নিজস্ব প্রতিবেদক :
সড়কে বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করায় সড়কের শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
সোমবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে ডিএমপির ট্রাফিক পক্ষ-২০২৪ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেছেন, বিভিন্ন দাবি-দাওয়া ও বৈধ-অবৈধ যানবাহনের আধিক্যের কারণে রাজধানীর সড়কের শৃঙ্খলা ভেঙে অসহনীয় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। ছাত্র-জনতাসহ নগরে বসবাসকারী জনসাধরণকে সচেতন ও সস্পৃক্ত করার মাধ্যমে ট্রাফিক শৃঙ্খলা উন্নয়ন সম্ভব।
তিনি বলেন, ছাত্র-জনতাসহ নগরে বসবাসকারী জনসাধরণকে সচেতন ও সস্পৃক্ত করার মাধ্যমে ট্রাফিক শৃঙ্খলা উন্নয়ন সম্ভব। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে ঢাকা মহানগর পুলিশ ১৫ দিনব্যাপী কর্মসূচি নিয়েছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এর ফলে ঢাকা মহানগরীর ট্রাফিক বিভাগের কাজে যেমন গতি আসবে, তেমনি ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে জনভোগান্তি কমে আসবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অবকাঠামো বৃদ্ধি পেলেও পরিবহন ব্যবস্থার সুশৃঙ্খল ও আধুনিকায়ন উল্লেখযোগ্যভাবে হয়নি। শহরের জনগণের জন্য সরকারি ও বেসরকারিভাবে সাশ্রয়ী ও আরামদায়ক যানবাহন উল্লেখযোগ্যভাবে দেওয়া সম্ভব হয়নি। পাশাপাশি একই সড়কে রিকশা ঠেলাগাড়িসহ অসংখ্য অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচল করে। মানুষ তার প্রয়োজনে এসব যানবাহনের দ্বারস্ত হচ্ছে। ফলে ঢাকা মহানগরীতে সুশৃঙ্খল ও কাঠামোগত ট্রাফিক ব্যবস্থা বাস্তবায়ন কঠিনতর হচ্ছে। অপরদিকে সময়ে সময়ে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া ও অস্থিরতার কারণে সড়কের শৃঙ্খলা ভেঙে যাচ্ছে। বৈধ-অবৈধ যানবাহনের আধিক্যের কারণে যানজটের আকার দিন দিন অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর ঢাকা শহরসহ সারা দেশের ট্রাফিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। দেশের আপামর জনগণের কথা বিবেচনা করে ছাত্র-জনতা ভলান্টিয়ার বেশে কয়েকদিন সুশৃঙ্খলভাবে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করে সড়ক ও পরিবহনের শৃঙ্খলা বজায় রাখে। বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকার ক্ষমতায় আসার পর পুলিশের সঙ্গে ছাত্র-জনতা ও সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গসহ নানা শ্রেণিপেশার লোকজনের কায়িক শ্রম ও মূল্যবান পরামর্শে ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা উন্নয়নের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ট্রাফিক বিভাগ বেআইনি যানবাহনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের সদস্যদের চেষ্টা সত্ত্বেও ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন আশানুরূপ হয়নি। ট্রাফিক সিগানাল দেশীয় প্রযুক্তির মাধ্যমে চালু করার জন্য একটি গবেষক দল কাজ করছে। আশা করি স্বল্প সময়ের মধ্যে এটা চালু হবে। এছাড়া সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাকে সম্পৃক্ত করে ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়নে বর্তমান সরকার কাজ করছে। শুধু সরকার কিংবা পুলিশের কাজ করার মাধ্যমে ঢাকা মহানগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থা আশানুরূপ উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। এ জন্য প্রয়োজন নগরীর প্রতিটি মানুষকে সম্পৃক্ত করা। রাস্তায় চলাচলের ক্ষেত্রে গাড়ির চালক ও ট্রাফিক পুলিশের যেমন দায়িত্ব রয়েছে, তেমনি নগরীর অধিবাসীদেরও ট্রাফিক আইন মেনে চলা একান্ত কর্তব্য।
তিনি বলেন, ২১ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ডিএমপির ‘ট্রাফিক পক্ষে’র কার্যক্রমে প্রাথমিকভাবে ৩০০ শিক্ষার্থীকে সম্মানীসহ যুক্ত করা হয়েছে। পরে এ সংখ্যা আরো বাড়ানো হবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এই ট্রাফিক পক্ষে এবং এরপরেও আমাদের সঙ্গে ছাত্র ভাইয়েরা থাকছেন। প্রথম অবস্থায় ৩০০ জন ছাত্র আমাদের সঙ্গে কাজ করবেন। পরে এ সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। তাদের আমরা একটা সম্মানী দেব, এ সম্মানীর পরিমাণটা এখানে বলতে চাইছি না। একটা রিজনেবল সম্মানী তাদের দেব। এই ছাত্র ভাইয়েরা যদি রাস্তায় থাকে… আপনারা দেখেছেন ৫ আগস্টের পরে তারা রাস্তায় ভালো কাজ করেছে। এখন আমাদের সঙ্গে যদি তারা কাজ করে হয়ত রাস্তার পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে প্রায় ২ কোটিরও বেশি মানুষ এ শহরে বসবাস করে। রাস্তা অপ্রতুল হওয়ায় যানবাহনের ধারণক্ষমতা কম। ঢাকায় যে পরিমাণ রাস্তা থাকা দরকার বাস্তবে তা নেই। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ঢাকামুখিতাও কমানো যাচ্ছে না। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, অবকাঠামো বৃদ্ধি পেলেও পরিবহন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা যায়নি। মূল সড়কে জনগণের জন্য সরকারি ও বেসরকারিভাবে আরামদায়ক যানবাহন উল্লেখযোগ্যভাবে দেওয়া সম্ভব হয়নি।
তিনি আরও বলেন, পাশাপাশি একই সড়কে রিকশা ঠেলাগাড়িসহ অসংখ্য অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচল করে। মানুষ তার প্রয়োজনে এসব যানবাহনের দ্বারস্থ হচ্ছে। ফলে ঢাকা মহানগরীতে সুশৃঙ্খল ট্রাফিক ব্যবস্থা বাস্তবায়ন কঠিনতর হচ্ছে। অপরদিকে সময়ে সময়ে বিভিন্ন দাবি দাওয়ার কারণে সড়কে শৃঙ্খলা ভেঙে যাচ্ছে এবং বৈধ-অবৈধ যানবাহনের আধিক্যের কারণে যানজট দিন দিন অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাচ্ছে।
ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে ‘ফ্যাসিবাদ সরকারের’ পতনের পর ঢাকাসহ সারাদেশের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়ার কথা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, দেশের আপামর জনসাধারণের কথা বিবেচনা করে ছাত্ররা স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে সড়কে ট্রাফিক দায়িত্ব পালন করে শৃঙ্খলা বজায় রাখে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর পুলিশের সঙ্গে ছাত্র-জনতা, সুশীল সমাজের ব্যক্তিরাসহ নানা শ্রেণি-পেশার লোকজন তাদের মূল্যবান পরামর্শে ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা উন্নয়নের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ট্রাফিক বিভাগ বেআইনি যানবাহনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছে। মেট্রোপলিটন পুলিশের চেষ্টা স্বত্বেও ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন আশানুরূপ হয়নি। ট্রাফিক সিগন্যাল দেশীয় প্রযুক্তির মাধ্যমে চালুর জন্য একটি গবেষকদল কাজ করছে। স্বল্প সময়ের মধ্যে এটি চালু হবে।
তিনি বলেন, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাকে সম্পৃক্ত করে ট্রাফিক ব্যবস্থা উন্নয়নে বর্তমান সরকার কাজ করছে। শুধু সরকার কিংবা পুলিশের মাধ্যমে কাজ করে ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থার আশানুরূপ উন্নয়ন সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন নগরে বসবাসকারী প্রত্যেকটি জনগণের সস্পৃক্ত করা।
ট্রাফিক শৃঙ্খলাকে কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে আনার জন্য ছাত্র-জনতাসহ নগরের জনসাধারণকে সচেতন ও সম্পৃক্তকরণের মাধ্যমে নগরের ট্রাফিক শৃঙ্খলা উন্নয়ন সম্ভব। এ লক্ষ্য সামনে রেখে ডিএমপি ২১ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত পক্ষকালব্যপী একটি কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, এ কর্মসূচির মাধ্যমে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের কাজে যেমন গতিশীল হবে, তেমনি ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা উন্নয়ন ঘটার মাধ্যমে জনভোগান্তি অনেক কমে আসবে।
ডিএমপি কমিশনার মো. মাইনুল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধান উপদেষ্টার প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়ন বিষয়ক বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম।
এর আগে ট্রাফিক পক্ষ উপলক্ষে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা করা হয়। পরে বেলুন উড়িয়ে ট্রাফিক পক্ষের উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিরা।
ট্রাফিক পক্ষ-২০২৪ উদযাপন উপলক্ষে ১৫ দিনব্যাপী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। আগামী ২১ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত এই ট্রাফিক পক্ষ উদযাপন করা হবে।