Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সংস্কারের অভাবে আয়রন ব্রিজের বেহাল দশা, চরম ভোগান্তি স্থানীয়রা

ঝালকাঠি জেলা প্রতিনিধি : 

ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলায় নাচনমহল ইউনিয়নে প্রায় ৩০ বছর আগে নির্মিত ভবানীপুর-চাঁদপুরাসহ চার ইউনিয়নের সংযোগস্থলের আয়রন ব্রিজটির বেহাল দশা। এ অবস্থায় স্থানীয় লোকজনের চলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। দুই যুগ পেরিয়ে গেলেও জরাজীর্ণ ব্রিজটি সংস্কারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বর্তমান পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেতুটি পারাপার হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, নাচনমহল ইউনিয়নের ভবানীপুর এবং চাঁদপুরা গ্রামের খোকন হাওলাদারের বাড়ি সংলগ্ন খালের উপর প্রায় ৩০ বছর আগে আয়রন ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়। নির্মাণে বেশ কয়েকবছর পর বন্যার পানির চাপে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ব্রিজের ওপর দুই পাশে সিমেন্টের তৈরি পাটাতন ধসে পড়ে ও লোহার খুঁটিগুলো বাঁকা হয়ে যায়।

সিমেন্টের পাটাতনের স্থানে কাঠের পাটাতন দিয়ে চলাচল করা হচ্ছে বহুদিন ধরে। তবে সময়ের কষাঘাতে সেগুলোও বাঁকা হয়ে গেছে। বর্তমানে ব্রিজটি যেন মরনফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এলাকাবাসীর আশঙ্কা, যেকোনো মুহূর্তে ব্রিজটি ধসে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

এদিকে, বিকল্প কোনো যাতায়াত পথ না থাকায় বিপদ আরও বেশি স্থানীয়দের। বড় ধরনের ঝুঁকি আছে জেনেও উপায় না পেয়ে স্থানীয় কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীসহ সব বয়সী লোকজন বাধ্য হয়ে ব্রিজটি ব্যবহার করছেন। ব্রিজের চাঁদপুরা অংশে অবস্থিত চাঁদপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ভবানিপুর অংশে ভবানিপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, জামে মসজিদ, সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের মন্দির এবং ঐতিহবাহী ভবানিপুর বাজার।

চাঁদপুরা গ্রামের বাসিন্দা রাকিব হাসান বাবু বলেন, ভাঙা ব্রিজটি নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তেমন কোনো তৎপরতা দেখায়নি। দুই পাশের নড়বড়ে রেলিং ধরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের পারাপার হতে হয়।

ভবানিপুর গ্রামের সজিব হাওলাদার জানান, ব্রিজটিতে মানুষ উঠলে কখনো ডানে অথবা কখনো বামে কাৎ হয়ে যায়। ব্রিজটি মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কোনো মাথা ব্যথা নেই। ১০/১৫ বছর ধরে শুনছি ব্রিজটি মেরামত করা হবে। কিন্তু কবে তা শুরু হবে, কেউ বলতে পারে না।

স্থানীয় সমাজসেবক ইঞ্জিনিয়ার মো. রুবেল মোল্লা বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ আয়রন ব্রিজটি সংস্কার না হওয়ায় জেলা শহরসহ চার ইউনিয়নের মানুষের ভোগান্তিতে আছে। জনগনের স্বার্থে ব্রিজটির সংস্কার জরুরি।

ইউপি সদস্য মো. নান্না মিয়া হাওলাদার বলেন, বন্যায় যখন ব্রিজটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তার কিছুদিন পরে এলাকাবাসী মিলে টাকা তুলে কিছুটা মেরামত করি। সেটাও বেশিদিন টেকেনি। মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে ব্রিজটি দিয়ে মানুষ চলাচল করে।

চাঁদপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালের প্রধান শিক্ষক রাজিয়া সুলতানা বলেন, আমাদের স্কুলের সাথেই ব্রিজটি। প্রায় ১৫ বছর ধরে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে আছে এটি। তারপরও অন্য মাধ্যম না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হয়ে স্কুলে যাতায়াত করতে হয়। শিশু শিক্ষার্থীরা তাদের অভিভাবক ছাড়া ব্রিজটি পার হতেই পারে না। বৃষ্টির দিনে অনেক শিক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকে এই ব্রিজের কারণে। আমরা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যাতে অতি দ্রুত ব্রিজটি সংস্কার করে চলাচলের উপযোগী করে দেন।

নাচনমহল ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. শাহ আলম খোকন বলেন, ভবানিপুর-চাঁদপুরা গ্রামের সংযোগস্থলে নির্মিত ব্রিজটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ব্রিজটি দিয়ে নলছিটি উপজেলার চারটি ইউনিয়নসহ জেলা শহরের সাথে যোগাযোগ খুবই সহজ কিন্তু এটা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে আছে। উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার ভিজিট করে গেছেন। আশা করি কর্তৃপক্ষ অচিরেই এ সমস্যার সমাধান করবেন।

এ ব্যাপারে নলছিটি উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী মো. ইকবাল কবীর বলেন, ব্রিজটির অবস্থা বেহাল, সেটা আমরা জানি। সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। সংস্কারের জন্য প্রক্রিয়াধীন আছে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

নৌকা তৈরিতেই ফিরছে আগৈলঝাড়ার অর্ধ শতাধিক পরিবারের সচ্ছলতা

সংস্কারের অভাবে আয়রন ব্রিজের বেহাল দশা, চরম ভোগান্তি স্থানীয়রা

প্রকাশের সময় : ০৩:৪৬:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫

ঝালকাঠি জেলা প্রতিনিধি : 

ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলায় নাচনমহল ইউনিয়নে প্রায় ৩০ বছর আগে নির্মিত ভবানীপুর-চাঁদপুরাসহ চার ইউনিয়নের সংযোগস্থলের আয়রন ব্রিজটির বেহাল দশা। এ অবস্থায় স্থানীয় লোকজনের চলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। দুই যুগ পেরিয়ে গেলেও জরাজীর্ণ ব্রিজটি সংস্কারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বর্তমান পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেতুটি পারাপার হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, নাচনমহল ইউনিয়নের ভবানীপুর এবং চাঁদপুরা গ্রামের খোকন হাওলাদারের বাড়ি সংলগ্ন খালের উপর প্রায় ৩০ বছর আগে আয়রন ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়। নির্মাণে বেশ কয়েকবছর পর বন্যার পানির চাপে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ব্রিজের ওপর দুই পাশে সিমেন্টের তৈরি পাটাতন ধসে পড়ে ও লোহার খুঁটিগুলো বাঁকা হয়ে যায়।

সিমেন্টের পাটাতনের স্থানে কাঠের পাটাতন দিয়ে চলাচল করা হচ্ছে বহুদিন ধরে। তবে সময়ের কষাঘাতে সেগুলোও বাঁকা হয়ে গেছে। বর্তমানে ব্রিজটি যেন মরনফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এলাকাবাসীর আশঙ্কা, যেকোনো মুহূর্তে ব্রিজটি ধসে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

এদিকে, বিকল্প কোনো যাতায়াত পথ না থাকায় বিপদ আরও বেশি স্থানীয়দের। বড় ধরনের ঝুঁকি আছে জেনেও উপায় না পেয়ে স্থানীয় কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীসহ সব বয়সী লোকজন বাধ্য হয়ে ব্রিজটি ব্যবহার করছেন। ব্রিজের চাঁদপুরা অংশে অবস্থিত চাঁদপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ভবানিপুর অংশে ভবানিপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, জামে মসজিদ, সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের মন্দির এবং ঐতিহবাহী ভবানিপুর বাজার।

চাঁদপুরা গ্রামের বাসিন্দা রাকিব হাসান বাবু বলেন, ভাঙা ব্রিজটি নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তেমন কোনো তৎপরতা দেখায়নি। দুই পাশের নড়বড়ে রেলিং ধরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের পারাপার হতে হয়।

ভবানিপুর গ্রামের সজিব হাওলাদার জানান, ব্রিজটিতে মানুষ উঠলে কখনো ডানে অথবা কখনো বামে কাৎ হয়ে যায়। ব্রিজটি মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কোনো মাথা ব্যথা নেই। ১০/১৫ বছর ধরে শুনছি ব্রিজটি মেরামত করা হবে। কিন্তু কবে তা শুরু হবে, কেউ বলতে পারে না।

স্থানীয় সমাজসেবক ইঞ্জিনিয়ার মো. রুবেল মোল্লা বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ আয়রন ব্রিজটি সংস্কার না হওয়ায় জেলা শহরসহ চার ইউনিয়নের মানুষের ভোগান্তিতে আছে। জনগনের স্বার্থে ব্রিজটির সংস্কার জরুরি।

ইউপি সদস্য মো. নান্না মিয়া হাওলাদার বলেন, বন্যায় যখন ব্রিজটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তার কিছুদিন পরে এলাকাবাসী মিলে টাকা তুলে কিছুটা মেরামত করি। সেটাও বেশিদিন টেকেনি। মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে ব্রিজটি দিয়ে মানুষ চলাচল করে।

চাঁদপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালের প্রধান শিক্ষক রাজিয়া সুলতানা বলেন, আমাদের স্কুলের সাথেই ব্রিজটি। প্রায় ১৫ বছর ধরে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে আছে এটি। তারপরও অন্য মাধ্যম না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হয়ে স্কুলে যাতায়াত করতে হয়। শিশু শিক্ষার্থীরা তাদের অভিভাবক ছাড়া ব্রিজটি পার হতেই পারে না। বৃষ্টির দিনে অনেক শিক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকে এই ব্রিজের কারণে। আমরা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যাতে অতি দ্রুত ব্রিজটি সংস্কার করে চলাচলের উপযোগী করে দেন।

নাচনমহল ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. শাহ আলম খোকন বলেন, ভবানিপুর-চাঁদপুরা গ্রামের সংযোগস্থলে নির্মিত ব্রিজটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ব্রিজটি দিয়ে নলছিটি উপজেলার চারটি ইউনিয়নসহ জেলা শহরের সাথে যোগাযোগ খুবই সহজ কিন্তু এটা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে আছে। উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার ভিজিট করে গেছেন। আশা করি কর্তৃপক্ষ অচিরেই এ সমস্যার সমাধান করবেন।

এ ব্যাপারে নলছিটি উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী মো. ইকবাল কবীর বলেন, ব্রিজটির অবস্থা বেহাল, সেটা আমরা জানি। সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। সংস্কারের জন্য প্রক্রিয়াধীন আছে।