নিজস্ব প্রতিবেদক :
ছাত্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালালেও শয়তানি ছাড়েনি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর উত্তরায় বিএনপির স্বেচ্ছায় খাল পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচির আগে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ছাত্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালালেও শয়তানি ছাড়েনি। ভারতে গিয়ে সে আবার শয়তানি শুরু করছে। ওইখানে বসে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগকে উসকায় দিয়ে বলে তোমরা গোলমাল করো, মিছিল করো, মারামারি করো, নেতাদেরকে মারো। যদি আপনাদের কারো ওপরে কোনো হাত পড়ে, আওয়ামী লীগের সেই হাত আপনারা ভেঙে দেবেন।
দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে কোনো আপস হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করব, এখানে কোনো আপস নেই।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখন শুধু স্লোগানের রাজনীতি হয়, শহীদ জিয়ার আদর্শ ধারণ করে রাজনীতি করতে হবে। আর আওয়ামী লীগের মতো চাটার দলে পরিণত হওয়া যাবে না। তাহলে বিএনপিকেও মানুষ ভালোবাসবে না।
ড. ইউনূসের রাজনীতি করার ইচ্ছে নাই, তিনি দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আগে শেখ হাসিনার হাতে সবকিছু থাকলেও, আগামী দিনে ক্ষমতার ভারসাম্য আনবে বিএনপি।
দেশের রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ড. ইউনূসের রাজনীতি করার ইচ্ছা নেই, তিনি দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন। আর আগে শেখ হাসিনার হাতে সব কিছু থাকলেও আগামী দিনে ক্ষমতার ভারসাম্য আনবে বিএনপি।’
তিনি বলেন, বিএনপি গঠন হওয়ার পরে বাংলাদেশে একটা নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছিল। মানুষ ৭২ সাল থেকে ৭৫ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের দুঃশাসন, লুটপাট, হত্যা, গণতন্ত্রকে হত্যা করা দেখেছে, এবং সবশেষে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে নিষিদ্ধ করে দিয়ে একটি মাত্র দল বাকশাল তৈরি করেছিল। সমস্ত পত্রপত্রিকা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল, কোনো বাকস্বাধীনতা ছিল না। কেউ কথা বলতে পারতো না এবং মানুষের নূন্যতম যে মানবিক অধিকার সে অধিকারগুলো শেখ মুজিবুর রহমান কেড়ে নিয়েছিলেন। অথচ আমাদের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান আমাদেরকে সেখান থেকে মুক্তি দিয়ে একটা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণ করার কাজ শুরু করেছিলেন। আগে ছিল মাত্র একটা দল বাকশাল আর আমাদের নেতা করলেন অনেক দল অর্থাৎ বহুদল।
জিয়াউর রহমানের শাসনামলের বর্ণনা করে তিনি বলেন, সব দল মতামত প্রকাশ করবে। মানুষ তাদের মতামত প্রকাশ করবে। সেই স্বাধীনতা থাকবে। এটাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। শুধু তাই নয়, একদিকে যেমন তিনি এই রাজনৈতিক কাঠামো পরিবর্তন করলেন। মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিলেন। অন্যদিকে, অর্থনীতিতে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনলেন। কৃষিতে আনলেন একটা বিপ্লবের সূচনা। যে বাংলাদেশে ৭৪ সালে ভাইরাল দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। লাখো মানুষ না খেতে পেয়ে মারা গিয়েছিল আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের কারণে। অথচ ৭৬,৭৭ সালে উদ্বৃত্ত ধান উৎপাদনের দেশে পরিণত করলেন এবং বাংলাদেশ থেকে ধান রফতানির ব্যবস্থা করলেন। প্রতিটি কলকারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সেই কলকারখানাগুলোকে করে দিয়ে তিন শিফটে কারখানা চালু করার ব্যবস্থা করলেন। তিনি গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে পায়ে হেঁটে খাল খনন কর্মসূচি গ্রহণ করলেন। নদী-খাল খনন করলেন।
দেশের পোশাকশিল্পের কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, জিয়াউর রহমান এই অর্থনীতির পরিবর্তন সূচনা করলেন, গার্মেন্টস আনলেন। পোশাকশিল্প করলেন। এখান থেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি আয় আনে। বিদেশ থেকে ডলার সে ডলার নিয়ে আসে নারী শ্রমিকরা কাজ করে। বিদেশি শ্রমিক পাঠানো কাজটি তিনি করেছিলেন।
বিদেশীরা জিয়াউর রহমানকে স্যালুট করতো জানিয়ে তিনি বলেন, একজন গরীব দেশ থেকে এত সৎ যোগ্য একটা নেতা উঠে আসতে তারা আর আগে কখনো দেখেনি। তারই উত্তরসূরি আমরা। সেই বিএনপি করি। যদি আমরা আওয়ামী লীগের মতো চাটার দলে পরিণত হই তাহলে কি মানুষ আমাদের ভালোবাসবে? না। এটা মাথায় রাখবেন। কাজে দেখাতে হবে, আমরা দেখাতে চাই, আমরা আমাদের নেতা জিয়াউর রহমানের মতোই সৎভাবে দেশ পরিচালনা করতে জানি।
বিএনপি নেতাকর্মীরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আইন আইনের মতো চলবে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে গণমাধ্যম সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে।
ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল, ছাত্র সংসদ নির্বাচনগুলো বা কোথাও গণ্ডগোল করা যাবে না। আর অতীতের কর্মকাণ্ড ভুলে পুলিশকে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনেরও আহ্বান জানান তিনি।
অতীতের কর্মকাণ্ড ভুলে পুলিশকে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনেরও আহ্বান জানান তিনি। এ ছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো গুজবের বিরুদ্ধেও সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশনা দেন বিএনপির মহাসচিব।