মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি :
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে একটি পাগলা কুকুরের কামড়ে জখম হয়ে ২১ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। কুকুরের আক্রমণের শিকার আড়াই বছরের শিশু থেকে ৭০ বছরের বৃদ্ধ রয়েছেন। তাঁদের পা, হাত, মুখসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখম হয়েছে কুকুরের কামড়ে।
শুক্রবার (৭ জুন) বেলা ১১টা থেকে শনিবার (৮ জুন) বেলা ১টা পর্যন্ত শ্রীমঙ্গল শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন জায়গায় কুকুরটি আক্রমণ করে। পাগলা কুকুরকে আটক করতে শহরে তল্লাশি চালাচ্ছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ। কুকুর থেকে সাবধান হতে চলছে মাইকিং।
আহত ব্যক্তিরা হলেন, শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাতগাঁও ইউনিয়নের আলিসারকুল গ্রামের সিতারাম এর পুত্র গজানন্দ (৬৭), শ্রীমঙ্গল শহরতলীর লালবাগ এলাকার রাজেলা রায় এর পুত্র ঝন্টু (১২), সবুজবাগ এলাকার কামিনি চন্দ এর পুত্র শ্রীকান্ত চন্দ্র (৫৮), মুসলিমবাগ এলাকার রমজান আলীর পুত্র আমান উল্লাহ (২১), মৌলভীবাজার রোডের জুয়েল মিয়ার পুত্র রুহিত মিয়া (১০) ও রায়হান মিয়া (৫), একই এলাকার তাহের মিয়ার পুত্র শাহ আলম (৭৫), লালবাগ এলাকার রিংকু সুত্রধর এর কন্য জয়শ্রী (২৫), সিন্দুরখান ইউনিয়নের দূর্গানগর এলাকার মফিজ উল্লাহর পুত্র কেফায়েত উল্লা (৫০), পৌর শহরের মিশন রোডের নজরুল মিয়ার পুত্র আল আমিন মিয়া (১৭), লালবাগ এলাকার সমীরন শীল এর পুত্র সন্দীপন শীল (৭), শহরের মিশন রোডের সুলতান মিয়ার স্ত্রী নাসিমা বেগম (৪৫), লালবাগ এলাকার লিলু মিয়ার পুত্র জিহান (৫), রামনগর এলাকার গোপাল কাহার এর স্ত্রী রামরতি কাহার (৯০), শাহীবাগ এলাকার মনির মিয়ার স্ত্রী মায়া বেগম (৬০), ইসমাইল খান এর পুত্র আসলাম খান (৩৯), শ্রীমঙ্গল ইউনিয়নের দীনেশ চন্দ্র দেব এর পুত্র দিলীপ কুমার দেব (৮৩), সবুজবাগ এলাকার নরেশ চক্রবতীর পুত্র শ্যমল চক্রবতী (৫০), শ্রীমঙ্গল চৌমুহনা এলাকার ব্যবসায়ী নিরঞ্জন দেব পুতুল (৭০)।
কুকুরে কামড়ে আহত হওয়া ১০ বছরের শিশু রুহিত মিয়া জানায়, সে শুক্রবার সন্ধ্যার পর বাসা থেকে বের হয়ে মৌলভীবাজার রোডের একটি দোকানে পেনসিল কিনতে এসে হঠাৎ কুকুড়ের সামনে পড়ে। কোনো কিছু বোঝার আগেই কুকুরটি দৌড়ে এসে তাঁর হাতে কামড় বসায়। তখন কোনোরকমে কুকুরকে শরীর থেকে সরিয়ে দৌড়ে এসে রেহাই পায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের এক ওয়ার্ড বয় বলেন, গতকাল হাসপাতালে এক করুণ অবস্থা দেখা গেছে। একসঙ্গে অনেকগুলো আহত রোগী এসেছেন। তাঁরা সবাই কুকুরের কামড় খেয়ে এসেছেন। সাধারণ আমরা এ রকম বিভৎস রোগী দেখি না কুকুরের কামড়ের। গতকাল কুকুর যেভাবে কামড় বসিয়েছে, কারও মুখ, কার হাত, পা মাংস বেড়িয়ে এসেছিল। মনে হয়েছে বাঘের আক্রমণের শিকার হয়ে তাঁরা চিকিৎসা নিতে এসেছেন।
এ বিষয়ে শনিবার হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গিয়ে কথা হয়, ওই বিভাগের চিকিৎসক তাহমিদ হাসান চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, গতকাল থেকে আজ দুপুর পর্যন্ত ২১ জন কুকুরের কামড় খেয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। আমরা প্রতিটি রোগীকে ভ্যাকসিন ও অন্যান্য ওষুধ দিয়েছি। তাদের মধ্যে জয়শ্রী সুত্রধর নামের আড়াই বছরের শিশু ছিল। তার অবস্থা খারাপ থাকা উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে। গুরুতর আরও দুজনকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কর্ণ চন্দ্র মল্লিক বলেন, একটি কুকুরই সবাইকে কামড় দিচ্ছে। সম্ভবত কুকুরটি পাগল হয়ে গেছে। শহরে কুকুরটি থেকে সাবধানে থাকার জন্য ইতোমধ্যে সবাইকে সচেতন থাকার জন্য অনুরোধ করে মাইকিং করা হয়েছে। পাগল কুকুরটিকে ধরার চেষ্টা চলছে।