নিজস্ব প্রতিবেদক :
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি ড. আলী রীয়াজ বলেন, সংস্কার প্রক্রিয়ার সাফল্যের ওপরই নির্ভর করবে আগামীর বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। এটা বাস্তবায়নে সকলের সহায়তা প্রয়োজন।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকালে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বৈঠক করছে কমিশন। সংস্কার প্রক্রিয়ায় ভিন্নমত ও নোট অব ডিসসেন্টসহ বেশির ভাগ আলোচনায় একমত রাজনৈতিক দলগুলো।
ড. আলী রীয়াজ বলেন, ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদ বাস্তবায়ন কিংবা রাষ্ট্র সংষ্কার বিষয়ে কোনো কিছু কাউকে চাপিয়ে দিবেনা। রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে সরকার। এ প্রক্রিয়া নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামতও গ্রহণ করেছে ঐকমত্য কমিশন।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের মাধ্যমে আগামীর পথরেখা তৈরি হবে। দুয়েকটি বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট থাকলেও ৮৪টি বিষয়ের অধিকাংশ বিষয়েই দলগুলো একমত হয়েছে। তার মানে এক ধরনের রাজনৈতিক ঐকমত্য হয়েছে।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, জুলাই সদন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কমিশনের পক্ষ থেকে কোনো কিছু চাপিয়ে দেয়া হবে না। বাস্তবায়ন করার ক্ষমতা কমিশনের কাছে নেই। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য সকল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে কমিশন সরকারকে জানাতে পারে। আমরা সেই পক্রিয়াটা অনুসরণ করছি।
আলী রীয়াজ বলেন, সর্বশেষ আলোচনায় নোট অফ ডিসেন্টসহ কিছু কিছু জায়গায় আমার একমত হতে পেরেছিলাম। তার একটি খসড়া আমরা আপনাদের (রাজনৈতিক দলগুলো) দিয়েছিলাম, আপনারা মতামত দিয়েছেন। অঙ্গীকার নামার বিষয়ে বেশ কিছু আলোচনা হয়েছে। আশা করছি চূড়ান্ত খড়সা বিকাল নাগাদ পৌঁছে দেয়া যাবে।
তিনি বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ার নিয়ে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি প্যানেল করে আমরা একাধিকবার আলোচনা করেছি। এই প্যানেলে দুইজন সাবেক বিচারপতি, তিনজন আইনজীবী, একজন আইনের শিক্ষক ছিলেন। প্যানেলে আলোচনার একপর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেলকে যোগ দিতে বলেছিলাম, তিনি যোগ দিয়েছিলেন। আইন উপদেষ্টাও একটা বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন। বিশেষজ্ঞ প্যানেল ও রাজনৈতিক দলের মতামতের ভিত্তিতে বুঝতে পেরেছি জুলাই সনদের কিছু কিছু বিষয় অন্তর্বর্তী সরকার বাস্তবায়ন করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে আমরা কমিশনের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে চাচ্ছি না। আমরা চাচ্ছি বিশেষজ্ঞ প্যানেল এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য সরকারকের কাছে সুপারিশ করতে।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ৩১ জুলাই আনুষ্ঠানিক বৈঠক শেষ হলেও সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে ইতোমধ্যে একাধিক অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে। বিশেষ করে অঙ্গীকারনামা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে।
এ নিয়ে বিশেষজ্ঞ প্যানেলের ২ সাবেক বিচারপতি, তিনজন আইনজীবী ও ২ জন আইনের শিক্ষক মতামত দিয়েছেন। অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গেও পরামর্শ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
আলী রীয়াজ বলেন, এই প্রক্রিয়ায় কমিশন আসলে নিজের পক্ষ থেকে কিছু চাপিয়ে দিতে চায় না। অনেকে বলেছেন কিছু বিষয়ো এই সরকারও বাস্তবায়ন করতে পারে। তবে আজ আলোচনা শেষে সব রাজনৈতিক দলোর অবস্থান সরকারকে জানাতে পারবো। সে বিষয়টি যত দ্রুত সম্পন্ন করতে পারবো, তত দ্রুত সরকারের কাছে পৌঁছে দিতে দেওয়া সম্ভব হবে।
তিনি প্রতিটি রাজনৈতিক দলের অব্যাহত ও দৃঢ় সহযোগিতার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
বৈঠকে কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত রয়েছেন বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।