মানিকগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি :
আগস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার শঙ্কার কথা জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, সজাগ না হলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। সারাদেশে যত মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে তার মধ্যে ৬০ ভাগই ঢাকার। এ পর্যন্ত ৫৭টি জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। সবাই যদি সজাগ না হই তাহলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।
রোববার (৯ জুলাই) দুপুরের দিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মানিকগঞ্জ গড়পাড়া নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে ডেঙ্গু অনেক বেড়েছে। এরই মধ্যে ৬৭ জন আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। আরও ১২ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছে এবং আড়াই হাজার রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। ৯ হাজারের বেশি রোগী চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি। বৃষ্টি হওয়াতে বিভিন্নস্থানে পানি জমাট বেধে মশার বংশ বিস্তার বৃদ্ধি পেয়েছে আর এতে করে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে।
জাহিদ মালেক বলেন, আমরা ডেঙ্গু মোকাবিলা করে চলছি। সিটি করপোরেশন, পৌরসভাকে আহ্বান করছি, তারা যেন বেশি বেশি করে স্প্রে করে। শহরের যেসব স্থানে বৃষ্টির পানি জমাট বেধে থাকে এবং বসত বাড়ির উঠানের পানি জমাট থাকলে তা অপসারণ করতে হবে। এই পানি অপসারণ না করলে ডেঙ্গুর আরও ভয়াবহ অবস্থা হতে পারে। আমি মনে করি সকলে মিলে কাজ করলে এই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবো।
মন্ত্রী আরও বলেন, গত বছর এই সময় ডেঙ্গুর ভালো অবস্থা ছিল। তবে এ বছর ডেঙ্গু রোগ বেশি বেড়ে গেছে। সামনের আরও দুই মাসে ডেঙ্গু রোগী বাড়তে পারে। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের সকলকে সজাগ থাকতে হবে। যারা একবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে তারা দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলে তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি অনেকাংশেই বেশি। সারাদেশের হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু ইউনিট রয়েছে, প্রশিক্ষিত নার্স ও ডাক্তার আছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত স্বাস্থ্য বিভাগ।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক-নার্সদের প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ সারাদেশের হাসপাতালগুলোতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে, ডেঙ্গু মোকাবিলা করা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এ জন্য সবাইকে সচেতন হয়ে কাজ করতে হবে। বাড়ির আঙিনা পরিষ্কার রাখতে হবে। এডিস মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস করতে হবে।
সিটি করপোরেশনগুলোকে বেশি বেশি মশা নিধনের ওষুধ স্প্রে করার আহ্বান জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, বহুতল ভবনে ডেঙ্গু দেখা দিচ্ছে বেশি। সেখানে গ্যারেজ এবং ড্রেন থাকে। নির্মাণাধীন ভবনেও পানি জমে এডিস মশার জন্ম হয়।
সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও তার পরিবারকে জড়িয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই প্রতিষ্ঠান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে মানিকগঞ্জে স্থাপন করার চেষ্টা করেছি। একনেকে বিষয়টি পাস হয়েছে। ইডিসিএল সবকিছু দেখে তাদের সুবিধামতো একটি জায়গা বেছে নিয়েছিল। আপনারা জানেন, মৌজার দরটা আইন মন্ত্রণালয় ও শ্রেণি ঠিক করে ভূমি মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো হাত নেই। যে জমির কথা বলা হয়েছে, সরকারি মৌজা দর হিসাবে ১ লাখ টাকা করে ধরা আছে। সেখানে বর্তমান বাজারদর আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা। এ প্রজেক্টের জন্য এখন পর্যন্ত কোনো জমি অধিগ্রহণ করা হয়নি, এমনকি আর্থিক লেনদেনও হয়নি। তার জন্য সুনিশ্চিতভাবে এখনও বলতে পারছি না কখন কাজটি শুরু হবে। আমরা চেষ্টা করব যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটি সিদ্ধান্ত বের করে কাজটা করা।
তিনি আরও বলেন, আফসোসের বিষয়টা হচ্ছে, ১ বছর পার হয়ে গেছে ২ হাজার কোটি টাকার প্রজেক্টটি এখনও শুরু হচ্ছে না। প্রায় ২০০ কোটি টাকা ইতোমধ্যে লোকসান হয়ে গেছে। নতুন করে ইডিসিএল জায়গা নিতে গেলে তাদের প্রায় ২ বছর সময় বেশি লাগবে। এতে সরকারের আরও ৫০০ কোটি টাকা লোকসান হবে। আমাদের একটা প্রচেষ্টা আছে এখানে যেন প্রতিষ্ঠানটা হয়। এখানে প্রতিষ্ঠানটা হলে অনেক মানুষের চাকরির ব্যবস্থা হবে। এখানে যদি প্রতিষ্ঠানটি না হয় তাহলে মানিকগঞ্জের লোক বঞ্চিত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুলতানুল আজম খান আপেল, সাংগঠনিক সম্পাদক সুদের সাহা, জেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি বাবুল সরকার, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আফসার সরকার, ছাত্রলীগের সভাপতি এম এ সিফাত কোরাইশী সুমন ও সাধারণ সম্পাদক রাজিদুল ইসলামসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।