নিজস্ব প্রতিবেদক :
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সরকারের পরিবর্তন চাইলে আরেকটা নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। নির্বাচন ছাড়া সরকার পরিবর্তনের বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেই। যে পরিবর্তন হয়েছে সেটা গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে হয়েছে।
শুক্রবার (১৫ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউর দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি একথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি নেতারা আরাম আয়েশ করে সময় কাটাচ্ছেন। কর্মীদের আশা দিয়ে মাঠে নামিয়েছিল, সেই কর্মীরা এখন হতাশ। বিএনপিকর্মীরা নেতাদের ডাকে আন্দোলন করবে সেই অবস্থা নেই। এক কথায় বলব, বিএনপি এখন আন্দোলন করার সক্ষমতাও হারিয়ে ফেলছে।
তিনি বলেন, জনগণ বিএনপির সঙ্গে নেই, জনগণের আন্দোলনে নেই, জনগণ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আস্থাশীল। তার সততা, নেতৃত্ব এদেশের মানুষ মেনে নিয়েছে। ৭৫ এর পর দেশে সৎ, পরিশ্রমী, দক্ষ একজন নেতাও জন্ম হয়নি। কাজেই বাংলাদেশের মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আছেন।
শেখ হাসিনার প্রশংসা করে কাদের বলেন, জনগণ বিএনপির সঙ্গে নেই, জনগণ আন্দোলনে নেই, জনগণ শেখ হাসিনার ওপর খুশি। জনগণ প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে খুশি। এই দেশে ৭৫ পরবর্তীকালে শেখ হাসিনার চেয়ে দক্ষ, জনপ্রিয় আর কোনো নেতার জন্ম হয়নি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিব্রতকর কোনো বক্তব্য যে-ই দেবেন দায়িত্বশীল যারা, তাদের দায়িত্ব নিয়েই কথা বলা সমীচীন। সরকারের জন্য বিব্রতকর এমন বক্তব্য থেকে আমাদের সব দায়িত্বশীলদের বিরত থাকা উচিত।
বিএনপি নেতাদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিএনপির নেতারা এখন আরাম আয়েশে ছুটি কাটাচ্ছে। আর তাদের কর্মী বাহিনী যাদের তারা মাঠে নামিয়েছিল ক্ষমতা খুব সন্নিকটে এমন আশা দিয়ে সেই কর্মীরা এখন সারা দেশে হতাশা। বিএনপি আন্দোলনের সক্ষমতা হারিয়েছে।
দ্রব্যমূল্য এখনো নিয়ন্ত্রণে না আসা নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, সরকার এখানে একশনে আছে কি না? কাজ করে যাচ্ছে, ফল এক সময় আসবে। কাজে তো আন্তরিকতা, চেষ্টা কোনো রকম কমতি নেই। বাংলাদেশসহ আজকে সারাবিশ্বের যে অবস্থা, বাজার পরিস্থিতি বিশ্বের কোথাও ভাল নেই। বিশ্বের সব কিছু আগের মত সস্তা সুলভ এটা মনে করার কারণ নেই। সারা বিশ্বেই বাজার পরিস্থিতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়বে। সারা বিশ্ব এখন একটা গ্লোবাল ভিলেজ। এখন বিশ্ব বাজারে দাম বাড়লে এর প্রভাব থেকে মুক্ত থাকার কোন কারণ নেই।
সিন্ডিকেট ভাঙবে জানিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, এর সঙ্গে কারা কারা জড়িত এটা ক্ষতিয়ে দেখার বিষয় আছে। যারা আন্দোলন করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে, এই সিন্ডিকেট সরকার বিরোধীতা থেকে হচ্ছে কি না ক্ষতিয়ে দেখতে হবে। পরিবহন চাদাবাজি বন্ধের জন্য চেষ্টা চলছে। প্রশাসনিক ভাবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সবাই কাজ করে যাচ্ছে যেনো নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।
টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকেও সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেননি সরকার। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি নাকি ব্যর্থ? এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ব্যর্থও না, জিম্মিও না। দেশটা অনেকের চেয়ে ভালো চলছে। সারা বিশ্বের যে অবস্থা, আজকে শুধু ডলারের দাম না…. সারা বিশ্বের যে টালমাটাল অবস্থা, আমি বার বার আপনাদের বলতে চেয়েছি সারা বিশ্বেই সমস্যা চলছে। বাংলাদেশ কোনো বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয় যেখানে আমরা আপনাদের খুব সুখে শান্তিতে রাখতে পারব। অন্যেরা ভালো নেই, আমরাও ভালো নেই। সবাই একযোগে ভালো থাকার চেষ্টা আন্তর্জাতিকভাবেও চলছে।
পরিবহনের চাঁদাবাজির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, পরিবহনের চাঁদাবাজি সারা জনম ধরে চলে আসছে। এটা নতুন নয়। তবে এ চাঁদাবাজিটা বন্ধ করার জন্য চেষ্টা চলছে। আইন প্রয়োগকারী লোকজনও তৎপর। প্রশাসন ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সবাই কাজ করে যাচ্ছে। যাতে করে এ চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। একেবারে বন্ধ করা যাবে এ কথা আমি বলব না। এই কালচারটা হাঠাৎ করে বন্ধ করা যাবে না। নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
বাংলাদেশে পরিবহনের চাঁদাবাজি কবে নিয়ন্ত্রণে আসবে এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আপনি কি বাংলাদেশকে আলাদা একটি স্বর্গরাজ্য ভাবেন?
ড.ইউনুসকে হয়রানি করা হচ্ছে বলে একজন কংগ্রেসম্যান যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছেন, সে বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্টের সম্পর্ক আরও নিবিঢ় করার চেষ্টা চলছে। ড. ইউনুসকে হয়রানি করা হচ্ছে এ মর্মে মন্তব্য করেছেন কংগ্রেসম্যান। বলা হচ্ছে তার এমন মন্তব্য সম্পর্কে প্রভাব পড়বে, কেন প্রভাব পড়বে? আমার দেশের আইন, আমার দেশের বিচার ব্যবস্থায় কোনো ব্যক্তি যদি তার কৃত কর্মের জন্য শাস্তির মুখোমুখি হয়, বিচারের মুখোমুখি হয় সে অবস্থায় আমার দেশের বিচার ব্যবস্থার যে স্বাধীনতা সে স্বাধীনতার উপর বাইরের কারো তো কোন কিছু বলার অধিকার থাকতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে সাবেক প্রেসিডেন্টের ওপর এতগুলো চার্জ এনে তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা চলছে। সেখানে ২০১৩ সাল থেকে মামলায় হাজির দিচ্ছেন তিনি। তো সেখানে রেজাল্ট কী হবে, রায় ঘোষণার আগে তো আমরা বলতে পারছি না। সেখানে সংক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ড. ইউনুসের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। সে মামলা চলছে। তাহলে এর মধ্যে বিচার ব্যবস্থা বন্ধুত্বের মধ্যে সম্পর্ক কী?
ইফতারিতে খেজুরের পরিবর্তে বড়ই শিল্পমন্ত্রীর এমন বক্তব্যে আওয়ামী লীগ বিব্রত বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ইফতারিতে খেজুরের পরিবর্তে বরই শিল্পমন্ত্রীর এমন বক্তব্যে আওয়ামী লীগ বিব্রত। দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের দায়িত্ব নিয়ে কথা বলা উচিত।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, আফজাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ, উপ-দপ্তর সায়েম খান প্রমুখ।