নিজস্ব প্রতিবেদক :
শেরপুরের লছমনপুরে জমিতে যাতে বৃষ্টির পানি জমে না থাকে সে জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে একটি সেতু। কিন্তু সেতুটি নির্মাণে বিকল্প সড়ক তৈরি না করে যাতায়াতের মূল সড়কটি কেটে ফেলায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সড়কের দুই পাড়ে বসবাসকারী তিনটি গ্রামের প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ ও স্কুল শিক্ষার্থীরা।
বিশেষ করে অসুস্থ ও গুরুতর রোগীদের চিকিৎসা সহ হাসপাতালে আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে চরম বিপাকে পড়েতে হচ্ছে গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের। নিচু এলাকা হওয়ায় টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে সেতু এলাকায় এখন হাটু পানি জমেছে।
এদিকে, বিকল্প সড়ক তৈরি না করার বিষয়টিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের খামখেয়ালী ও প্রশাসনের নজরদারির অভাব বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সদর উপজেলার লছমনপুর ইউনিয়নের জমসেদ আলী মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজের পেছনের সড়কে নির্মাণ হচ্ছে একটি সেতু। এলাকাটি নিচু হওয়ায় গত দুদিনের টানা বৃষ্টিতে সময় সেখানে প্রচুর পানি জমেছে। এতে খানাখন্দে পড়ে গিয়ে ভিজে যাচ্ছে শিক্ষর্থীরা, কেউবা আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছে। তাই জমে থাকা পানি যাতে সরে যেতে পারে সে কারণে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিকল্প সড়ক তৈরি না করে মূল সড়কটি কেটে ফেলায় সাইকেল, রিকশা, ভ্যান, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ। এতে গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের পায়ে হেটে ধান ক্ষেতের আইল দিয়ে আবার কেউ কেউ পানিতে ভিজে রাস্তা পার হচ্ছেন। ফলে ইউনিয়নের হাতি আগলা পূর্ব, পশ্চিম ও মোল্লাপাড়া গ্রামের প্রায় ৫ হাজার মানুষ কুসুমহাটি বাজারে আসতে পারছেন না। আগে ওই বাজারে যেতে স্থানীয়দের সময় লাগতো ১০ মিনিট এখন লাগছে ৩০ মিনিট।
ঘটনাটিকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের খামখেয়ালী ও প্রশাসনের নজরদারীর অভাব বলে মনেকরছেন এলাকার সচেতন মানুষ। জনসাধারণের চলাচল স্বাভাবিক রাখতে বিকল্প সড়ক তৈরি ও দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
জানা যায়, ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৫ মিটার লম্বা সেতুটির নির্মাণ কাজ করছে ‘মেসার্স নাফিউ কন্সট্রাকশন’ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আড়াই মাস আগে রাস্তা কেটে পাইলিং এর কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে ইউনিয়নের হাতি আগলা পূর্ব ও পশ্চিম এবং মোল্লাপাড়া গ্রামের মানুষের একমাত্র কেন্দ্রবিন্দু কুসুমহাটি বাজারে আসতেও ভোগান্তিতে পড়ছে।
৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছাদিয়া আক্তার বলে, আমাদের প্রতিদিনি স্কুল ও প্রাইভেটে যেতে হয়। এই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় আমাদের পোশাক ভিজে যায়। আগে কষ্ট হলেও পারাপার করতে পারতাম। কিন্তু বৃষ্টি হওয়ায় পানি জমে গিয়ে এখন আমাদের যাতায়াত কঠিন হয়ে পড়েছে।
এলাকার কৃষক আব্দুল্লাহ বলেন, ব্রিজ তৈরির জন্য রাস্তা কেটে ফেলায় এখন তো হাটু পানি হয়ে গেছে। আমরা আমাদের উৎপাদিত কৃষি পন্য নিয়ে কিভাবে বাজারে যাবো? পাশ দিয়ে যদি একটা রাস্তা তৈরি করে দিতো তাহলে তো সমস্যা হতো না। আমাদের হাট বাজারে যাওয়া অনেক অসুবিধা হয়ে গেছে।
ইউপি সদস্য আব্বাস আলী আক্ষেপ করে বলেন, আমি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বলেছি, আপনাদের নির্মাণকাজ চলাকালিন সময়ে পাশ দিয়ে অস্থায়ী বিকল্প রাস্তা তৈরি করে দেন যাতে মানুষ চলাচল করতে পারে। কিন্তু তারা আমার কথা শুনেননি। এর আগেও এই ঠিকাদার আমাদের আরেকটি রাস্তার সেতুর কাজ পেয়েছিল। সেখানেও তারা বিকল্প রাস্তা তৈরি করেনি। পরে বাধ্য হয়ে আমরা এলাকাবাসী নিজেরা বিকল্প রাস্তা তৈরি করেছিলাম।
লছমনপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বলেন, আমি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলে বিষয়টি অবহিত করেছি। তাদের দ্রুত নির্মাণকাজ শেষ করার অনুরোধ করেছি।
এ ব্যাপারে শেরপুর সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ খবিরুজ্জামান খান বলেন, সেতুটি নির্মাণাধীন অবস্থায় রয়েছে। যে কোন ব্রিজ তৈরির সময় ডায়ভারশন রোড তৈরি করতে হয়। আমরা দ্রুত রাস্তা করে দেবো যাতে জনগণের ভোগান্তি কমে।