সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের অধীনে বর্তমানে চলমান প্রকল্প রয়েছে ২০১টি। এসব প্রকল্পের পিডিদের ঢাকায় অবস্থানের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। দুই মাসের মধ্যে তাদের ঢাকা ত্যাগের নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। সওজের ঢাকার বাইরের বিভিন্ন প্রকল্পের পরিচালকদের (পিডি) কার্যালয় ঢাকায় অবস্থিত। এমনকি গত বছর নতুন কয়েকটি প্রকল্পের পিডির অফিসও রাজধানীর তেজগাঁওয়ে নবনির্মিত সওজ ভবনে স্থানান্তর করা হয়েছে।
এদিকে ৫০ কোটি টাকা বা তদূর্ধ্ব ব্যয়ের উন্নয়ন প্রকল্পে পূর্ণকালীন পিডি নিয়োগের বিধান আছে। এ সিলিং বাড়িয়ে ৩০০ কোটি টাকা করাসহ পিডি নিয়োগে বিভিন্ন শর্ত শিথিল করার সুপারিশ করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জয়দেবপুর-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা চার লেন ও এলেঙ্গা-হাটিকামরুল-রংপুর চার লেন প্রকল্পের অফিস বর্তমানে ঢাকায় সওজের প্রধান কার্যালয়ে। এছাড়া গত বছর সেপ্টেম্বরে কমপক্ষে ছয়টি প্রকল্পের পিডির অফিস তেজগাঁওয়ে সওজের প্রধান কার্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়। এসব প্রকল্প যথাক্রমে পিরোজপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রংপুর, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর এলাকায় বাস্তবায়নাধীন।
এর বাইরেও বেশকিছু বড় প্রকল্পের কার্যালয় ঢাকাতেই অবস্থিত। একইভাবে শেষ হওয়া ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন ও জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ চার লেন প্রকল্পের অফিসও ঢাকাতেই ছিল। যদিও এতে প্রকল্পের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন ব্যাহত হয় বলে বিভিন্ন সময় অভিযোগ এসেছে। এমনকি পরিকল্পনামন্ত্রীও এ বিষয়ে আপত্তি তুলেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে সম্প্রতি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
গত ১১ মার্চ এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। এতে বলা হয়েছে, সওজ অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন চলমান প্রকল্পগুলোয় নিয়োজিত প্রকল্প পরিচালকদের অফিস ঢাকায় অবস্থিত হওয়ায় পরিকল্পনামন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্ত এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী পিডিকে প্রকল্প এলাকায় থাকা বাঞ্ছনীয়।
এ অবস্থায় ঢাকায় অবস্থানরত পিডিদের কার্যালয় আগামী দুই মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প এলাকায় স্থানান্তর করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের কার্যক্রম ও এডিপি শাখাকে জানানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে প্রকল্পের প্রাক্কলিত মূল্য ৫০ কোটি টাকা বা তার বেশি হলে একজন পূর্ণকালীন প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নিয়োগের বিধান রয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের। তা পালনে নতুন করে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে সওজের একাধিক প্রকল্পে একজন পিডির উদাহরণ রয়েছে অনেকগুলোই।
এর মধ্যে সওজের দুই জোনের দু’জন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর অধীনে রয়েছে ১২টি করে প্রকল্প। আরেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর অধীনে রয়েছে ৯টি প্রকল্প। সব মিলিয়ে মাত্র তিনজন কর্মকর্তা সওজের ৩৩টি প্রকল্পে পিডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এর বাইরে সওজের অন্য সাত জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ৭ জন ৪৫ প্রকল্পে পিডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আর সওজের সর্বমোট ২০১টি প্রকল্পের জন্য পিডি রয়েছেন মাত্র ৭৭ জন। এর মূল কারণ, পিডি নিয়োগে উপযুক্ত কর্মকর্তার স্বল্পতা। গত মাসে অনুষ্ঠিত একজন কর্মকর্তাকে একটি প্রকল্পের পিডি নিয়োগ-সংক্রান্ত বৈঠকে এসব তথ্য জানানো হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে পিডি নিয়োগের শর্ত শিথিলসহ বেশকিছু সুপারিশ বৈঠকে উঠে আসে। চিঠির মাধ্যমে তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও পরিকল্পনা কমিশনকে জানানো হয়েছে। সুপারিশের মধ্যে রয়েছে প্রকল্প সংখ্যা সওজের উপযুক্ত কর্মকর্তার সংখ্যার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কমিয়ে আনা ও গুচ্ছ প্রকল্প গ্রহণ করা, যাতে সওজের প্রকল্প সংখ্যা ১০০ বা এর নিচে সীমিত রাখা হয়।
দ্বিতীয়ত, অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী (প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় দক্ষ) সমন্বয়ে একটি পুল গঠন করে সেখান থেকে পিডি নিয়োগ করা যেতে পারে। তবে এ ব্যবস্থা করতে গেলে প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) অর্থের সংস্থান রাখতে হবে।
তৃতীয়ত, সওজ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের যেসব কর্মকর্তার কোনো প্রকল্প নেই তাদের পিডি হিসেবে নিয়োগ করা। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সড়ক জোন/বিভাগের কর্মকর্তাকে উপ/অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক/এপিডি হিসেবে পদায়ন করা।
চতুর্থত, সওজের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে পিডি নিয়োগ একান্ত সম্ভব না হলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রকৌশল জ্ঞান ও দক্ষতাসম্পন্ন কর্মকর্তাকে প্রেষণে পিডি হিসেবে নিয়োগ করা। এক্ষেত্রে উপ-প্রকল্প পরিচালক/অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক সওজের প্রকৌশলীদের নিয়োজিত করা। আর সর্বশেষ সুপারিশ ছিল ৫০ কোটি টাকা বা তদূর্ধ্ব প্রাক্কলিত ব্যয়ে অধিক প্রকল্পের পরিবর্তে পূর্ণকালীন পিডি নিয়োগে সিলিং ৩০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা।
জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের কার্যক্রম ও এডিপি শাখার ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছর সমাপ্ত হতে আর মাত্র তিন মাস আছে। এ পর্যায়ে বিভিন্ন সড়ক জোনে চলমান প্রকল্পে পিডি পরিবর্তন করা হলে মাঠ পর্যায়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তাই পিডিদের দায়িত্ব পুনর্বণ্টন প্রস্তাব আগামী বছরের ১ জুলাই থেকে কার্যকর করার সুপারিশ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে একাধিক প্রকল্পে পিডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা কয়েকজন কর্মকর্তার দায়িত্ব পুনর্বণ্টন করা হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে প্রতিটি সড়ক জোনে ছোট ছোট প্রকল্প গ্রহণের পরিবর্তে জোনভিত্তিক গুচ্ছ প্রকল্প গ্রহণের ওপর বেশি জোর দেয়া হচ্ছে।