Dhaka সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সরকারের আচরণে মনে হচ্ছে গরিব শিক্ষকরা এই দেশের নাগরিক নন : রিজভী

নিজস্ব প্রতিবেদক :

নন–এমপিও শিক্ষকদের আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, এই সরকারের আচরণ দেখে মনে হয় দেশের গরিব শিক্ষকরা যেন এই দেশের নাগরিকই নন।

সোমবার (২৫ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সরকার প্রতিশ্রুত স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সচল সব নন এপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির দাবিতে অবস্থানরত শিক্ষকদের প্রতি একাত্মতা জানাতে এসে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী দাবি করেন, বিএনপি বিশ্বাস করে প্রধান উপদেষ্টা একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে সক্ষম হবেন। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু উপদেষ্টার আচরণ তাকে প্রশ্নের মুখে ফেলছে।

তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পারবেন বলে আমরা এখনও বিশ্বাস করি। কিন্তু সরকারের ভেতরের কিছু ব্যক্তির আচরণ দেখে মনে হয় তারা নিজেদের ক্ষমতা প্রমাণের প্রতিযোগিতায় নেমেছেন।’

রিজভী বলেন, ‘গরিব মানুষের সন্তানদের পড়ান যেসব শিক্ষক, তারা নিজেই আজ অনাহারে–অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। অথচ সরকার তাদের সমস্যাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক।’

এসময় তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘শিক্ষকদের প্রতি এই উপেক্ষা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে গভীর সংকটে ফেলবে। তারা দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে তোলেন। তাদের অধিকার নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব।’

রুহুল কবীর রিজভী বলেন, স্কুল-কলেজ-মাদরাসার শিক্ষিত মানুষরা আজ ফুটপাতে বসে অনশন করছেন। কিন্তু সরকার-প্রশাসনের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি করে আসছি । অথচ সেই সরকারের আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণেই শিক্ষকরা আজ অনাহারে জীবনযাপন করছেন। এটা শুধু সরকারের লজ্জা নয়, জাতির লজ্জা।

তিনি বলেন,অন্তর্বর্তী সরকারকে সব রাজনৈতিক দল সমর্থন দিয়েছে। সব রাজনৈতিক দল মনে করেছে এ সরকারের অধীনে একটি অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। সেই বিশ্বাস এখনো আছে ড. ইউনূসের ওপরে। কিন্তু আপনার অন্যান্য উপদেষ্টারা জনগণের স্বার্থে, জনগণের চিন্তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করছেন না। এটা কোনো কার্যকর সরকারের কাজ হতে পারে না।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে ভারতের একটি প্রাইভেট কোম্পানির সঙ্গে হওয়া বিদ্যুৎচুক্তির সমালোচনা করে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, এ চুক্তি পৃথিবীর কোথাও হয়নি। সবচেয়ে বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনতে বাধ্য হয়েছে বাংলাদেশ। বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও বেসরকারি কোম্পানিকে দিতে হচ্ছে ক্যাপাসিটি চার্জ। আর নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা ফুটপাতে অনশন করেন। তাদের জন্য সরকারের কোনো টাকাই নেই। তাদের জন্য কোনো নীতিমালা তৈরি হয় না।

তিনি আরও বলেন, অর্থ উপদেষ্টার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি কখনো গরিব মানুষের পক্ষে থাকেননি। সরকার গরিব মানুষের জন্য হলেও, এ সরকার গরিব মানুষের দিকে তাকায় না। বরং গরিব মানুষের ওপর কীভাবে স্টিমরোলার চালানো যায়, আজকে আমি সেটির নমুনা দেখলাম। কত হাজার হাজার কোটি টাকা তো লোপাট হয়ে গেছে, শতশত কোটি টাকা এখন কয়েকজনের বাড়িতে খোঁজ করলেই তো পাওয়া যায়। সরকারও তো কতদিকে কত কাজে টাকা দিচ্ছে। তাহলে শিক্ষকদের জন্য টাকা খরচ করতে অসুবিধা কোথায়। কৃষি উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের ওপর ৮৩ শতাংশ কর বাড়ানো হয়েছে। এতে সারের দাম বাড়বে, কৃষক বিপর্যস্ত হবে। সরকার যে গরিববান্ধব নয়—এটাই তার প্রমাণ।

রিজভী অভিযোগ করে বলেন, আমলাতান্ত্রিক লালফিতার জটিলতা শিক্ষা খাতকে জর্জরিত করে রেখেছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বেসরকারি শিক্ষকেরাও ভালো বেতন পান। কিন্তু বাংলাদেশে নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা বছরের পর বছর দাবি জানিয়ে আসলেও কোনো সমাধান হয় না।

তিনি অবিলম্বে নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিওভুক্ত করার দাবি জানিয়ে বলেন, শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি মেনে নেওয়া হোক। তারা মানুষ গড়েন, অথচ নিজেরাই অনাহারে অনশন করছেন—এটা জাতির জন্য লজ্জাজনক।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

সরকারের আচরণে মনে হচ্ছে গরিব শিক্ষকরা এই দেশের নাগরিক নন : রিজভী

প্রকাশের সময় : ০৬:০৬:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক :

নন–এমপিও শিক্ষকদের আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, এই সরকারের আচরণ দেখে মনে হয় দেশের গরিব শিক্ষকরা যেন এই দেশের নাগরিকই নন।

সোমবার (২৫ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সরকার প্রতিশ্রুত স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সচল সব নন এপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির দাবিতে অবস্থানরত শিক্ষকদের প্রতি একাত্মতা জানাতে এসে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী দাবি করেন, বিএনপি বিশ্বাস করে প্রধান উপদেষ্টা একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে সক্ষম হবেন। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু উপদেষ্টার আচরণ তাকে প্রশ্নের মুখে ফেলছে।

তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পারবেন বলে আমরা এখনও বিশ্বাস করি। কিন্তু সরকারের ভেতরের কিছু ব্যক্তির আচরণ দেখে মনে হয় তারা নিজেদের ক্ষমতা প্রমাণের প্রতিযোগিতায় নেমেছেন।’

রিজভী বলেন, ‘গরিব মানুষের সন্তানদের পড়ান যেসব শিক্ষক, তারা নিজেই আজ অনাহারে–অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। অথচ সরকার তাদের সমস্যাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক।’

এসময় তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘শিক্ষকদের প্রতি এই উপেক্ষা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে গভীর সংকটে ফেলবে। তারা দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে তোলেন। তাদের অধিকার নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব।’

রুহুল কবীর রিজভী বলেন, স্কুল-কলেজ-মাদরাসার শিক্ষিত মানুষরা আজ ফুটপাতে বসে অনশন করছেন। কিন্তু সরকার-প্রশাসনের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি করে আসছি । অথচ সেই সরকারের আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণেই শিক্ষকরা আজ অনাহারে জীবনযাপন করছেন। এটা শুধু সরকারের লজ্জা নয়, জাতির লজ্জা।

তিনি বলেন,অন্তর্বর্তী সরকারকে সব রাজনৈতিক দল সমর্থন দিয়েছে। সব রাজনৈতিক দল মনে করেছে এ সরকারের অধীনে একটি অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। সেই বিশ্বাস এখনো আছে ড. ইউনূসের ওপরে। কিন্তু আপনার অন্যান্য উপদেষ্টারা জনগণের স্বার্থে, জনগণের চিন্তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করছেন না। এটা কোনো কার্যকর সরকারের কাজ হতে পারে না।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে ভারতের একটি প্রাইভেট কোম্পানির সঙ্গে হওয়া বিদ্যুৎচুক্তির সমালোচনা করে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, এ চুক্তি পৃথিবীর কোথাও হয়নি। সবচেয়ে বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনতে বাধ্য হয়েছে বাংলাদেশ। বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও বেসরকারি কোম্পানিকে দিতে হচ্ছে ক্যাপাসিটি চার্জ। আর নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা ফুটপাতে অনশন করেন। তাদের জন্য সরকারের কোনো টাকাই নেই। তাদের জন্য কোনো নীতিমালা তৈরি হয় না।

তিনি আরও বলেন, অর্থ উপদেষ্টার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি কখনো গরিব মানুষের পক্ষে থাকেননি। সরকার গরিব মানুষের জন্য হলেও, এ সরকার গরিব মানুষের দিকে তাকায় না। বরং গরিব মানুষের ওপর কীভাবে স্টিমরোলার চালানো যায়, আজকে আমি সেটির নমুনা দেখলাম। কত হাজার হাজার কোটি টাকা তো লোপাট হয়ে গেছে, শতশত কোটি টাকা এখন কয়েকজনের বাড়িতে খোঁজ করলেই তো পাওয়া যায়। সরকারও তো কতদিকে কত কাজে টাকা দিচ্ছে। তাহলে শিক্ষকদের জন্য টাকা খরচ করতে অসুবিধা কোথায়। কৃষি উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের ওপর ৮৩ শতাংশ কর বাড়ানো হয়েছে। এতে সারের দাম বাড়বে, কৃষক বিপর্যস্ত হবে। সরকার যে গরিববান্ধব নয়—এটাই তার প্রমাণ।

রিজভী অভিযোগ করে বলেন, আমলাতান্ত্রিক লালফিতার জটিলতা শিক্ষা খাতকে জর্জরিত করে রেখেছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বেসরকারি শিক্ষকেরাও ভালো বেতন পান। কিন্তু বাংলাদেশে নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা বছরের পর বছর দাবি জানিয়ে আসলেও কোনো সমাধান হয় না।

তিনি অবিলম্বে নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিওভুক্ত করার দাবি জানিয়ে বলেন, শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি মেনে নেওয়া হোক। তারা মানুষ গড়েন, অথচ নিজেরাই অনাহারে অনশন করছেন—এটা জাতির জন্য লজ্জাজনক।