নিজস্ব প্রতিবেদক :
সপ্তাহ ব্যবধানে ফের চড়া রাজধানীর নিত্যপণ্যের বাজার। দাম বেড়েছে শাক-সবজি ও মাছ-মাংসসহ প্রায় সব ধরনের পণ্যেরই। ক্রেতা-বিক্রেতারা বলছেন, অস্থির বাজার নিয়ন্ত্রণে শুধু আমদানি শুল্ক কমালেই চলবে না, এর পাশাপাশি জোরদার করতে হবে তদারকি!
শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে সবজির দরের এমন চিত্র দেখা গেছে। কিছুদিন আগে সবজি বিক্রেতারা দাবি করেছিল ক্ষেতে চাষ করা সবজিগুলোর শেষ সময় থাকায় সরবরাহ কমে বেড়েছিল দাম। তবে এখন নতুন করে চাষ করা সবজিগুলো উঠতে শুরু করেছে, সে কারণে বাজারে সরবরাহ বাড়ছে সবজির। তাই আজকের বাজারে সবজির দাম কিছুটা কম। এই দাম আরও কমে আসতে পারে।
আজ বাজারে বেগুন বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭০ টাকা যা কিছু দিন আগে ৮০ থেকে ১০০ টাকা ছিল, সিম প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা যা গত সপ্তাহে ছিল ৭০ টাকা, তবে বিঁচিযুক্ত সিম প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়, লাউ প্রতি পিস ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে যা আগে ছিল সর্বনিম্ন ৮০ টাকা। ফুলকপি, বাঁধাকপি প্রতি পিস ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হলেও গত সপ্তাহে ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা।
অন্যদিকে টমেটোর দাম কিছুটা কমে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়, মিস্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৪০ টাকা,কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৪০ টাকা, করোলা প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, কাঁচা কলা প্রতি হালি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, গাজর প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ঢেঁড়স প্রতি কেজি ৮০ টাকা, ব্রুকলি প্রতি পিস ৪০ টাকা, শালগম প্রতি কেজি ৪০ টাকা এবং শসা প্রতি কেজি ৭০ টাকা, মুলা প্রতি কেজি ৫০ টাকা এবং পেঁয়াজের ফুল প্রতি আঁটি ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি প্রতি ৮০০ টাকা। চাষের শিং (আকারভেদে) মাছের কেজি ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা, প্রতি কেজি রুই মাছের দাম বেড়ে (আকারভেদে) ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি মাগুর ৭০০ থেকে এক হাজার টাকা, মৃগেল ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা, পাঙাশ ২০০ থেকে ২২০ টাকা, চিংড়ি ৮০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা, বোয়াল ৫০০ থেকে ৯০০ টাকা, কাতল ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, পোয়া ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কই ২২০ থেকে ২৪০ টাকা, মলা ৫০০ টাকা, বাতাসি টেংরা ১ হাজার ৬০০ টাকা, টেংরা ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি ৬০০ টাকা, পাঁচমিশালি ২২০ টাকা, রূপচাঁদা ১ হাজার ২০০ টাকা, বাইম এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা, দেশি কই এক হাজার টাকা, মেনি ৭০০ টাকা, শোল ৬০০ থেকে এক হাজার টাকা, আইড় ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা এবং কাইক্ক্যা ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ২০ টাকা। ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা দরে, যা ছিল ১০০ টাকা। আর গত এক সপ্তাহে বেড়েছে ৪০ টাকা। তার আগের সপ্তাহে কেজি ছিল ৮০ টাকার মধ্যে।
অথচ বিগত বছরগুলোতে এ সময়ে পেঁয়াজের দর ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকার মধ্যে। সে দৃশ্য এখন শুধুই গল্প। চড়া দামে পেঁয়াজ কিনতে বিরক্ত ক্রেতারা।
এদিকে সরকার নির্ধারিত গরুর মাংস প্রতিকেজি ৬৫০ টাকা দরে বিক্রি করার কথা থাকলেও ব্যবসায়ীরা হাটের জোগান কম থাকার অজুহাতে ৭৫০টাকায় বিক্রি করছে। ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১১৫০ টাকা কেজি, ভেড়া ১০০০ কেজি, ব্রয়লার মুরগি ১৯০-২০০ টাকা কেজি, লাল লেয়ার মুরগি ২৮৫ কেজি,পাকিস্তানি জাতের সোনালি ২৮০-২৯০ টাকা কেজি, দেশি মুরগি প্রতিকেজি ৫৪০ টাকা, হাঁস ৪২০ টাকা কেজি বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।
কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১০৫ টাকায়। ছোলার পাশাপাশি বাড়ছে অন্যান্য ডালের দামও। গত এক মাসের মধ্যে এসব পণ্যের দাম ১০-৩০ টাকা বেড়েছে। প্রতি কেজি ছোলার ডাল ১০০ থেকে ১১০ টাকা, অ্যাংকর ডাল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, ডাবলির ডাল ৭৫ টাকা, মোটা দানার মসুর ডাল ১০৫ থেকে ১১০ টাকা, চিকন মসুর ডাল ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা, মোটা দানার মুগ ডাল ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা, চিকন মুগ ডাল ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা ও খেসারি ডাল ১০৫ থেকে ১১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যান্য পণ্যের মধ্যে খোলা আটা ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, প্যাকেট আটা ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা, খোলা ময়দা ৬৫ থেকে ৭০ টাকা এবং প্যাকেট ময়দা ৭৫ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৭০ টাকা ও প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকায়। আর প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায়। আর প্যাকেটজাত চিনি তো বাজার থেকেই উধাও!
রাজধানীর যাত্রবাড়ী নিত্যপণ্য কিনতে আসা ক্রেতা ছাত্তার বেপারী বলেন, শীতের মৌসুমে আমরা অতিরিক্ত বাড়তি দামে সব ধরনের সবজি কিনেছি। আগে কোন বছরেও সবজির দাম এতটা বেশি ছিল না। সব পণ্যের দামই চড়া।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, শীতের শেষ সময়ে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী সবজির জোগান কম, গাড়ি ভাড়া বেশি হওয়ায় দাম বাড়ছে সব রকমের সবজির। তবে টমেটো আর আলুর দাম কমেছে।