কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি :
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকারপ্রধান খালি হাতে দেশে ফিরে এসেছেন। অনেক চেষ্টা করেছেন স্যাংশন তুলে নিতে পারেননি, তাদের কথা কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শুনেছে? না। তারা প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে একটা একতরফা নির্বাচন করে নিতে, কিন্তু পারবে না।
বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার কালকচুয়ায় কুমিল্লা-ফেনী-মিসরাই-চট্টগ্রাম তারুণ্যের রোডমার্চের প্রারম্ভিক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, শেখ হাসিনা আমেরিকা থেকে উইড়া আসছে খালি হাতে। তারা আবারও আগের রাতে ভোট করার পাঁয়তারা করেছে। তারা (আমেরিকা) কি সাড়া দিছে? দেয়নি। আজ সব গণতান্ত্রিক শক্তি একজোট হয়েছে। কথা পরিষ্কার, নির্বাচন হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। আজকে তারা ভয় দেখায়। ভয়ে কোনও কাজ হবে না।
তিনি বলেন, উন্নয়নের নামে লুট করেছে, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের মতো আইন করে কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। ভোটের অধিকার হরণ করেছে। বিচার ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শেষ করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার থাকলে দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে। কথা পরিষ্কার-হাসিনার অধীনে আমরা নির্বাচনে যাব না।
তিনি আরো বলেন, ভোট চুরি আর করতে দেওয়া হবে না। দাবি একটাই আমরা সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে চাই। রোড মার্চের মধ্য দিয়ে সরকারকে জানিয়ে দিচ্ছি এখনও সময় আছে পদত্যাগ করেন, নয় তো জনগণ জানে কীভাবে ক্ষমতা থেকে নামাতে হয়।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, কুমিল্লার রাজপথ দখল হয়ে গেছে। ধীরে ধীরে সব দখল হবে। এখনও সময় আছে পদত্যাগ করুন। জনগণ আর কোনো স্বৈরাচার দেখতে চায় না।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে ডিমের ডজন ১৫০টাকা, বাচ্চাদের খাওয়াতে পারি না। আজকে লুটপাটের সরকার আমাদের বুকের ওপর বসে আছে। আজ খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে দিচ্ছে না। তারা জানে খালেদা জিয়া সুস্থ হয়ে ফিরলেই তারা শেষ। বাংলাদেশের গণতন্ত্র থাকবে কী থাকবে না এবার নির্ধারণ হবে। তারা নাকি উন্নয়ন করছে। তারা আজ রূপপুরে ইউরেনিয়াম নিয়ে আসছে। ইউরেনিয়ামের কারণে মাইলের পর মাইল ধ্বংস হয়ে যাবে। কোনও নিরাপত্তা বিধান না করে আজ দুর্নীতির করার জন্যই এমন প্রকল্প নিয়ে আসছে সরকার।
তিনি বলেন, তারা আমাদের কথা বলতে দেয় না, কথা বললেই মামলা। তারা আন্দোলনে ২২ জনকে গুলি করে মেরেছে, ৭০০ মানুষকে গুম করেছে, সহস্র মানুষকে হত্যা করেছে। আমাদের দাবি একটাই, আমরা ভোট দিতে চাই। শেখ হাসিনার অপর নাম কী? ভোট চোর। এই রোড মার্চের মাধ্যমে সরকারকে জানিয়ে দিচ্ছি, আপনি পদত্যাগ করতে হবে। নাহলে জনগণ জানে আপনাদের কীভাবে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা জানেন, আমাদের প্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ। এ অবৈধ সরকার তাকে বিদেশ যেতে দিচ্ছে না। এই সরকার জানে, তিনি যদি সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে আসেন, তবে তারা ক্ষমতায় থাকতে পারবে না।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ভয় দেখায়, কোনো ভয়ে কি কাজ হবে? ভয় দেখিয়ে কোনো কাজ হবে না। আমরা এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবো না। কোনো নির্বাচন হবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়ে অটল থাকতে হবে। মিথ্যা মামলার সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। রাজপথ দখল করে এসবের ফয়সালা করতে হবে। বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করেন, সরকার বিদেশ থেকে ধ্বংসাত্মক ইউরোনিয়াম নিয়ে এসেছে। এগুলো ভোট চুরির প্রকল্পের অংশ।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, লাফিয়ে লাফিয়ে স্লোগান দিলে হবে না, রাজপথ দখলে রাখতে হবে। বন্ধুরা, বাবারা, ছোট ছোট ভাইয়েরা আমাদের জেগে উঠতে হবে। রাজপথ দখল করে সরকার হটাতে হবে।
সাধারণ মানুষকে হুমকির মধ্যে রেখে শুধুমাত্র চুরি করতে পাবনার রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এরা (সরকার) বলে অনেক উন্নয়ন করিছি। তারা উড়াল সেতু বানিয়েছে, টানেল বানিয়েছে। পাবনার রূপপুরে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য ইউরিনিয়াম নিয়ে আসা হয়েছে। ভয়ংকর এই কেমিকেলের যদি বিস্ফোরণ ঘটে, তাহলে মাইলের পর মাইল ধ্বংস হয়ে যাবে। বছরের পর বছর, প্রজন্মের পর প্রজন্ম মানুষ সেখানে ভুগতে থাকবে।
জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাগিতে এখনো মানুষ ভুগছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, চেরনোবিলে (তৎকালীন সভিয়েত ইউনিয়ন, বর্তমান ইউক্রেন) বিস্ফোরণে সেখানে মাইলের পর মাইল ধ্বংস হয়েছে, অসংখ্য মানুষ মারা গেছে। কোনো রকম ব্যবস্থা-ট্যাবস্থা (নিরাপত্তা) না করে এই সরকার শুধুমাত্র চুরি করার জন্য এ ধরনের প্রকল্প নিয়েছে, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে তাদের হুমকির মধ্যে রাখছে।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক হাজী আমিন উর রশীদ ইয়াসিনের সভাপতিত্বে এ সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বিশেষ অতিথি বরকত উল্লাহ বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, মো. শাহাজাহান। বক্তব্য দেন- কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিসহ কেন্দ্রীয়-স্থানীয় নেতারা।