নিজস্ব প্রতিবেদক :
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নাগরিক নিরাপত্তা, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়া বলেন, আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ চায় যুক্তরাষ্ট্র। তবে এ নিয়ে আমাদের কোনো সরাসরি সম্পৃক্ততা থাকবে না। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চায়। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে একযোগে কাজ করে যাবে।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন উজরা জেয়া।
গত ৫ দশক ধরে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চমৎকার সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে উজরা জেয়া বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সাথে দুই দেশের চমৎকার সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেছি। তারা সবাই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করতে চায়।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের মন্ত্রীরা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিষয়ে জোরালো প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র সব সময় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকে সমর্থন করে। তবে সংলাপের বিষয়ে বলব, এ বিষয়ে আমাদের প্রত্যক্ষ কোনো হস্তক্ষেপ থাকবে না।
বৈঠকে আলোচনার প্রসঙ্গে মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি বলেন, মানবপাচার রোধের বিষয়ে আমরা সহযোগিতা করব। গণতন্ত্র, মানবাধিকার, বাক স্বাধীনতা এবং সমাবেশ যেন অবাধে করা যায়, সেটাই আমাদের চাওয়া। সুশীল সমাজ যেন অবাধে কথা বলতে পারে সেটা আমরা চাই।
উজরা বলেন, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করছে একটি সমৃদ্ধশালী দেশের ভবিষ্যৎ। নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণের অবাধ অংশগ্রহণের ওপর সেটা নির্ভর করছে।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে এমন একটি কথা চাউর হচ্ছে- এ বিষয়ে উজরার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনি যা বলতে চাইছেন, এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না। আমি এখানে এসেছি, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে আরও গভীর করতে। অবাধ ও সহনশীল ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে কীভাবে আরও সুরক্ষিত ও সমৃদ্ধশালী করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করতে এসেছি।
বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীসহ বাকিদের কাছ থেকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে দৃঢ় প্রতিশ্রুতি পেয়েছি। আমরা চাই, সাংবাদিকরা ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে অবাধে সংবাদ প্রচার করতে পারবে।
তিনি বলেন, বুধবার (১৩ জুলাই) দুই রাজনৈতিক দল যে সমাবেশ করেছে সেটা আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি এবং সেখানে কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। এটা একটা ভালো অনুশীলন। আমরা এটার পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই।
তিনি আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সবসময় বাংলাদেশের মানুষের গণতন্ত্রে সমর্থন করে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করছে একটি সমৃদ্ধশালী দেশের ভবিষ্যত। নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণের অবাধ অংশগ্রহণের ওপর সেটা নির্ভর করছে।
রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আমরা বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানাই। তারা এত বিশাল সংখ্যক রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। গতকাল আমি কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছি। ২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র হোস্ট কমিউনিটি এবং রোহিঙ্গাদের জন্য ২.১ বিলিয়ন ডলার মানবিক সহায়তা দিয়েছে।
বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা এবং রাখাইনে থাকা রোহিঙ্গাদের জন্য নতুন করে ৭৪ মিলিয়ন ডলার অর্থ সহায়তা ঘোষণা করেছেন উজরা। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এবং মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের জন্য আমি ৭৪ মিলিয়ন ডলার ঘোষণা করছি। রোহিঙ্গাদের অর্থায়নে অন্যান্য দাতা দেশগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বর্তমান পরিস্থিতি অনুকূলে নয় বলে মত প্রকাশ করেন উজরা। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন যেন স্বেচ্ছায় এবং মর্যাদাপূর্ণ হয়, সেটাকে আমরা সমর্থন করি। কিন্তু বর্তমানে প্রত্যাবাসনের মতো পরিস্থিতি নেই।
এদিকে বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের বলেন,র্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য আমরা তার কাছে অনুরোধ জানিয়েছি।
আসন্ন সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচনের বিষয়ে সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বলেও তাদের জানিয়েছি।
পররাষ্ট্রসচিব বলেন, মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু’র সঙ্গে আমাদের খুব উল্লেখযোগ্য একটি বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমাদের রোহিঙ্গা ইস্যু, মানবাধিকারসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
সচিব বলেন, উজরা জেয়া বুধবার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। তিনি সেখানকার সার্বিক বিষয়ে তার অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেছেন। আমরা দেশের শ্রমিকদের অধিকার ও তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি জানিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এটি সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলেও তাদের জানিয়েছি। আসন্ন সংসদ নির্বাচন নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। এছাড়াও র্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে জন্য আমরা তার কাছে অনুরোধ জানিয়েছি।
দেড় ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা বৈঠকে উজরা জেয়ার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।
বাংলাদেশের পক্ষে ছিলেন আইন, শ্রম ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। বৈঠকে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করেন উজরা জেয়া।
চার দিনের সফরে গত মঙ্গলবার (১১ জুলাই) সন্ধ্যায় নয়াদিল্লি হয়ে ঢাকায় আসেন মার্কিন প্রতিনিধি দলটি। উজরা জেয়ার নেতৃত্বে আসা দলটিকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন।
উজরার নেতৃত্বাধীন মার্কিন দলটি সফর শুরুর কর্মসূচিতে বুধবার (১২ জুলাই) কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যায়। সেখানে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলাপ করেন তারা। এরপর বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) সকালে প্রথমে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে উজরা জেয়ার নেতৃত্বে আসা দলটি। পরে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রতিনিধি দলটি।