নিজস্ব প্রতিবেদক :
তেল ও চিনির দাম গত কয়েক মাসে দফায় দফায় বেড়ে রেকর্ড ছুঁয়েছে। কমছে না সবজি, মাছ-মাংস কিংবা মসলার দামও। বিভিন্ন পদের মসলা ও মাছের অতিরিক্ত দামে এরই মধ্যে নাজেহাল সাধারণত ক্রেতারা। বিশেষত আদা ও জিরার দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক মাত্রায়। পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম গত সপ্তাহের চেয়েও বেড়েছে। সাধ্যের মধ্যে মিলছে না মাছ।
শুক্রবার (১৯ মে) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন দাম দেখা গেছে।
সবজির বাজারে দেখা যায়, বাজারভেদে লম্বা বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে। ঢেঁড়শ ৮০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, কচুর লতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, শশা ১২০ টাকা, টমেটো ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ধুন্দল ৭০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৫০ থেকে ৬০ টাকা, চালকুমড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকা। এছাড়া পটল ৮০ টাকা, ১০০ থেকে ১২০ টাকা গুনতে হচ্ছে প্রতি কেজি কচুরমুখীর জন্য। সবজির বাজারে নতুন মুখ কাঁচা আম। কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা। এদিকে বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা কেজি দরে। যা মাসের শুরুতেও ছিল ২৫ টাকা। সবজির বাজারে ৬০ টাকায় পৌঁছেছে পেঁপে। ৭০ টাকার কমে আর কোনো সবজি নেই।
সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে আরও ২০ টাকা বেড়েছে কাঁচা মরিচের দাম। এ সপ্তাহে এক কেজি কাঁচা মরিচ কিনতে ক্রেতার পকেট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে ২২০ টাকা। ১০ টাকা মরিচ কেনা নিম্নআয়ের মানুষ পড়েছেন বিপাকে। ২০ টাকার কমে মরিচ বিক্রি করতে নারাজ বিক্রেতারা।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের ৫৫ টাকা কেজি দরের পেঁয়াজ এ সপ্তাহে মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৮০, ৮৫ এবং ৯০ টাকায়। ৩০ টাকা কেজি দরের আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। কয়েকদিন আগে যে আদা ছিল ১২০ টাকা তা এখন বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ৩০০ টাকায়। এছাড়া বড় সাইজের রসুন ১৫০ টাকা এবং ছোট সাইজের রসুন ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাছের বাজারে দেখা যায়, ইলিশ মাছ ১৭০০-২০০০, রুই মাছ ৩০০-৪০০, কাতল মাছ ৪৫০-৫০০, কালিবাউশ মাছ ৫০০-৫৫০, চিংড়ি মাছ ৭০০-৯০০, কাঁচকি মাছ ৫০০, টেংরা মাছ ৭০০, পাবদা মাছ ৪০০ টাকা কেজি।
এছাড়া ব্রয়লার মুরগি ১৯৮-২১৫, দেশি মুরগি ৬৮০, আর গরুর মাংস যেন সবকিছুকে ছাড়িয়ে বিক্রি হচ্ছে ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকায়। ফার্মের মুরগির ডিমের দাম বেড়ে হয়েছে ১৫০ টাকা ডজন।
বিক্রেতারা এসব পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে আমদানি বন্ধ ও নানা ধরনের সংকটের কথা বললেও ক্রেতারা তা মেনে নিতে নারাজ। ক্রেতারা বলছেন, মাছ-মাংস, মসলা ও শাক-সবজিসহ প্রায় সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চড়া দামে দারুণ বিপাকে সাধারণ মানুষ। বিশেষত নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ বেশি বেকায়দায় পড়েছেন। সংসার চালাতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমদানি বন্ধের অজুহাতে বাজার সিন্ডিকেট ইচ্ছামতো পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে।
সকালে রামপুরা কাঁচাবাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা আহসানুল হক বলেন, এখন বাজারে যে পণ্যের চাহিদা তৈরি হয়, তা আগে থেকেই সিন্ডিকেট করেন এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। সামনে কোরবানির ঈদ, সেজন্য এখন মসলা ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াতে শুরু করেছেন। তা না হলে দেখতে দেখতে মসলার দাম দ্বিগুণ হয়ে যায় কী করে?
তিনি মনে করেন, সরকারের এ বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণে উদাসীনতা রয়েছে। তারা দেখেও দেখে না। বরং কিছু ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের আরও বেপরোয়া হতে উৎসাহ জোগানো হয়।
এছাড়া মুদি দোকান ঘুরে জানা যায় চিনি, তেল ডালের মতো দ্রব্যাদির দাম। এসব পণ্যের দাম আগের মতোই অপরিবর্তিত রয়েছে। মুসরের ডাল ১৩০ টাকা, মুগ ডাল ১২০ টাকা, খেসারি ডাল ৮০ টাকা, বুটের ডাল ৯৫ টাকা, ছোলা ৮৫ টাকা, চিনি ১৩০ টাকা, খোলা আটা ৫৭ টাকা, খোলা ময়দা ৬৩ টাকা, সয়াবিন তেল (প্যাকেট) ১৯৮ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৮৮ টাকা ও খোলা সরিষার তেল ২৫০ টাকা লিটার।
আকাশ নামে এক ক্রেতা বলেন, বাজারে কিছুই কেনার পরিস্থিতি নাই। যা কিছু কিনতে যাই আগুন জ্বলা দাম! এক হাজার টাকা নিয়ে গেলেও বাজার হয় না। চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ বা মরিচ কিছুই কেনার মতো পরিস্থিতি নেই। বাজারে আসলেই টাকা হাওয়ার মতো উড়ে যাচ্ছে। সবকিছুর দাম বাড়লেও আয় তো বাড়েনি।
মোহাম্মদ মোশাররফ নামের এক বিক্রেতা বলেন, প্রতিটি জিনিসের দাম বাড়ছে। আমাদের কিছুই করার নাই। ভারত থেকে পেঁয়াজ না আসলে দাম এমনই থাকবে মনে হচ্ছে। কারণ, আমরা বেশি দামে কিনে কম দামে তো বিক্রি করতে পারি না। পাল্লা প্রতি যে হারে দাম বৃদ্ধি করা হয় খোলা বাজারেও কেজি প্রতি তেমন মূল্য বাড়ে।
বাজার করতে আসা শেফালী বেগম বলেন, প্রতিনিয়ত সবকিছুর দাম বাড়ছে। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ বাড়ছে। বাজার করতে আসতেই এখন ভয় লাগে। কী কিনবো আর কী বাদ দিব এটাই ভেবে পাই না। সবকিছুতে অতিরিক্ত দাম। মাছ, মাংস, চিনি, লবণ, ডিম কিছুই আর খাওয়ার মতো উপায় নেই।