নিজস্ব প্রতিবেদক :
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করতে ফেরানোর বিষয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে আলোচনা হলেও চূড়ান্ত কিছু হয়নি বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন।
এছাড়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়েও কোনো চূড়ান্ত আলোচনা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেছেন, এই মুহূর্তে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্ভব নয়।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
থাইল্যান্ডে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের সাইডলাইনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বৈঠক হয়। সেখানে শেখ হাসিনাকে ফেরত নিয়ে কী আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছে, তবে চূড়ান্ত কোনো কিছু হয়নি।
বৈঠকে ভারতের পক্ষ থেকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাগিদ দেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, দায়িত্ব পালন শেষ করে খুব শিগগির নির্বাচন দেওয়াই আমাদের অঙ্গীকার। তবে টেবিলটকে আলোচনায় তারা জানতেই পারেন। এটা স্বাভাবিক।
ভারতের ভিসা বন্ধ রয়েছে, এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো উদ্যোগ আছে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ভিসা দেয়াটা তাদের বিষয়। আমরাও সাময়িকভাবে সেদেশে ভিসা বন্ধ করেছিলাম। তবে কোনো দেশের ভিসা বন্ধ হলে শূন্যতা থাকে না। মানুষ অন্য দেশে সমাধান খুঁজে নেয়।
ইতালির ভিসা পেতে বাংলাদেশিরা বিক্ষোভ করছেন। এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ইতালির ভিসা নিয়ে দেশটির সঙ্গে অব্যাহতভাবে আলোচনা করছি। তবে ভিসা পেতে যেসব ডকুমেন্ট দেওয়া হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। ইতালির ভিসার জন্য অনেক অবৈধ কাগজপত্র দেওয়া হয়। তারা (ইতালি) দেখছে, আসলেই সেই কাগজপত্র ঠিক আছে কি না। অনেক লোকজনের কাগজপত্র জেনুইন আছে, তারাও এখন এই অবস্থায় ভিসার জন্য ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছেন।
ভারতের সহযোগিতা নিয়ে তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নে সাবেক আওয়ামী লীগ সরকার নীতিগতভাবে সম্মত ছিল। সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরের সময়ে তিস্তা প্রকল্পে চীনা কোম্পানির অংশগ্রহণকে স্বাগত জানায় সরকার। তবে সরকার এ বিষয়ে উদারনীতি গ্রহণ করেছে এবং এ প্রকল্প নিয়ে ভারত বা চীন– উভয়ের সঙ্গেই আলোচনা করার সুযোগ থাকবে বলে জানিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, অগ্রগতি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আমরা ঝট করে কোনও কিছু প্রত্যাশা করছি না যে কালকেই কেউ তিস্তা সমস্যার সমাধান করে দেবে। চীনের সঙ্গে আমাদের একটি আমব্রেলা চুক্তি আছে নদীর পানি নিয়ে। নদীর পানি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সবার জন্য এবং আমাদের জন্য বিশেষ করে।
তিনি বলেন, ‘আমরা ওপেন আছি। ভারতের সঙ্গেও সহযোগিতা সম্ভব, চীনের সঙ্গেও সম্ভব। কোনোটাতেই বাধা নেই। আমা দেখবো যে কোন প্রজেক্টে কোথা থেকে সহায়তা নিলে আমাদের সুবিধা হবে। সে অনুযায়ী পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় কাজ করবে।’
চীন সফরের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘চীনে কিছু কিছু বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে। সর্বোচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। যোগাযোগ সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকলে অন্যান্য পর্যায়ে সম্পর্ক আগানো সহজ হয়। দুই নেতার মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিছু কাগজপত্র সই হয়েছে। আমার মনে হয় সফরটি মোটামুটিভাবে একটি প্রভাব রাখতে পেরেছে।’