Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সন্ত্রাস দমন আইনে জামায়াত নিষিদ্ধ হচ্ছে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

সন্ত্রাস দমন আইনের ১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

বুধবার (৩১ জুলাই) সন্ধ্যায় সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, সন্ত্রাস দমন আইনের ১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। এটি এখনও প্রক্রিয়াধীন। যে কোনো মুহূর্তে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। প্রজ্ঞাপন জারি হবে যে কোনো মুহূর্তে।

তিনি বলেন, জামায়াত-শিবির আগেই নিষিদ্ধ ছিল। এ দেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকগুলো এবং সুশীল লোকগুলো জামায়াতকে নিষিদ্ধের কথা বলে আসছেন। এটা সাধারণ মানুষের দাবি ছিল। এ নিয়ে ১৪ দল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে তারাও জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধের পরামর্শ দিয়েছিলেন। জামায়াত-শিবির চলমান পরিস্থিতি তৈরি করেছে। শিক্ষার্থীদের সামনে রেখে জামায়াত-শিবির-বিএনপি ধ্বংসাত্মক কাজ করেছে। তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করতেই নিষিদ্ধ করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে জামায়াতকে নিষিদ্ধসহ কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা সকালে একটা মিটিং করেছি। দুপুরে একটা মিটিং করেছি। আমাদের মিটিং ছিল ১৫ আগস্ট জাতির পিতার ৪৯তম শাহাদাত বার্ষিকী পালন নিয়ে।

তাদের নিষিদ্ধ করা হলে নতুন করে অশান্তি হবে কিনা, সেই প্রশ্ন রাখা হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জামায়াত-শিবির এই অবস্থা তৈরি করেই ফেলেছে। এর পেছনে তাদের যথেষ্ট যোগসাজশ রয়েছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের সব দাবি মেনে নেওয়ার পরও আন্দোলন থামছে না। একটা সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। ছাত্ররা কোনোদিন এমন ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হত না যদি তাদের পরামর্শদাতারা এই রকম পরামর্শ না দিত। রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করেছে। এই যে এতগুলো মানুষ হতাহত হল, শুধু কি পুলিশের গুলিতে হয়েছে? আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখুন, আমরাও প্রকাশ করব কার গুলিতে কত মানুষ মারা গেছে, আহত হয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, এই সবকিছু তো ছাত্ররা করেনি। ছাত্রদের পেছনে রেখে পেছন থেকে যারা করেছে সেগুলো জামায়াত-শিবির-বিএনপি। অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনগুলো এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছিল। এটাই আমাদের কাছে প্রতীয়মান হচ্ছে। সেজন্য অনেক দিনের যে চাহিদা ছিল যে, জামায়াত শিবিরকে নিষিদ্ধ করার, আজকে সেই প্রক্রিয়াটি চলছে।

সরকারের এই সিদ্ধান্তের পর নতুন করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির শঙ্কা আছে কি না এ প্রশ্নে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, অবনতি তো অনেকখানি হয়ে রয়েছিল। আমরা ধীরে ধীরে এটাকে ইয়ে করে আনছি। কিন্তু এই অবনতির পেছনে যাদের হাত রয়েছে তাদেরকে আইনের সামনে আনার জন্য প্রক্রিয়া চলছে। যারা এইগুলো করছে তাদের সম্পর্কে জনগণকে জানাতে হবে, সেটাই আমরা ব্যবস্থা করছি।

জাতিসংঘের প্রতিনিধি দল এসেছিল, তাদের সঙ্গে কী কথা হয়েছে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা অনেক কিছুই জিজ্ঞাসা করেছে। আর কতদিনের মধ্যে অবস্থা স্বাভাবিক হবে, কারফিউ কবে উঠবে– ইত্যাদি। আমরা বলেছি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হবে। অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা কারফিউ উইথড্র করতে পারব। তারা দুই একজন কিশোরের মৃত্যুর কথা জানতে চেয়েছিল। আমরা একটা কিশোরের কথা বলেছিলাম যে, ওর বয়স কত এখনও আমরা তার সার্টিফিকেটটি পাইনি। স্কুলে থেকে জানাচ্ছে সাড়ে ১৭ বছর। কিন্তু সেই ছেলেটি যে অন্যায় কাজটি করেছে, এটা একটা জঘন্য অন্যায় কাজ করেছে। সে যাত্রাবাড়ীতে পুলিশ হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল।

তিনি বলেন, তার ভিডিও এবং কথোপকথোন থেকে তাকে সনাক্ত করেছে। সেতো পুলিশ হত্যা করেছেই। সেই পুলিশকে ঝুলিয়ে রাখার ক্ষেত্রেও সে ছিল। দঁড়ি ধরে টানতেছিল ঝুলিয়ে রাখার জন্য।

কারা কীভাবে প্রাণ হারাল?

সংঘাতে প্রাণহানির বিষয়েও জাতিসংঘ প্রতিনিধি দল জানতে চেয়েছিল জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা বলেছি যে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সবার জন্যই দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং তাদের দেখতে গেছেন এবং তাদেরকে কিছু নগদ টাকা সাহায্যও করেছেন। আমরা মনে করি এই ঘটনাগুলো আমাদের পুলিশ কিংবা নিরাপত্তা বাহিনী ইচ্ছে করে বা কারো প্ররোচনায় করে নাই। মানুষের জানমাল এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা করার জন্যই তারা গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছে।

পুলিশ ‘অনেক ধৈর্যের সঙ্গে’ পরিস্থিতি মোকাবেলা করে মন্ত্রী বলেন, আমরা দেখেছি যে শিশু কিশোরদের সম্মুখে নিয়ে আসছিল। এদের পেছনে ছিল আসল ব্যক্তিরা, যারা নাকি ঘটনা ঘটাতে চেয়েছিল। আগুন ধরিয়েছে, মানুষ হত্যা করেছে, ইটপাটকেল ছুড়েছে। তারা ছিল এই শিশুদের পেছনে, সেকেন্ড লাইনে, থার্ড লাইনে ছিল। আমাদের পুলিশ বাহিনী এই শিশুদের চরম ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবেলা করেছেন। তারপর যখন বৃষ্টির মত ঢিল আসা শুরু হল, পটকা ফুটানো হল, গুলি করা হল, তখন পুলিশ বাধ্য হয়ে টিয়ার গ্যাস, তারপর যেটা যেটা করা দরকার সেটা করেছে। এতে হয়তো অনেকেই আহত হয়েছেন। এরপরও যখন থামেনি তখন পুলিশ নন লেথাল আর্মস ফায়ার করতে বাধ্য হয়েছে। আমরাও কারফিউ দিতে বাধ্য হয়েছি, সেনাবাহিনী দিতেও বাধ্য হয়েছি। জানমালের নিরাপত্তার জন্যই এটা করা হয়েছিল।”

কয়েকদিনের সংঘাতে কেবল আন্দোলনকারীরা নয়, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারি দলের ‘অনেকে’ মারা গেছেন, সে তথ্য জাতিসংঘ প্রতিনিধি দলকে দেওয়ার কথা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেন, এখানে শুধু যে ছাত্ররা শহিদ হয়েছে, শাহাদাত বরণ করেছে তা নয়। এখানে পুলিশ, আনসার, র‌্যাব সদস্য, সাংবাদিক এবং বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ মৃত্যু বরণ করেছেন। এবং রাজনৈতিক নেতৃত্ব, আওয়ামী লীগ, বিএনপির একজন দুইজন, দুইএকজন ছাত্রও শাহাদাত বরণ করেছেন। এরমধ্যে আবার কয়েকজন ছাত্রলীগের সদস্যও রয়েছেন। আওয়ামী লীগের লোকও শাহাদাত বরণ করেছেন। বাধ্য হয়ে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করেছেন।

জাতিসংঘের লোগোওয়ালা গাড়ি বেরোয় ‘ভুল করে’

সহিংসতা দমনে জাতিসংঘের লোগো লাগানো শান্তি মিশনের গাড়ি ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন করা হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইউনাইটেড নেশনসের এপিসি ভেহিকেলটা আর্মিরা ব্যবহার করেছেন। আর্মিরা ইউনাইটেড নেশনস থেকে যখন ফেরত এনেছে, আর্মিরা তাড়াহুড়া করে বোধ হয় বের করেছিল। যখন দৃশ্যমাণ হয়েছে, আর্মিরা সঙ্গে সঙ্গেই এটাকে সরিয়ে নিয়ে গেছে। এটা দিয়ে কোনো অপারেশন কাজ চালানো হয়নি। এটা যখনই তাদের নজরে পড়েছে তখনই তারা সরিয়ে নিয়েছে।

সংঘাত-সহিংসতার তদন্তে কী কী করা হচ্ছে, তাও জানতে চেয়েছেন জাতিসংঘের প্রতিনিধিরা। সে প্রসঙ্গ ধরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা বলেছি, বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি ওয়ান ম্যান ছিল। এটার সংখ্যা ও টিওআর বাড়িয়ে আরও শক্তিশালী করা হয়েছে। তদন্ত শুধু তাদেরই নয়, পুলিশেরও তদন্ত হবে, কেন পুলিশ গুলি করতে বাধ্য হল, বিজিবিরও তদন্ত হবে। যদি কেউ ভুল করে থাকে সেটাও আমরা দেখব।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়ক চার লেন দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে মানববন্ধন 

সন্ত্রাস দমন আইনে জামায়াত নিষিদ্ধ হচ্ছে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ১০:৩২:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ জুলাই ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

সন্ত্রাস দমন আইনের ১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

বুধবার (৩১ জুলাই) সন্ধ্যায় সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, সন্ত্রাস দমন আইনের ১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। এটি এখনও প্রক্রিয়াধীন। যে কোনো মুহূর্তে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। প্রজ্ঞাপন জারি হবে যে কোনো মুহূর্তে।

তিনি বলেন, জামায়াত-শিবির আগেই নিষিদ্ধ ছিল। এ দেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকগুলো এবং সুশীল লোকগুলো জামায়াতকে নিষিদ্ধের কথা বলে আসছেন। এটা সাধারণ মানুষের দাবি ছিল। এ নিয়ে ১৪ দল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে তারাও জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধের পরামর্শ দিয়েছিলেন। জামায়াত-শিবির চলমান পরিস্থিতি তৈরি করেছে। শিক্ষার্থীদের সামনে রেখে জামায়াত-শিবির-বিএনপি ধ্বংসাত্মক কাজ করেছে। তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করতেই নিষিদ্ধ করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে জামায়াতকে নিষিদ্ধসহ কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা সকালে একটা মিটিং করেছি। দুপুরে একটা মিটিং করেছি। আমাদের মিটিং ছিল ১৫ আগস্ট জাতির পিতার ৪৯তম শাহাদাত বার্ষিকী পালন নিয়ে।

তাদের নিষিদ্ধ করা হলে নতুন করে অশান্তি হবে কিনা, সেই প্রশ্ন রাখা হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জামায়াত-শিবির এই অবস্থা তৈরি করেই ফেলেছে। এর পেছনে তাদের যথেষ্ট যোগসাজশ রয়েছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের সব দাবি মেনে নেওয়ার পরও আন্দোলন থামছে না। একটা সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। ছাত্ররা কোনোদিন এমন ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হত না যদি তাদের পরামর্শদাতারা এই রকম পরামর্শ না দিত। রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করেছে। এই যে এতগুলো মানুষ হতাহত হল, শুধু কি পুলিশের গুলিতে হয়েছে? আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখুন, আমরাও প্রকাশ করব কার গুলিতে কত মানুষ মারা গেছে, আহত হয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, এই সবকিছু তো ছাত্ররা করেনি। ছাত্রদের পেছনে রেখে পেছন থেকে যারা করেছে সেগুলো জামায়াত-শিবির-বিএনপি। অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনগুলো এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছিল। এটাই আমাদের কাছে প্রতীয়মান হচ্ছে। সেজন্য অনেক দিনের যে চাহিদা ছিল যে, জামায়াত শিবিরকে নিষিদ্ধ করার, আজকে সেই প্রক্রিয়াটি চলছে।

সরকারের এই সিদ্ধান্তের পর নতুন করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির শঙ্কা আছে কি না এ প্রশ্নে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, অবনতি তো অনেকখানি হয়ে রয়েছিল। আমরা ধীরে ধীরে এটাকে ইয়ে করে আনছি। কিন্তু এই অবনতির পেছনে যাদের হাত রয়েছে তাদেরকে আইনের সামনে আনার জন্য প্রক্রিয়া চলছে। যারা এইগুলো করছে তাদের সম্পর্কে জনগণকে জানাতে হবে, সেটাই আমরা ব্যবস্থা করছি।

জাতিসংঘের প্রতিনিধি দল এসেছিল, তাদের সঙ্গে কী কথা হয়েছে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা অনেক কিছুই জিজ্ঞাসা করেছে। আর কতদিনের মধ্যে অবস্থা স্বাভাবিক হবে, কারফিউ কবে উঠবে– ইত্যাদি। আমরা বলেছি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হবে। অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা কারফিউ উইথড্র করতে পারব। তারা দুই একজন কিশোরের মৃত্যুর কথা জানতে চেয়েছিল। আমরা একটা কিশোরের কথা বলেছিলাম যে, ওর বয়স কত এখনও আমরা তার সার্টিফিকেটটি পাইনি। স্কুলে থেকে জানাচ্ছে সাড়ে ১৭ বছর। কিন্তু সেই ছেলেটি যে অন্যায় কাজটি করেছে, এটা একটা জঘন্য অন্যায় কাজ করেছে। সে যাত্রাবাড়ীতে পুলিশ হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল।

তিনি বলেন, তার ভিডিও এবং কথোপকথোন থেকে তাকে সনাক্ত করেছে। সেতো পুলিশ হত্যা করেছেই। সেই পুলিশকে ঝুলিয়ে রাখার ক্ষেত্রেও সে ছিল। দঁড়ি ধরে টানতেছিল ঝুলিয়ে রাখার জন্য।

কারা কীভাবে প্রাণ হারাল?

সংঘাতে প্রাণহানির বিষয়েও জাতিসংঘ প্রতিনিধি দল জানতে চেয়েছিল জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা বলেছি যে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সবার জন্যই দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং তাদের দেখতে গেছেন এবং তাদেরকে কিছু নগদ টাকা সাহায্যও করেছেন। আমরা মনে করি এই ঘটনাগুলো আমাদের পুলিশ কিংবা নিরাপত্তা বাহিনী ইচ্ছে করে বা কারো প্ররোচনায় করে নাই। মানুষের জানমাল এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা করার জন্যই তারা গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছে।

পুলিশ ‘অনেক ধৈর্যের সঙ্গে’ পরিস্থিতি মোকাবেলা করে মন্ত্রী বলেন, আমরা দেখেছি যে শিশু কিশোরদের সম্মুখে নিয়ে আসছিল। এদের পেছনে ছিল আসল ব্যক্তিরা, যারা নাকি ঘটনা ঘটাতে চেয়েছিল। আগুন ধরিয়েছে, মানুষ হত্যা করেছে, ইটপাটকেল ছুড়েছে। তারা ছিল এই শিশুদের পেছনে, সেকেন্ড লাইনে, থার্ড লাইনে ছিল। আমাদের পুলিশ বাহিনী এই শিশুদের চরম ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবেলা করেছেন। তারপর যখন বৃষ্টির মত ঢিল আসা শুরু হল, পটকা ফুটানো হল, গুলি করা হল, তখন পুলিশ বাধ্য হয়ে টিয়ার গ্যাস, তারপর যেটা যেটা করা দরকার সেটা করেছে। এতে হয়তো অনেকেই আহত হয়েছেন। এরপরও যখন থামেনি তখন পুলিশ নন লেথাল আর্মস ফায়ার করতে বাধ্য হয়েছে। আমরাও কারফিউ দিতে বাধ্য হয়েছি, সেনাবাহিনী দিতেও বাধ্য হয়েছি। জানমালের নিরাপত্তার জন্যই এটা করা হয়েছিল।”

কয়েকদিনের সংঘাতে কেবল আন্দোলনকারীরা নয়, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারি দলের ‘অনেকে’ মারা গেছেন, সে তথ্য জাতিসংঘ প্রতিনিধি দলকে দেওয়ার কথা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেন, এখানে শুধু যে ছাত্ররা শহিদ হয়েছে, শাহাদাত বরণ করেছে তা নয়। এখানে পুলিশ, আনসার, র‌্যাব সদস্য, সাংবাদিক এবং বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ মৃত্যু বরণ করেছেন। এবং রাজনৈতিক নেতৃত্ব, আওয়ামী লীগ, বিএনপির একজন দুইজন, দুইএকজন ছাত্রও শাহাদাত বরণ করেছেন। এরমধ্যে আবার কয়েকজন ছাত্রলীগের সদস্যও রয়েছেন। আওয়ামী লীগের লোকও শাহাদাত বরণ করেছেন। বাধ্য হয়ে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করেছেন।

জাতিসংঘের লোগোওয়ালা গাড়ি বেরোয় ‘ভুল করে’

সহিংসতা দমনে জাতিসংঘের লোগো লাগানো শান্তি মিশনের গাড়ি ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন করা হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইউনাইটেড নেশনসের এপিসি ভেহিকেলটা আর্মিরা ব্যবহার করেছেন। আর্মিরা ইউনাইটেড নেশনস থেকে যখন ফেরত এনেছে, আর্মিরা তাড়াহুড়া করে বোধ হয় বের করেছিল। যখন দৃশ্যমাণ হয়েছে, আর্মিরা সঙ্গে সঙ্গেই এটাকে সরিয়ে নিয়ে গেছে। এটা দিয়ে কোনো অপারেশন কাজ চালানো হয়নি। এটা যখনই তাদের নজরে পড়েছে তখনই তারা সরিয়ে নিয়েছে।

সংঘাত-সহিংসতার তদন্তে কী কী করা হচ্ছে, তাও জানতে চেয়েছেন জাতিসংঘের প্রতিনিধিরা। সে প্রসঙ্গ ধরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা বলেছি, বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি ওয়ান ম্যান ছিল। এটার সংখ্যা ও টিওআর বাড়িয়ে আরও শক্তিশালী করা হয়েছে। তদন্ত শুধু তাদেরই নয়, পুলিশেরও তদন্ত হবে, কেন পুলিশ গুলি করতে বাধ্য হল, বিজিবিরও তদন্ত হবে। যদি কেউ ভুল করে থাকে সেটাও আমরা দেখব।