয়ে আপনি ৯৯ শতাংশ জনগণের বিরুদ্ধে টিকে থাকবেন? কীভাবে আপনি ভাবছেন এ কথাটি!
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া, জোবায়দা রহমান ও জাইমা রহমান এদের পথ রুখে দাঁড়াবার কোনো শক্তি বাংলাদেশে কারও নেই। বিচার বিভাগের নেই, আওয়ামী লীগের নেই। আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল নয়, এরা নগণের ওপর নির্ভরশীল নয়, এরা জনগণের ওপর বিশ্বাস করে না। এরা নির্ভরশীল বিচার বিভাগের ওপর, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু লোকের ওপর।
আমীর খসরু বলেন, আপনারা কীভাবে যাবেন ঠিক করেন। একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে যাবেন নাকি জনগণ আপনাদের বিতাড়িত করবে। আমরা কাউকে বিতাড়িত করার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। আমরা শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরে বিশ্বাস করি। শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণের ভোটের নির্বাচিত সংসদ ও নির্বাচন। এই কাজটাতে বিএনপি বিশ্বাস করে। এই কাজটা যদি আপনি করেন তাহলে খুব ভালো। আর যদি না করে গত নির্বাচনের মতো রাতের আঁধারে ভোট চুরি করে আবার ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করেন এবার কিন্তু প্রতিবাদ নয় প্রতিরোধ করব।
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের পরিচালনায় প্রতিবাদ সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এস এম ফজলুল হক,প্রধান বক্তা কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, কেন্দ্রীয় বিএনপির শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন। এছাড়া আরও বক্তব্য দেন মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ আজিজ, দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম, কর্ণফুলী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এস এম মামুন মিয়া প্রমুখ।