নিজস্ব প্রতিবেদক :
সন্তান পরীক্ষায় যেমনই ফল করুক, সেটি অন্যের সঙ্গে তুলনা না করে বরং সন্তানের দিকে আরও বেশি যত্নশীল হতে অভিভাবকদের পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার (২৮ জুলাই) সকালে গণভবনে চলতি বছরের মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল হস্তান্তর অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। ২০২৩ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। এবারের পরীক্ষায় গড়ে পাস করেছেন ৮০ দশমিক ৩৯ শতাংশ শিক্ষার্থী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্তান পরীক্ষায় যেমনই ফল করুক, অন্যের সঙ্গে তুলনা করে তাকে কষ্ট না দিয়ে বরং তার দিকে আরও বেশি যত্নশীল হতে হবে। অমুকের ছেলে ভালো করেছে, তুমি পারলা না কেন’, এই তুলনাটা যেন না করে। এটা করা ঠিক না। কারণ সবার সব রকম মেধা থাকে না, সবার সেই চিন্তাভাবনার শক্তি থাকে না। যার যেটা দক্ষতা, সে সেই অনুযায়ীই পড়বে। যতটুকু সম্ভব, তাদের সহযোগিতা করা উচিত।
অভিভাবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সন্তান পরীক্ষায় যেমনই ফল করুক, অন্যের সঙ্গে তুলনা করে তাকে কষ্ট না দিয়ে বরং তার দিকে আরও বেশি যত্নশীল হতে হবে। অমুকের ছেলে ভালো করেছে, তুমি পারলা না কেন’, এই তুলনাটা যেন না করে। এটা করা ঠিক না। কারণ সবার সব রকম মেধা থাকে না, সবার সেই চিন্তাভাবনার শক্তি থাকে না। যার যেটা দক্ষতা, সে সেই অনুযায়ীই পড়বে। যতটুকু সম্ভব, তাদের সহযোগিতা করা উচিত।
তিনি বলেন, অভিভাবকদের বলব, তাদের কখনো বকাবকি করবেন না। তাদেরও মনে কষ্ট আছে। তাদের আদর দিয়ে ভালোবাসা দিয়ে তারা যেন পড়াশোনায় মনোনিবেশ করে, সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন।
ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার দিকে বিশেষভাবে নজর দেওয়ার জন্য অভিভাবকদের তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্পদের মধ্যে শিক্ষা এমন একটা সম্পদ যেটা কেউ কেড়ে নিতে পারে না, সবসময় কাজে লাগবে।
সন্তানের খোঁজ রাখার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, অভিভাবকদের বলবো ছেলেমেয়েদের দিকে আরও বেশি নজর দিতে। ছেলেমেয়েরা কোথায় যাচ্ছে, কী করছে সেদিকে নজর দেওয়ার জন্য আমি অনুরোধ করবো।
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ‘অনেক মেধাবী’ হিসেবে বর্ণনা করে এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দরকার শিক্ষার গুণগত মান আরও উন্নত করা। সারা বিশ্বের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের ছেলেমেয়ারা যেন চলতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দরকার শিক্ষার গুণগত মান আরও উন্নত করা। সারাবিশ্বের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের ছেলেমেয়ারা যেন চলতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা কৃতকার্য হতে পারেনি, তাদের বলব- হতাশ না হয়ে আগামীবার আরও ভালোভাবে পাস করতে হবে, সেজন্য যেন তারা প্রস্তুত হতে পারে। একটু মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা করলেই তারা ভালো রেজাল্ট করতে পারবে। একটু পিছিয়ে পড়লেও ক্ষতি নেই, তারা আবার এগিয়ে যেতে পারবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা কৃতকার্য হতে পারেনি, তাদের বলব- হতাশ না হয়ে আগামীবার আরো ভালভাবে পাস করতে হবে, সেজন্য যেন তারা প্রস্তুত হতে পারে।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ২০২৩ সালে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনের ২০ লাখ ৭৮ হাজার ২১৬ জন পরীক্ষার্থী ছিল। এর মধ্যে ছাত্রের সংখ্যা হচ্ছে ১০ লাখ ২৪ হাজার ৯৮০ জন, যা ৪৯.৩২ শতাংশ। ছাত্রীর সংখ্যা হচ্ছে ১০ লাখ ৫৩ হাজার ২৪৬ জন, যা ৫০.৬৮ শতাংশ। ছেলের সংখ্যা কেন কমে যাচ্ছে, একটু ভেবে দেখা দরকার। এরা কি স্কুলে যাচ্ছে না? পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কেন কমে গেল? আমার মনে হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে তা ভালোভাবে দেখা দরকার।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমরা বিনামূল্যে পাঠ্যবই দিচ্ছি। করোনার সময়ও সঠিক সময়ে পাঠ্যবই তুলে দেওয়া হয়েছে। কোভিড- ১৯ এবং ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের ফলে সারাবিশ্বে মুদ্রাস্ফীতি এবং প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়েছে। এটা শুধু আমাদের দেশে নয়, ইউরোপ-আমেরিকায়ও একই অবস্থা। তার মধ্যেও আমরা বিনামূল্যে শিক্ষার উপকরণ বই বিতরণ করেছি। এখানে আমরা কোনো কার্পণ্য করিনি। যেটা প্রয়োজন সেটা আমরা দিতে পেরেছি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ ডিজিটালি করা হয়েছে। এজন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এখন শিক্ষার্থীদের স্কুলে গিয়ে খবর নিতে হবে না, ঘরে বসেই ফলাফল পেয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, দক্ষ জনগোষ্ঠী সবকিছুতে লাগে। তাই আমরা সবকিছু ডিজিটালাইজড করছি। এ পদ্ধতিতে দক্ষ জনগোষ্ঠী না হলে দেশ পরিচালনা করবে কে? ভবিষ্যতের দিকে লক্ষ্য রেখে এখন থেকেই আমাদের ছেলেমেয়েদের শিক্ষা, তাদের চিন্তা-চেতনা, রুচি ও মনন আধুনিক জ্ঞানে ভরিয়ে দিতে হবে। আধুনিক জ্ঞানসম্পন্ন জনশক্তি গড়ে তুলতে আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে।
দক্ষতা অর্জনের ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, এরাই তো হবে আগামী দিনে আমাদের ২০৪১ এর উন্নত বাংলাদেশ, স্মার্ট বাংলাদেশের কারিগর। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে মাথায় রেখে নিজেদের দক্ষ হয়ে গড়ে উঠতে হবে।
তিনি বলেন, আজকের শিক্ষার্থীরাই হবে আগামী দিনের দক্ষ কারিগর, যারা দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন এবং ফল প্রকাশের জন্য সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ দেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠান থেকে প্রধানমন্ত্রী ২০২৩ সালের সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি), দাখিল, এসএসসি ভোকেশনাল, দাখিল ভোকেশনাল পরীক্ষার ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেন।
ডিজিটাল পদ্ধতিতে ফল প্রকাশ কার্যক্রম উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফল প্রকাশ হয়ে গেছে। এখন সবাই ঘরে বসে ফল পেয়ে যাবে। বাবা-মা, অভিভাবক সকলেই সেটা দেখতে পারবেন।
ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর হাতে এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের সার্বিক পরিসংখ্যান তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এ সময় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী (নওফেল) উপস্থিত ছিলেন।
এরপর নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা এবং কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানরা তাদের নিজ নিজ বোর্ডের ফলাফলের পরিসংখ্যান প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।