Dhaka শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শেরপুরে সড়কের নির্মাণ এক সপ্তাহ পেরোতেই ধস

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বগুড়ার শেরপুর উপজেলার কুসুম্বী ইউনিয়নের বাঁশবাড়িয়া মালিহাটা-উদয়কুঁড়ি সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ পেরোতেই ধসে গেছে রাস্তা ও ইট ভেঙে গেছে। নিন্মমানের ইট ও রাস্তার দুই পাশে ধরে রাখার কোনো ব্যবস্থা না করায় এ ধস হয়েছে বলে দাবি এলাকাবাসীর। সামনের বর্ষায় ভোগান্তি পোহাতে হবে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের।

উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলীর অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থ বছরে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীনে বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় দরপত্র আহ্বান করে শেরপুর উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তর। কুসুম্বী ইউনিয়নের মালিহাটা থেকে উদয়কুঁড়ি সড়ক নির্মাণের কার্যাদেশ পায় সারিয়াকান্দি উপজেলার মেসার্স টুম্পা এন্টারপ্রাইজ। দরপত্র অনুযায়ী এই সড়কের নয় লাখ ৯৯ হাজার টাকা ব্যয়ে ২২৮ মিটার হেরিং বন বন্ড (এইবিবি) কাজ সম্পন্ন করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। ইতোমধ্যে চুক্তিমূল্যের প্রায় ৮০% টাকা পরিশোধও করা হয়েছে। উন্নয়নকাজে দেখভাল করেছেন শেরপুর উপজেলা প্রকৌশলী অফিসের উপসহকারী প্রকৌশলী কায়ছার আহমেদ।

সরেজমিনে গেলে স্থানীয়রা জানান, গত দেড় মাসের মাথায় ইটগুলো ফাঁকা হয়ে গেছে, কিছু ইট ভেঙে টুকরো টুকরো হয়েছে ও কয়েক জায়গায় রাস্তা ধসে চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। এ ছাড়াও রাস্তার দৈর্ঘ্য দরপত্রের চেয়ে কমপক্ষে ১০ ফুট রাস্তা কম করার অভিযোগও পাওয়া গেছে।

স্থানীয়রা জানান, রাস্তাটি দিয়ে প্রতিদিন উদয়কুঁড়ি, বাঁশবাড়িয়া ও উচলবাড়িয়া এই তিন গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ চলাচল করেন। তা ছাড়া এখানে প্রচুর পরিমাণে রবিশস্যের চাষ হয়। রাস্তা কাঁচা হওয়ায় ফসল ও পণ্য পরিবহনে অনেক কষ্ট হয়। প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য হলেও রাস্তা উন্নত হওয়া শাস্তি ফিরে পেয়েছিলেন এলাকাবাসী। কিন্তু এখন তাঁদের সেই আশায় গুঁড়েবালি।

মালিহাটা গ্রামের মো. লেমন অলী বলেন, ‘এটি আগে মাটির রাস্তা ছিল। মাত্র ৩-৪ দিনেই রাস্তার কাজ শেষ করা হয়েছে। ফলে মাটি ভরাটের কাজ ঠিকমতো করা হয়নি। তাই যানবাহন চলাচল করায় অল্প সময়ের মধ্যেই রাস্তাটি ধসে গেছে।’

বাঁশবাড়িয়া গ্রামের কৃষক আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘এখানে নিম্নমানের ইট ব্যবহার করা হয়েছে। তাই ইটগুলো ভেঙে যাচ্ছে। ইঞ্জিনিয়ার অফিস থেকে ভালো ভাবে তদারকি করলে এমনটা হতো না।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য রইস উদ্দিন বলেন,  রাস্তার কাজ কখন শুরু হয়ে আবার শেষ হয়েছে, আমি জানি না। আমাকে জানালে অন্তত জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারতাম। সবাই আশঙ্কা করছেন, আসন্ন বর্ষাকালে সম্পূর্ণ রাস্তাটির নষ্ট হয়ে যাবে। এই অবস্থায় এলাকার জনগণ আমার কাছে রাস্তাটি পুনর্নির্মাণের দাবি জানাচ্ছেন। কিন্তু আমার তো করার কিছু নেই।

উপজেলার কুসুম্বি ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহ আলম বলেন, সড়কে উন্নয়নকাজের জন্য এক নম্বর ইট ব্যবহার করার কথা ছিল। সড়ক উন্নয়নকাজের সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিম্নমানের ইট ব্যবহার করা নিয়ে উপজেলা প্রকৌশলী দপ্তরে (এলজিইডি) জানানোর পরও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। উপজেলা প্রকৌশলী দপ্তরের তদারকির অভাবে এই ক্ষতি হয়েছে।

এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক রঘুনাথ রায় বলেন, এই সড়কের কাজে প্রায় ৬০ হাজার ইট ব্যবহার করা হয়েয়ে। নতুন রাস্তা দিয়ে আলু বোঝাই ভারী যানবাহনের কারণে কিছু কিছু জায়গায় রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঠিকও করে দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে উপ-সহকারী প্রকৌশলী (আরসিআইপি) কায়সার আহমেদ বলেন, দরপত্র অনুযায়ী এখানে ভালো মানের ইট ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু চলতি আলুর মৌসুমে এই রাস্তা দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল করায় কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’ ঠিকও করে দেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে শেরপুর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) লিয়াকত হোসেন বলেন, সড়কে নিম্নমানের ইট ব্যবহার করার কোনো সুযোগ নেই। ইতিমধ্যে সড়কের ক্ষতিগ্রস্ত স্থানগুলো মেরামতের করা হয়েছে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

এমিরেটস এয়ারলাইন্সে বয়স্ক যাত্রীকে হয়রানির অভিযোগ

শেরপুরে সড়কের নির্মাণ এক সপ্তাহ পেরোতেই ধস

প্রকাশের সময় : ১২:৩১:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ মার্চ ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বগুড়ার শেরপুর উপজেলার কুসুম্বী ইউনিয়নের বাঁশবাড়িয়া মালিহাটা-উদয়কুঁড়ি সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ পেরোতেই ধসে গেছে রাস্তা ও ইট ভেঙে গেছে। নিন্মমানের ইট ও রাস্তার দুই পাশে ধরে রাখার কোনো ব্যবস্থা না করায় এ ধস হয়েছে বলে দাবি এলাকাবাসীর। সামনের বর্ষায় ভোগান্তি পোহাতে হবে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের।

উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলীর অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থ বছরে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীনে বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় দরপত্র আহ্বান করে শেরপুর উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তর। কুসুম্বী ইউনিয়নের মালিহাটা থেকে উদয়কুঁড়ি সড়ক নির্মাণের কার্যাদেশ পায় সারিয়াকান্দি উপজেলার মেসার্স টুম্পা এন্টারপ্রাইজ। দরপত্র অনুযায়ী এই সড়কের নয় লাখ ৯৯ হাজার টাকা ব্যয়ে ২২৮ মিটার হেরিং বন বন্ড (এইবিবি) কাজ সম্পন্ন করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। ইতোমধ্যে চুক্তিমূল্যের প্রায় ৮০% টাকা পরিশোধও করা হয়েছে। উন্নয়নকাজে দেখভাল করেছেন শেরপুর উপজেলা প্রকৌশলী অফিসের উপসহকারী প্রকৌশলী কায়ছার আহমেদ।

সরেজমিনে গেলে স্থানীয়রা জানান, গত দেড় মাসের মাথায় ইটগুলো ফাঁকা হয়ে গেছে, কিছু ইট ভেঙে টুকরো টুকরো হয়েছে ও কয়েক জায়গায় রাস্তা ধসে চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। এ ছাড়াও রাস্তার দৈর্ঘ্য দরপত্রের চেয়ে কমপক্ষে ১০ ফুট রাস্তা কম করার অভিযোগও পাওয়া গেছে।

স্থানীয়রা জানান, রাস্তাটি দিয়ে প্রতিদিন উদয়কুঁড়ি, বাঁশবাড়িয়া ও উচলবাড়িয়া এই তিন গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ চলাচল করেন। তা ছাড়া এখানে প্রচুর পরিমাণে রবিশস্যের চাষ হয়। রাস্তা কাঁচা হওয়ায় ফসল ও পণ্য পরিবহনে অনেক কষ্ট হয়। প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য হলেও রাস্তা উন্নত হওয়া শাস্তি ফিরে পেয়েছিলেন এলাকাবাসী। কিন্তু এখন তাঁদের সেই আশায় গুঁড়েবালি।

মালিহাটা গ্রামের মো. লেমন অলী বলেন, ‘এটি আগে মাটির রাস্তা ছিল। মাত্র ৩-৪ দিনেই রাস্তার কাজ শেষ করা হয়েছে। ফলে মাটি ভরাটের কাজ ঠিকমতো করা হয়নি। তাই যানবাহন চলাচল করায় অল্প সময়ের মধ্যেই রাস্তাটি ধসে গেছে।’

বাঁশবাড়িয়া গ্রামের কৃষক আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘এখানে নিম্নমানের ইট ব্যবহার করা হয়েছে। তাই ইটগুলো ভেঙে যাচ্ছে। ইঞ্জিনিয়ার অফিস থেকে ভালো ভাবে তদারকি করলে এমনটা হতো না।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য রইস উদ্দিন বলেন,  রাস্তার কাজ কখন শুরু হয়ে আবার শেষ হয়েছে, আমি জানি না। আমাকে জানালে অন্তত জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারতাম। সবাই আশঙ্কা করছেন, আসন্ন বর্ষাকালে সম্পূর্ণ রাস্তাটির নষ্ট হয়ে যাবে। এই অবস্থায় এলাকার জনগণ আমার কাছে রাস্তাটি পুনর্নির্মাণের দাবি জানাচ্ছেন। কিন্তু আমার তো করার কিছু নেই।

উপজেলার কুসুম্বি ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহ আলম বলেন, সড়কে উন্নয়নকাজের জন্য এক নম্বর ইট ব্যবহার করার কথা ছিল। সড়ক উন্নয়নকাজের সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিম্নমানের ইট ব্যবহার করা নিয়ে উপজেলা প্রকৌশলী দপ্তরে (এলজিইডি) জানানোর পরও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। উপজেলা প্রকৌশলী দপ্তরের তদারকির অভাবে এই ক্ষতি হয়েছে।

এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক রঘুনাথ রায় বলেন, এই সড়কের কাজে প্রায় ৬০ হাজার ইট ব্যবহার করা হয়েয়ে। নতুন রাস্তা দিয়ে আলু বোঝাই ভারী যানবাহনের কারণে কিছু কিছু জায়গায় রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঠিকও করে দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে উপ-সহকারী প্রকৌশলী (আরসিআইপি) কায়সার আহমেদ বলেন, দরপত্র অনুযায়ী এখানে ভালো মানের ইট ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু চলতি আলুর মৌসুমে এই রাস্তা দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল করায় কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’ ঠিকও করে দেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে শেরপুর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) লিয়াকত হোসেন বলেন, সড়কে নিম্নমানের ইট ব্যবহার করার কোনো সুযোগ নেই। ইতিমধ্যে সড়কের ক্ষতিগ্রস্ত স্থানগুলো মেরামতের করা হয়েছে।