Dhaka বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সন্তান হত্যায় মাসহ দুজনের মৃত্যুদণ্ড, ২ জনের যাবজ্জীবন

চাঁদপুর জেলা প্রতিনিধি : 

চাঁদপুরের হাইমচরে আপন ছেলে মো. আরিফ হোসেনকে (২৭) হত্যার দায়ে মা খুকি বেগমসহ (৪৩) দুজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং সহযোগী দুই আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে প্রত্যেক আসামিকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

বুধবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (১) ফারহানা ইয়াসমিন এই রায় ঘোষণা করেন।

হত্যার শিকার আরিফ হোসেন জেলার হাইমচর উপজেলার দক্ষিণ আলগী ইউনিয়নের মাছুম খান বাড়ির মিজানুর রহমান খানের ছেলে।

অপর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মো. জয়নাল গাজী (২৪) পার্শ্ববর্তী ফরিদগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম লাড়ুয়া গ্রামের গাজী বাড়ির গণি গাজীর ছেলে।

আর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রাপ্তরা হলেন- ফরিদগঞ্জ উপজেলার উত্তর বিষকাটালি গ্রামের মোল্লা বাড়ির হোসেন মোল্লার ছেলে ইউছুফ মোল্লা (২৭) ও একই গ্রামের বিল্লাল মোল্লার ছেলে মাহবুব মোল্লা (২৬)।

আসামিদের মধ্যে ইউছুফ মোল্লা প্রথম থেকে পলাতক। বাকিরা জামিনে থাকলেও রায়ের সময় সকল আসামির অনুপস্থিতিতে রায় হয়। আসামি পক্ষের আইনজীবী ছিলেন মো. জয়নাল আবেদীন।

মামলায় সরকার পক্ষের আইজীবী সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) বদিউজ্জামান কিরন জানান, এটি একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড। মায়ের পরকীয়ার জন্য এই ঘটনা ঘটে। মামলাটি দীর্ঘ ৭ বছরের অধিক সময় চলাকালীন আদালত ২০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। সাক্ষ্যগ্রহণ ও মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা করে আসামিদের অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় এই রায় দেন।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, হত্যার শিকার আরিফ হোসেন তার মা খুকি বেগমের সঙ্গে আসামি জয়নাল গাজীর পরকিয়া সম্পর্কের কথা জানতেন। এই বিষয়ে মা-ছেলের সম্পর্কের অবনতি হয়। ২০১৫ সালের শুরুতে ছেলে আরিফ হোসেন প্রেমের সম্পর্কে পার্শ্ববর্তী উত্তর আলগী ইউনিয়নের আব্দুস সালাম মিজির মেয়ে আসমা আক্তারকে বিয়ে করেন। এরপর মা, ছেলে ও ছেলের বউয়ের বিভিন্ন বিষয়ে ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকতো। এর জের ধরে মা খুকি বেগম ছেলেকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

এর অংশ হিসেবে ২০১৫ সালের ১৬ নভেম্বর ছেলের বউ আসমাকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেন অভিযুক্ত মা খুকি বেগম। এরপর ১৮ নভেম্বর প্রেমিক জয়নাল গাজী ও তার সহযোগিদের দিয়ে আরিফকে ঘুমন্ত অবস্থায় হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে, দা দিয়ে কুপিয়ে মৃত্যু হয়েছে মনে করে ঘরের মেঝেতে ফেলে চলে যায়। পরদিন ১৯ নভেম্বর সকালে খুকি বেগম আরিফের স্ত্রী আসমাকে ফোন করে জানায় ডাকাতরা আরিফকে জখম করে ফেলে গিয়েছে। তাৎক্ষণিক আসমা স্বামীর বাড়িতে ফিরে এসে স্বামী আরিফকে উদ্ধার করে প্রথমে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে, পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেওয়ার পথে আরিফ মারা যান। এই ঘটনায় ওইদিনই নিহতের স্ত্রী আসমা শাশুড়ি খুকি বেগমসহ অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে হাইমচর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

এইচএসসির স্থগিত পরীক্ষার নতুন সময়সূচি প্রকাশ

সন্তান হত্যায় মাসহ দুজনের মৃত্যুদণ্ড, ২ জনের যাবজ্জীবন

প্রকাশের সময় : ০৪:৩২:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৩

চাঁদপুর জেলা প্রতিনিধি : 

চাঁদপুরের হাইমচরে আপন ছেলে মো. আরিফ হোসেনকে (২৭) হত্যার দায়ে মা খুকি বেগমসহ (৪৩) দুজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং সহযোগী দুই আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে প্রত্যেক আসামিকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

বুধবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (১) ফারহানা ইয়াসমিন এই রায় ঘোষণা করেন।

হত্যার শিকার আরিফ হোসেন জেলার হাইমচর উপজেলার দক্ষিণ আলগী ইউনিয়নের মাছুম খান বাড়ির মিজানুর রহমান খানের ছেলে।

অপর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মো. জয়নাল গাজী (২৪) পার্শ্ববর্তী ফরিদগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম লাড়ুয়া গ্রামের গাজী বাড়ির গণি গাজীর ছেলে।

আর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রাপ্তরা হলেন- ফরিদগঞ্জ উপজেলার উত্তর বিষকাটালি গ্রামের মোল্লা বাড়ির হোসেন মোল্লার ছেলে ইউছুফ মোল্লা (২৭) ও একই গ্রামের বিল্লাল মোল্লার ছেলে মাহবুব মোল্লা (২৬)।

আসামিদের মধ্যে ইউছুফ মোল্লা প্রথম থেকে পলাতক। বাকিরা জামিনে থাকলেও রায়ের সময় সকল আসামির অনুপস্থিতিতে রায় হয়। আসামি পক্ষের আইনজীবী ছিলেন মো. জয়নাল আবেদীন।

মামলায় সরকার পক্ষের আইজীবী সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) বদিউজ্জামান কিরন জানান, এটি একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড। মায়ের পরকীয়ার জন্য এই ঘটনা ঘটে। মামলাটি দীর্ঘ ৭ বছরের অধিক সময় চলাকালীন আদালত ২০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। সাক্ষ্যগ্রহণ ও মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা করে আসামিদের অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় এই রায় দেন।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, হত্যার শিকার আরিফ হোসেন তার মা খুকি বেগমের সঙ্গে আসামি জয়নাল গাজীর পরকিয়া সম্পর্কের কথা জানতেন। এই বিষয়ে মা-ছেলের সম্পর্কের অবনতি হয়। ২০১৫ সালের শুরুতে ছেলে আরিফ হোসেন প্রেমের সম্পর্কে পার্শ্ববর্তী উত্তর আলগী ইউনিয়নের আব্দুস সালাম মিজির মেয়ে আসমা আক্তারকে বিয়ে করেন। এরপর মা, ছেলে ও ছেলের বউয়ের বিভিন্ন বিষয়ে ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকতো। এর জের ধরে মা খুকি বেগম ছেলেকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

এর অংশ হিসেবে ২০১৫ সালের ১৬ নভেম্বর ছেলের বউ আসমাকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেন অভিযুক্ত মা খুকি বেগম। এরপর ১৮ নভেম্বর প্রেমিক জয়নাল গাজী ও তার সহযোগিদের দিয়ে আরিফকে ঘুমন্ত অবস্থায় হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে, দা দিয়ে কুপিয়ে মৃত্যু হয়েছে মনে করে ঘরের মেঝেতে ফেলে চলে যায়। পরদিন ১৯ নভেম্বর সকালে খুকি বেগম আরিফের স্ত্রী আসমাকে ফোন করে জানায় ডাকাতরা আরিফকে জখম করে ফেলে গিয়েছে। তাৎক্ষণিক আসমা স্বামীর বাড়িতে ফিরে এসে স্বামী আরিফকে উদ্ধার করে প্রথমে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে, পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেওয়ার পথে আরিফ মারা যান। এই ঘটনায় ওইদিনই নিহতের স্ত্রী আসমা শাশুড়ি খুকি বেগমসহ অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে হাইমচর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে।