নিজস্ব প্রতিবেদক :
সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মানুষের প্রত্যাশার বাংলাদেশ গড়া সম্ভব বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
শনিবার (৯ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলের উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অডিটরিয়ামে ড্যাবের জাতীয় সম্মেলন ২০২৫-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পথ ধরে ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট স্বৈরাচারের বিদায়ের পর মানুষ বুক ভরে নিশ্বাস নিয়েছিল। স্বৈরাচারের বিদায়ে মানুষের সামনে বাংলাদেশকে নতুন করে বিনির্মাণের প্রত্যাশা জেগে ওঠে। আমরা বিশ্বাস করি, সবাই মিলে চেষ্টা করলে মানুষের সেই প্রত্যাশার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারব।
তিনি বলেন, দেশের মানুষ যারা বিএনপিকে সমর্থন করেন এবং যারা নিরপেক্ষ, তারাও অধিকাংশ চাওয়া আমাদের কাছে তুলে ধরেন। তারা মনে করেন, বিএনপি উদ্যোগ গ্রহণ করবে। আগামী দিনে বিএনপির নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। এ কারণে মানুষ বিএনপির কাছে ভালো কিছু প্রত্যাশা করে, একটি ভালো পরিবর্তন আনার। আমাদেরকে সেই শুরুটা করতে হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এক বছর আগে বহুল প্রত্যাশিত পরিবর্তন হয়েছে দেশে। ৫ তারিখে দেশের মানুষ বুক ভরে শ্বাস নিতে পেরেছে। মানুষ চান, সামনের দিনগুলো ভালো হোক। বাস্তবতা বলছে, সাথে সাথে তো সব সম্ভব হবে না, কিন্তু উদ্যোগ তো গ্রহণ করতে হবে, চেষ্টা করতে হবে।
চিকিৎসক সমাজের কাছে তার চাওয়া আছে জানিয়ে বলেন, আমাদের ৩১ দফায় স্বাস্থ্য খাতের একটা দফা আছে, জনগণের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠনে সমর্থন হলে আপনাদের সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। কারণ, শুধু সরকার বা দলের নেতাদের দিয়ে তা সম্ভব নয়। আমাদের এটা বাস্তবায়ন করতে এখানে উপস্থিত ৩ হাজার ১১৭ জন কাউন্সিলরসহ ড্যাবের সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।
এ সময় তিনি বলেন, দেশ আমাদের সবার। সবাইকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশের ভালো পরিবর্তন প্রত্যাশা করে প্রতিটি নাগরিক। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দেশের মানুষ বুক ভরে শ্বাস নিতে পেরেছে। মানুষ চায় সামনের দিনগুলো যেন ভালো হয়। ৫ আগস্টের পর নিরপেক্ষ মানুষও বিএনপির কাছে ভালো কিছুর পরিবর্তন প্রত্যাশা করে সবচেয়ে বেশি। তাই দলের মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চা বাড়াতে হবে।
তারেক রহমান বলেন, গণতন্ত্রের ভীতকে ধীরে ধীরে শক্তিশালী করতে হবে। সঠিক ও স্বচ্ছ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারলে জবাবদিহিতা ও গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করা সম্ভব।
রাষ্ট্র পুনর্গঠনে ৩১ দফা বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন জানিয়ে তিনি বলেন, যত সংস্কার নিয়ে কথা হচ্ছে, আড়াই বছর আগে সমমনা দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপিই সেসব জাতির কাছে উপস্থাপন করেছিল। জনগণের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করতে পারলে ৩১ দফা বাস্তবায়ন করা হবে সবাইকে সঙ্গে নিয়েই।
তারেক রহমান বলেন, একজন কাউন্সিলর যেভাবে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ড্যাবকে গঠন করবেন। ঠিক সেভাবেই জেলাগুলোতেও যারা প্রান্তিক কাউন্সিলর আছেন তাদেরও সরাসরি ভোটের মাধ্যমে সাংগঠনিক কমিটিগুলো গঠন করতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এই দেশে বাকশাল থেকে বহু দলীয় গণতন্ত্র চালু করেছেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এই দেশকে সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রক্রিয়াতে নিয়ে এসেছেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত এই চেয়ারম্যান বলেছেন, আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে- আমাদের নেতারা যে পথ দেখিয়ে গেছেন, সেই লিগ্যাসি আমাদেরকে কন্টিনিউ করতে হবে। গণতন্ত্রের ভিতকে মজবুত করে গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশের সকল পর্যায়ে স্থানীয় পর্যায় থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত হতে হবে। এবং অবশ্যই দলের ভেতরে সকল পর্যায় আমাদেরকে চেষ্টা করতে হবে।
চিকিৎসকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ফরিদ সাহেব আছেন, একটি টিম গত আট বছর ধরে আমার মায়ের চিকিৎসা দিয়েছেন। সন্তান হিসেবে, পরিবারের সদস্য হিসেবে আমরা যা করতে পারিনি, ক্ষেত্রবিশেষে আপনারা আরও বেশি করেছেন। এ জন্য আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এছাড়া গত এক যুগের বেশি সময় ধরে অসংখ্য নির্যাতিত মানুষকে চিকিৎসা দিয়েছেন, তাদের পক্ষ থেকেও কৃতজ্ঞতা জানাই।
রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরে গণতন্ত্রের চর্চা হয় না- এমন মন্তব্য পুরোপুরি সঠিক নয় দাবি করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আজকের ড্যাবের কাউন্সিল প্রমাণ করে, দলগুলোর ভেতরে গণতন্ত্রের চর্চা হয় না- এ কথা পুরোপুরি ঠিক নয়। আগামী দুইদিনে তিনি দুই জেলার সাংগঠনিক সম্মেলনে যোগ দেবেন বলেও জানান।
দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, লন্ডনে রাষ্ট্রব্যবস্থায় জবাবদিহি আছে। এখানে চিকিৎসক নির্যাতনের শিকার হলে ন্যায়বিচার পান, আবার রোগী বা অন্য কেউ সেবা না পেলে তিনিও ন্যায়বিচার পান। বাংলাদেশে সেই জবাবদিহির ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাকশাল থেকে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করেছেন উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, আমাদের দেশনেত্রী খালেদা জিয়া স্বৈরাচার বিদায় করে সংসদীয় গণতন্ত্র চালু করেছেন। আমাদের নেতারা যে পথ দেখিয়েছেন, সেই উত্তরাধিকার কন্টিনিউ (চলমান) রাখতে হবে। গণতন্ত্রের ভিত মজবুত করে গড়ে তুলতে হবে। স্থানীয় পর্যায় থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায় এবং অবশ্যই দলের ভেতরে সব পর্যায়ে গণতন্ত্র গড়ে তুলতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ড্যাব সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ। এতে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ।