Dhaka মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সংস্কার ও মেরামত কাজ শেষ না করে লাপাত্তা ঠিকাদার, ভোগান্তি এলাকাবাসী

ময়মনসিংহ জেলা প্রতিনিধি : 

ময়মনসিংহ সদরের শম্ভূগঞ্জ থেকে বোররচর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়কের মাঝপথে চার কিলোমিটার সড়ক সংস্কার ও মেরামত কাজ শুরু করেও শেষ না করে লাপাত্তা হয়ে যান ঠিকাদার। ফলে প্রায় তিন বছর ধরে এলাকাবাসী চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, ঠিকাদার ও এলজিইডির গাফিলতির কারণেই এটি দুর্ভোগের সড়কে পরিণত হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, চর ঈশ্বরদিয়া ইউনিয়নের শেষ সীমানার পর থেকে জয়বাংলা বাজার পর্যন্ত চার কিলোমিটার সড়কের সংস্কার ও মেরামত কাজের জন্য সড়কজুড়ে ইটের খোয়া বিছানো হয়। দীর্ঘদিন ধরে ইটের খোয়া পড়ে থাকায় বিভিন্ন পয়েন্টে অসংখ্য ছোট-বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। কিছু খানাখন্দ ধীরে ধীরে বড় আকার ধারণ করেছে। ঝুঁকির মধ্যেই হেলেদুলে চলছে সব ধরনের ছোট-বড় যানবাহন।

স্থানীয়রা জানান, একমাত্র এই সড়কটি দিয়েই সদরের চারটি ইউনিয়নের লোকজন ময়মনসিংহ শহরে যাতায়াত করেন। জেলার তারাকান্দা, ফুলপুরের কয়েকটি গ্রামের লোকজনসহ শেরপুরের নকলা উপজেলার অনেকে মোটরসাইকেলে দ্রুত শহরে প্রবেশ করতে এই সড়ক ব্যবহার করেন। কিন্তু সড়কের বেহাল দশায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সবাইকে। সবজি ও কৃষিপণ্য নিয়ে সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছানো যাচ্ছে না। বেড়েছে পরিবহন খরচও। প্রতিদিন সড়কের খানাখন্দে পড়ে রাস্তার ওপর বিকল হচ্ছে নানা যানবাহন। ভোগান্তিতে পড়ছেন লক্ষাধিক মানুষ।

কথা হয় কৃষক মুরশেদ আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, সদর উপজেলার চরাঞ্চলের কয়েকটি ইউনিয়নে প্রচুর সবজি উৎপাদন হয়। এগুলো যানবাহনে করে ময়মনসিংহ শহরসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলার বাজারে নিয়ে বিক্রি করা হয়। কিন্তু সড়কটি বেহাল থাকার কারণে পরিবহন ব্যয় বেড়েছে। ফলে কৃষকরা পাইকারদের কাছ থেকে ন্যায্য দাম পাচ্ছে না।

অটোরিকশাচালক মোফাজ্জল হোসেন বলেন, বেহাল সড়কের কারণে প্রসূতি নারীদের যথাসময়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া যায় না। সম্প্রতি এক প্রসূতিকে গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়ার সময় গাড়িতেই সন্তান প্রসব হয়েছে। সড়কটির বিভিন্ন পয়েন্টে সৃষ্টি হওয়া খানাখন্দে চাকা পড়ে অটোরিকশা উল্টে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে অহরহ। খানাখন্দে পানি জমি সড়কটি পরিণত হয়েছে মরণফাঁদে।

ট্রাকচালক সাইদুল মিয়া বলেন, ইটের খোয়া বিছানো এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে সময় বেশি লাগছে। এতে তেল খরচও বাড়ছে। এছাড়াও গাড়ির নাট-বোল্ট খুলে পড়ে যাচ্ছে। পাতি বেঁকে যাওয়াসহ মাঝেমধ্যে চাকা গর্তে পড়ে গাড়ি সড়কেই বিকল হয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মামুনুর রশীদ বলেন, এই চার কিলোমিটার সড়ক এলাকাবাসীর জন্য এখন ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সড়ক সংস্কার কাজ ফেলে রাখায় এলাকার অনেক মানুষকে ঘুরপথে ময়মনসিংহ সদরে যাতায়াত করতে হচ্ছে। প্রসূতিসহ জরুরি রোগী নিয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতেও শঙ্কা কাজ করছে। অথচ প্রায় তিন বছরেও এলজিইডি এই চার কিলোমিটার সড়ক সংস্কার কাজে আন্তরিকতার প্রমাণ দেখাতে পারেনি। ঠিকাদার ও এলজিইডির স্থানীয় কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণেই মানুষের এই ভোগান্তি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২২ সালে ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকায় সড়ক সংস্কার ও মেরামতের এই কাজটি পেয়েছিল সাদিয়া অ্যান্ড সামিয়া এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ইটের খোয়া ফেলে সংস্কার কাজ শুরুর পরই লাপাত্তা হন ঠিকাদার সাইফুল ইসলাম।

সড়কের কাজ শেষ না করেই লাপাত্তা হওয়ার কারণ জানতে ঠিকাদার সাইফুল ইসলামের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

তবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ময়মনসিংহের নির্বাহী প্রকৌশলী সালমান রহমান রাসেল বলেন, সড়কটি দীর্ঘদিন যাবত এভাবে থাকায় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়ে মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে। ফলে সড়কটি দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। কাজ শেষ হলে মানুষের দুর্ভোগ থাকবে না।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

সংস্কার না হওয়ায় খানাখন্দে চলাচলে অনুপযোগী, দুর্ভোগ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের

সংস্কার ও মেরামত কাজ শেষ না করে লাপাত্তা ঠিকাদার, ভোগান্তি এলাকাবাসী

প্রকাশের সময় : ১২:৫৮:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫

ময়মনসিংহ জেলা প্রতিনিধি : 

ময়মনসিংহ সদরের শম্ভূগঞ্জ থেকে বোররচর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়কের মাঝপথে চার কিলোমিটার সড়ক সংস্কার ও মেরামত কাজ শুরু করেও শেষ না করে লাপাত্তা হয়ে যান ঠিকাদার। ফলে প্রায় তিন বছর ধরে এলাকাবাসী চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, ঠিকাদার ও এলজিইডির গাফিলতির কারণেই এটি দুর্ভোগের সড়কে পরিণত হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, চর ঈশ্বরদিয়া ইউনিয়নের শেষ সীমানার পর থেকে জয়বাংলা বাজার পর্যন্ত চার কিলোমিটার সড়কের সংস্কার ও মেরামত কাজের জন্য সড়কজুড়ে ইটের খোয়া বিছানো হয়। দীর্ঘদিন ধরে ইটের খোয়া পড়ে থাকায় বিভিন্ন পয়েন্টে অসংখ্য ছোট-বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। কিছু খানাখন্দ ধীরে ধীরে বড় আকার ধারণ করেছে। ঝুঁকির মধ্যেই হেলেদুলে চলছে সব ধরনের ছোট-বড় যানবাহন।

স্থানীয়রা জানান, একমাত্র এই সড়কটি দিয়েই সদরের চারটি ইউনিয়নের লোকজন ময়মনসিংহ শহরে যাতায়াত করেন। জেলার তারাকান্দা, ফুলপুরের কয়েকটি গ্রামের লোকজনসহ শেরপুরের নকলা উপজেলার অনেকে মোটরসাইকেলে দ্রুত শহরে প্রবেশ করতে এই সড়ক ব্যবহার করেন। কিন্তু সড়কের বেহাল দশায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সবাইকে। সবজি ও কৃষিপণ্য নিয়ে সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছানো যাচ্ছে না। বেড়েছে পরিবহন খরচও। প্রতিদিন সড়কের খানাখন্দে পড়ে রাস্তার ওপর বিকল হচ্ছে নানা যানবাহন। ভোগান্তিতে পড়ছেন লক্ষাধিক মানুষ।

কথা হয় কৃষক মুরশেদ আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, সদর উপজেলার চরাঞ্চলের কয়েকটি ইউনিয়নে প্রচুর সবজি উৎপাদন হয়। এগুলো যানবাহনে করে ময়মনসিংহ শহরসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলার বাজারে নিয়ে বিক্রি করা হয়। কিন্তু সড়কটি বেহাল থাকার কারণে পরিবহন ব্যয় বেড়েছে। ফলে কৃষকরা পাইকারদের কাছ থেকে ন্যায্য দাম পাচ্ছে না।

অটোরিকশাচালক মোফাজ্জল হোসেন বলেন, বেহাল সড়কের কারণে প্রসূতি নারীদের যথাসময়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া যায় না। সম্প্রতি এক প্রসূতিকে গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়ার সময় গাড়িতেই সন্তান প্রসব হয়েছে। সড়কটির বিভিন্ন পয়েন্টে সৃষ্টি হওয়া খানাখন্দে চাকা পড়ে অটোরিকশা উল্টে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে অহরহ। খানাখন্দে পানি জমি সড়কটি পরিণত হয়েছে মরণফাঁদে।

ট্রাকচালক সাইদুল মিয়া বলেন, ইটের খোয়া বিছানো এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে সময় বেশি লাগছে। এতে তেল খরচও বাড়ছে। এছাড়াও গাড়ির নাট-বোল্ট খুলে পড়ে যাচ্ছে। পাতি বেঁকে যাওয়াসহ মাঝেমধ্যে চাকা গর্তে পড়ে গাড়ি সড়কেই বিকল হয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মামুনুর রশীদ বলেন, এই চার কিলোমিটার সড়ক এলাকাবাসীর জন্য এখন ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সড়ক সংস্কার কাজ ফেলে রাখায় এলাকার অনেক মানুষকে ঘুরপথে ময়মনসিংহ সদরে যাতায়াত করতে হচ্ছে। প্রসূতিসহ জরুরি রোগী নিয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতেও শঙ্কা কাজ করছে। অথচ প্রায় তিন বছরেও এলজিইডি এই চার কিলোমিটার সড়ক সংস্কার কাজে আন্তরিকতার প্রমাণ দেখাতে পারেনি। ঠিকাদার ও এলজিইডির স্থানীয় কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণেই মানুষের এই ভোগান্তি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২২ সালে ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকায় সড়ক সংস্কার ও মেরামতের এই কাজটি পেয়েছিল সাদিয়া অ্যান্ড সামিয়া এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ইটের খোয়া ফেলে সংস্কার কাজ শুরুর পরই লাপাত্তা হন ঠিকাদার সাইফুল ইসলাম।

সড়কের কাজ শেষ না করেই লাপাত্তা হওয়ার কারণ জানতে ঠিকাদার সাইফুল ইসলামের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

তবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ময়মনসিংহের নির্বাহী প্রকৌশলী সালমান রহমান রাসেল বলেন, সড়কটি দীর্ঘদিন যাবত এভাবে থাকায় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়ে মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে। ফলে সড়কটি দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। কাজ শেষ হলে মানুষের দুর্ভোগ থাকবে না।