Dhaka রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সমৃদ্ধ এশিয়া গড়তে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরির আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

এশীয় দেশগুলোকে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ও যৌথ সমৃদ্ধির জন্য একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) চীনের হাইনানে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, পরিবর্তনশীল এ বিশ্বে এশীয় দেশগুলোর ভাগ্য পরস্পরের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। আমাদের অবশ্যই একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে- যা অভিন্ন ভবিষ্যৎ এবং যৌথ সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাবে।

আর্থিক সহযোগিতা প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এশিয়াকে অবশ্যই একটি টেকসই অর্থায়ন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে এবং আঞ্চলিক উন্নয়ন ব্যাংক (এমডিবি) ও অনুরূপ প্রতিষ্ঠানগুলোর এই প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দেওয়া উচিত।

তিনি বলেন, আমাদের এমন নির্ভরযোগ্য তহবিল দরকার যা আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করবে।

বাণিজ্য সহযোগিতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এশিয়া এখনও বিশ্বের অন্যতম কম সংযুক্ত অঞ্চল।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এ দুর্বল সংযুক্তি বিনিয়োগ ও বাণিজ্যকে বাধাগ্রস্ত করছে। আমাদের অবশ্যই বাণিজ্য সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য দ্রুত কাজ করতে হবে।

খাদ্য ও কৃষি সহযোগিতা বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এশীয় দেশগুলোকে অবশ্যই সম্পদ-সাশ্রয়ী কৃষিকে উৎসাহিত এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় উৎপাদন বাড়াতে হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, জলবায়ু সংকট মানবজাতির অস্তিত্বের জন্য হুমকি। জলবায়ু দুর্যোগজনিত আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থা এবং বহুপাক্ষিক সহযোগিতার ধারণা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তন তীব্রতর হচ্ছে। ঋণের বোঝা অসহনীয় হয়ে উঠছে এবং মানবিক সংকট ক্রমশ জটিল হচ্ছে। উন্নয়ন সহযোগিতার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা দুর্বল হচ্ছে, যা বৈশ্বিক কর্মকাণ্ডে গুরুতর ঘাটতির সৃষ্টি করছে।

তিনি বলেন, বিশ্বের ৬০ শতাংশ জনগণ এবং বৈশ্বিক জিডিপির ৫৫ শতাংশ ধারণকারী এশিয়া এই পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। নতুন নতুন নীতি, নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং প্রযুক্তি শাসন ব্যবস্থা ও অর্থনীতিকে পুনর্গঠিত করছে। দশ বছর আগে নীতিনির্ধারণের জন্য যেসব অনুমান কার্যকর ছিল, তা এখন আর প্রাসঙ্গিক নয়। আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা আজ আরও তীব্র হয়েছে।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ক্ষুদ্রঋণের উপর অভিজ্ঞতা বিনিময়ের জন্য ২০০৭ সালে বোয়াও ফোরামে যোগ দিয়েছিলাম। আজ একটি ভিন্ন ভূমিকায় এমন এক বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করছি যা গত বছর জুলাই-আগস্টে এক ঐতিহাসিক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে গেছে। বিশ্ব দেখেছে কীভাবে আমাদের জনগণ নিপীড়ন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের যুবসমাজ এবং সাধারণ জনগণ ভবিষ্যৎ পুনর্গঠনের জন্য অসাধারণ সংকল্প ও দৃঢ়তা প্রদর্শন করেছে। জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারের জন্য আমরা গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু করেছি। নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে স্বাধীন কমিশন গঠন করা হয়েছে। এসব সংস্কার বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ একটি মৌলিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাবে।

তিনি বলেন, নতুন বাংলাদেশ গঠনের পথে আমাদের সামনে বহু চ্যালেঞ্জ রয়েছে যা অন্যান্য এশীয় দেশের সঙ্গেও সম্পর্কিত। বিশ্বের আর্থিক বাজারের অস্থিরতা, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, কূটনৈতিক টানাপোড়েন এবং বাণিজ্যিক বাধাগুলো এশিয়ার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুদের হার বৃদ্ধি এবং ঋণের সুদ পরিশোধের উচ্চ ব্যয় আমাদের মহাদেশের ঋণ সংকটকে গভীরতর করছে।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বিশ্ব ২০৩০ এজেন্ডার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলেও, অগ্রগতি হতাশাজনক। এখন পর্যন্ত মাত্র ২৪ শতাংশ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জিত হয়েছে। উন্নয়নশীল এশীয় দেশগুলোকে বছরে ২ দশমিক ৫ থেকে ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার পর্যন্ত এসডিজি অর্থায়নের ঘাটতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ অতীতে দুর্নীতি এবং অবৈধ অর্থপাচারের শিকার হয়েছে। এ ধরনের দুর্নীতির ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলো প্রতি বছর প্রায় ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার হারায়, যা তাদের প্রাপ্ত বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তার (ওডিএ) তুলনায় অনেক বেশি। এশিয়াকে অবশ্যই একসঙ্গে কাজ করে একটি বহুপাক্ষিক সম্পদ পুনরুদ্ধার ও প্রত্যাবর্তন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা ক্রমশ হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর জন্য জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়িয়ে দিচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ এ সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। খাদ্য সরবরাহ চেইনকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় বিনিয়োগ অপরিহার্য।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমাদের সভ্যতা ঝুঁকিতে রয়েছে কারণ আমরা আত্মবিধ্বংসী অর্থনৈতিক মূল্যবোধ গ্রহণ করে চলেছি। বর্তমান অর্থনৈতিক মডেল অসীম ভোগবাদ এবং পরিবেশগত অবক্ষয়কে উৎসাহিত করে। আমাদের অবশ্যই একটি টেকসই অর্থনৈতিক মডেলের দিকে এগিয়ে যেতে হবে, যেখানে মানুষের এবং পৃথিবীর কল্যাণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, জলবায়ু সংকট মানবজাতির অস্তিত্বের জন্য হুমকি। জলবায়ু দুর্যোগজনিত আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ডিজিটাল বৈষম্য কমিয়ে প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও নতুন উদ্যোগকে শক্তিশালী করতে হবে।

লিখিত বক্তব্যের প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, এশিয়ার বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি তার অন্যতম শক্তি। ইসলাম, কনফুসিয়ানিজম, বৌদ্ধ এবং হিন্দু দর্শন বিশ্ব চিন্তাধারাকে সমৃদ্ধ করেছে। আমাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তির সংমিশ্রণ এশিয়াকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এশিয়ার তরুণ জনসংখ্যা বিশাল সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। তাদের উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। নারীদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে নারী নেতৃত্বের পরিসর বিস্তৃত করতে হবে।

তিনি বলেন, বিশ্বের চলমান সংকট- ফিলিস্তিনের গণহত্যা, ইউক্রেন যুদ্ধ, মিয়ানমারের সংকটও এশিয়ার জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ৭ বছর ধরে বাংলাদেশ ১ দশমিক ২ মিলিয়ন রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু এটি দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট করছে। এশিয়ার দেশগুলোকে অবশ্যই রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, পরিবর্তিত বিশ্বে এশিয়ার ভবিষ্যৎ অভিন্ন। আমাদের চারটি খাতে সহযোগিতা বাড়াতে হবে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

বক্তব্য দিতে গিয়ে মঞ্চে পড়ে গেলেন জামায়াত আমির

সমৃদ্ধ এশিয়া গড়তে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরির আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

প্রকাশের সময় : ০১:০৪:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

এশীয় দেশগুলোকে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ও যৌথ সমৃদ্ধির জন্য একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) চীনের হাইনানে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, পরিবর্তনশীল এ বিশ্বে এশীয় দেশগুলোর ভাগ্য পরস্পরের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। আমাদের অবশ্যই একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে- যা অভিন্ন ভবিষ্যৎ এবং যৌথ সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাবে।

আর্থিক সহযোগিতা প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এশিয়াকে অবশ্যই একটি টেকসই অর্থায়ন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে এবং আঞ্চলিক উন্নয়ন ব্যাংক (এমডিবি) ও অনুরূপ প্রতিষ্ঠানগুলোর এই প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দেওয়া উচিত।

তিনি বলেন, আমাদের এমন নির্ভরযোগ্য তহবিল দরকার যা আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করবে।

বাণিজ্য সহযোগিতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এশিয়া এখনও বিশ্বের অন্যতম কম সংযুক্ত অঞ্চল।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এ দুর্বল সংযুক্তি বিনিয়োগ ও বাণিজ্যকে বাধাগ্রস্ত করছে। আমাদের অবশ্যই বাণিজ্য সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য দ্রুত কাজ করতে হবে।

খাদ্য ও কৃষি সহযোগিতা বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এশীয় দেশগুলোকে অবশ্যই সম্পদ-সাশ্রয়ী কৃষিকে উৎসাহিত এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় উৎপাদন বাড়াতে হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, জলবায়ু সংকট মানবজাতির অস্তিত্বের জন্য হুমকি। জলবায়ু দুর্যোগজনিত আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থা এবং বহুপাক্ষিক সহযোগিতার ধারণা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তন তীব্রতর হচ্ছে। ঋণের বোঝা অসহনীয় হয়ে উঠছে এবং মানবিক সংকট ক্রমশ জটিল হচ্ছে। উন্নয়ন সহযোগিতার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা দুর্বল হচ্ছে, যা বৈশ্বিক কর্মকাণ্ডে গুরুতর ঘাটতির সৃষ্টি করছে।

তিনি বলেন, বিশ্বের ৬০ শতাংশ জনগণ এবং বৈশ্বিক জিডিপির ৫৫ শতাংশ ধারণকারী এশিয়া এই পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। নতুন নতুন নীতি, নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং প্রযুক্তি শাসন ব্যবস্থা ও অর্থনীতিকে পুনর্গঠিত করছে। দশ বছর আগে নীতিনির্ধারণের জন্য যেসব অনুমান কার্যকর ছিল, তা এখন আর প্রাসঙ্গিক নয়। আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা আজ আরও তীব্র হয়েছে।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ক্ষুদ্রঋণের উপর অভিজ্ঞতা বিনিময়ের জন্য ২০০৭ সালে বোয়াও ফোরামে যোগ দিয়েছিলাম। আজ একটি ভিন্ন ভূমিকায় এমন এক বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করছি যা গত বছর জুলাই-আগস্টে এক ঐতিহাসিক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে গেছে। বিশ্ব দেখেছে কীভাবে আমাদের জনগণ নিপীড়ন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের যুবসমাজ এবং সাধারণ জনগণ ভবিষ্যৎ পুনর্গঠনের জন্য অসাধারণ সংকল্প ও দৃঢ়তা প্রদর্শন করেছে। জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারের জন্য আমরা গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু করেছি। নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে স্বাধীন কমিশন গঠন করা হয়েছে। এসব সংস্কার বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ একটি মৌলিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাবে।

তিনি বলেন, নতুন বাংলাদেশ গঠনের পথে আমাদের সামনে বহু চ্যালেঞ্জ রয়েছে যা অন্যান্য এশীয় দেশের সঙ্গেও সম্পর্কিত। বিশ্বের আর্থিক বাজারের অস্থিরতা, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, কূটনৈতিক টানাপোড়েন এবং বাণিজ্যিক বাধাগুলো এশিয়ার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুদের হার বৃদ্ধি এবং ঋণের সুদ পরিশোধের উচ্চ ব্যয় আমাদের মহাদেশের ঋণ সংকটকে গভীরতর করছে।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বিশ্ব ২০৩০ এজেন্ডার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলেও, অগ্রগতি হতাশাজনক। এখন পর্যন্ত মাত্র ২৪ শতাংশ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জিত হয়েছে। উন্নয়নশীল এশীয় দেশগুলোকে বছরে ২ দশমিক ৫ থেকে ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার পর্যন্ত এসডিজি অর্থায়নের ঘাটতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ অতীতে দুর্নীতি এবং অবৈধ অর্থপাচারের শিকার হয়েছে। এ ধরনের দুর্নীতির ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলো প্রতি বছর প্রায় ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার হারায়, যা তাদের প্রাপ্ত বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তার (ওডিএ) তুলনায় অনেক বেশি। এশিয়াকে অবশ্যই একসঙ্গে কাজ করে একটি বহুপাক্ষিক সম্পদ পুনরুদ্ধার ও প্রত্যাবর্তন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা ক্রমশ হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর জন্য জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়িয়ে দিচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ এ সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। খাদ্য সরবরাহ চেইনকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় বিনিয়োগ অপরিহার্য।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমাদের সভ্যতা ঝুঁকিতে রয়েছে কারণ আমরা আত্মবিধ্বংসী অর্থনৈতিক মূল্যবোধ গ্রহণ করে চলেছি। বর্তমান অর্থনৈতিক মডেল অসীম ভোগবাদ এবং পরিবেশগত অবক্ষয়কে উৎসাহিত করে। আমাদের অবশ্যই একটি টেকসই অর্থনৈতিক মডেলের দিকে এগিয়ে যেতে হবে, যেখানে মানুষের এবং পৃথিবীর কল্যাণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, জলবায়ু সংকট মানবজাতির অস্তিত্বের জন্য হুমকি। জলবায়ু দুর্যোগজনিত আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ডিজিটাল বৈষম্য কমিয়ে প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও নতুন উদ্যোগকে শক্তিশালী করতে হবে।

লিখিত বক্তব্যের প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, এশিয়ার বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি তার অন্যতম শক্তি। ইসলাম, কনফুসিয়ানিজম, বৌদ্ধ এবং হিন্দু দর্শন বিশ্ব চিন্তাধারাকে সমৃদ্ধ করেছে। আমাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তির সংমিশ্রণ এশিয়াকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এশিয়ার তরুণ জনসংখ্যা বিশাল সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। তাদের উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। নারীদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে নারী নেতৃত্বের পরিসর বিস্তৃত করতে হবে।

তিনি বলেন, বিশ্বের চলমান সংকট- ফিলিস্তিনের গণহত্যা, ইউক্রেন যুদ্ধ, মিয়ানমারের সংকটও এশিয়ার জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ৭ বছর ধরে বাংলাদেশ ১ দশমিক ২ মিলিয়ন রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু এটি দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট করছে। এশিয়ার দেশগুলোকে অবশ্যই রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, পরিবর্তিত বিশ্বে এশিয়ার ভবিষ্যৎ অভিন্ন। আমাদের চারটি খাতে সহযোগিতা বাড়াতে হবে।