নিজস্ব প্রতিবেদক :
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকারের দেয়া হতাহতের তালিকা জাতীয় পার্টি বিশ্বাস করে না। নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠন করে ছাত্র হত্যায় জড়িত সকল সরকারি কর্মকর্তা ও উস্কানিদাতাদের বিচার নিশ্চিত করা উচিত।
রোববার (২৮ জুলাই) বনানীতে জাপা চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি এসব কথা বলেন।
মুজিবুল হক বলেন, হতাহতের যে পরিসংখ্যান দেওয়া হচ্ছে, সংখ্যা এরচেয়ে অনেক বেশি হবে। ছাত্রদের ন্যায্য দাবি বল প্রয়োগের মাধ্যমে দমনকে তীব্র নিন্দা জানায় জাতীয় পার্টি। ছাত্র আন্দোলনে রংপুরে নিহত আবু সাঈদ -এর মামলার এজাহারে প্রকৃত কারণ উল্লেখ না করার নিন্দা জানানো হয়েছে যৌথসভায়।
তিনি বলেন, কেপিআইভুক্ত সরকারি স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। তারা এর দায় এড়াতে পারে না। এ জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রীদের পদত্যাগ দাবি করছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারের কোনো মন্ত্রীর বাসায়তো হামলা হয়নি। তারা তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে, কিন্তু সরকারি স্থাপনার গুরুত্ব দেয়নি।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, স্বাধীনতা আন্দোলন হয়েছিল পশ্চিম পাকিস্তানিদের শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে। স্বাধীনতার পর দেশের মানুষ ভেবেছিল শোষণ ও বৈষম্যমুক্ত একটি দেশ হবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। কোটা সংস্কার আন্দোলন একটি অরাজনৈতিক ও অধিকার আদায়ের আন্দোলন হলেও এটি আর ছাত্রদের মধ্যে সীমাবদ্ধ আন্দোলন ছিল না। এক পর্যায়ে এটি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রুপ নিয়েছে।
চুন্নু বলেন, দীর্ঘদিনের শোষণ, বঞ্চনা, গণতন্ত্রহীনতায় মানুষের মধ্যে একটি চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছিল। শিক্ষার্থীদের অহিংস আন্দোলনের ওপর অত্যাচার শুরুর পর থেকে তাদের রক্ষা করার জন্য জনগণও তাদের সাথে নেমে পড়ে। ছাত্রদের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন, অসংখ্য ছাত্রকে হত্যা করা হয়েছে। আহত করা হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি। এমন স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন আমরা অতীতে দেখিনি।
তিনি বলেন, এমন বর্বর ও নিপীড়নমূলক হত্যাকাণ্ড জাতি কখনও প্রত্যক্ষ করেনি, যার কারণে এ আন্দোলনে স্কুলের ছাত্র থেকে শুরু করে সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণ দেখা যায়।
পার্টির যৌথ সভায় নয়টি সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান চুন্নু। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, জাতীয় পার্টির এই যৌথ সভা সর্বসম্মতভাবে ছাত্রদের অধিকার আদায়ের বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনের প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন জ্ঞাপন করে। সেই সঙ্গে চলমান অহিংস্র ছাত্র আন্দোলনের প্রতি জাতীয় পার্টির সমর্থন অব্যাহত থাকবে।
এছাড়া, সভায় ছাত্রদের অহিংস্র আন্দোলনে নিহত ছাত্র-জনতার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে পরিবার-পরিজনের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়।
ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের মামলার এজাহারে প্রকৃত মৃত্যুর কারণ না দিয়ে মিথ্যা এজাহার দাখিলের বিষয়ে নিন্দা জানানো হয়।
নিহত ছাত্র/ছাত্রীরা ‘বীর মুক্তিসেনা’ হিসেবে আখ্যায়িত হবে এবং একটি নিরপেক্ষ কমিশন গঠনের মাধ্যমে প্রকৃত নিহতের তালিকা প্রকাশ করার দাবি জানানো হয়।
সভায় ছাত্র হত্যার সঙ্গে জড়িত সব সরকারি কর্মকর্তা ও উসকানিদাতাকে আইনের আওতায় এনে বিচারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের হয়রানি/নির্যাতন না করার আহ্বান জানানো হয়। ছাত্রদের নামে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার এবং গ্রেপ্তার সকল ছাত্রদের অনতিবিলম্বে মুক্তির দাবি জানানো হয়।
সভা মনে করে কেপিআইভুক্ত স্থাপনাসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহে নিরাপত্তা প্রদানের দায়িত্ব সরকারের। সরকার এই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। এই দায় সরকার এড়াতে পারে না।
এক প্রশ্নের জবাবে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, সহিংসতার নামে সরকারি বিভিন্ন স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের দায় স্বীকার করে চলে যাওয়া উচিত।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোন মন্ত্রী বা এমপির বাড়িতে তো হামলা হয়নি। সেখানে যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু সরকারি স্থাপনাগুলো রক্ষায় তাদের কোনো উদ্যোগ ছিল না। আন্দোলনরতদের গ্রেপ্তারের নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেপ্তার বাণিজ্য চালাচ্ছে।
এর আগে, পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় নেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের সভাপতিত্বে জাপার জরুরি যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। যৌথ সভায় বক্তব্য রাখেন জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম ফয়সল চিশতী, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া ও আলমগীর সিকদার লোটন প্রমুখ।