গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :
শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে ভারত ভালো কিছু করেনি বলে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ভারতকে আমরা বলেছি যে গণহত্যা করেছে তাকে জায়গা দেবেন না, তারা এখনও কথা শোনেনি। তাই অন্তর্বর্তী সরকারকে বলছি, ভারতকে চিঠি দিতে, যাতে তারা শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠায়।
শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে কোনাবাড়ীতে গাজীপুর জেলা ও মহানগর শ্রমিক দল আয়োজিত গার্মেন্টস ও ওষুধ শিল্পে নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রতিবাদে ও ন্যায্য মজুরি পরিশোধের দাবিতে গাজীপুর জেলা ও মহানগর শ্রমিক দলের সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা শ্রমিকদের হত্যা করেছে, ছাত্রদের হত্যা করেছে। পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করে দেশে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। তবে শেখ হাসিনা পালালেও তার প্রেতাত্মারা এখনও এদেশে আছে। তারা ভাবে আবার শেখ হাসিনা ফিরে এলে, আবারও তারা লুট করতে পারবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, বিদেশি শক্তির সাথে যোগ দিয়ে শেখ হাসিনা শিল্প কারখানায় নৈরাজ্য সৃষ্টি করে দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেলেও তার প্রেতাত্মারা শিল্প কারখানায় অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। তার সাথে যোগ দিয়েছে ভিনদেশী শত্রুরা। ষড়যন্ত্র থেকে দেশের শিল্প প্রতিষ্ঠান রক্ষা করতে হলে জরুরি ভিত্তিতে টাস্কফোর্স গঠন জরুরি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, জুলাই বিপ্লবে দেশ স্বাধীন করতে গিয়ে যারা আহত এবং নিহত হয়েছেন তার শতকরা ৬০ শতাংশই শ্রমিক। গত ১৬ বছর পর বিএনপি নেতাকর্মীরা মামলা হামলায় ব্যপকভাবে নির্যাতিত হয়েছেন। এখন নেতাকর্মীরা রাতে আরাম করে ঘুমাতে পারছেন। শেখ হাসিনা পালানোর কারনেই তা সম্ভব হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এ সময় তিনি ড. ইউনুসের প্রশংসা করে বলেন, দেশের অসহায় মানুষকে ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে দারিদ্র বিমোচনে অবদান রেখেছেন তিনি। এ কারণেই বিশ্ব দরবারে তার খ্যাতি রয়েছে। শেখ হাসিনাকে দ্রুত দেশে এনে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য অন্তর্র্বতী সরকারকে আহ্বানও জানান তিনি।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, দীর্ঘ ১৪-১৫ বছর ধরে সংগ্রামের পর আমরা এ দুঃশাসন থেকে ফ্যাসিবাদের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছি। হাসিনা চলে গেছে, হাসিনা পালিয়ে গেছে। দীর্ঘ ১৪-১৫ বছর ধরে এ বাংলাদেশের মানুষের ওপর অত্যাচার নির্যাতন করে আমাদের অসংখ্য মানুষকে হত্যা করেছে। হাসিনা নিজে ক্ষমতায় থাকার জন্য রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করে, গুলি করে, মিথ্যা মামলা দিয়ে, অত্যাচার করে বাংলাদেশের মানুষকে ভীতির রাজত্বে নিয়ে গেছে। ছাত্র, শ্রমিক, জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে হাসিনা পালিয়ে গেছে। এখন আমরা দম ফেলে বাঁচতে পারছি। রাতে আরাম করে শুতে পারছি।
মির্জা ফখরুল বলেন, শেখ হাসিনা পালিয়েছে এটা ঠিক। কিন্তু তার যে প্রেতাত্মা এখনো এ দেশের মধ্যেই আছে। তারা ভুলতে পারে না। তারা চুরি-চামারি, দুর্নীতি ও লুট করে যে সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে দেশের বাইরে সম্পদ পাঠিয়ে দিয়ে, অসংখ্য সম্পদ তৈরি করেছে, দেশের ভেতরে তারা বিরাট বিরাট বাড়ি, ঘর, খামার তৈরি করে লুটে নিয়েছে টাকা। এসব যারা করেছে তারা এটা বলে যে আবার যদি শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনতে পারতাম আবার লুট করতে পারতাম। সেজন্য তারা বিভিন্ন জায়গা ষড়যন্ত্র করছে। সবচেয়ে বড় ষড়যন্ত্র করছে শিল্প এলাকাতে।
তিনি বলেন, হাসিনা ভারতে যোগ দিয়েছে, ভারতেই বসবাস করতেছে। আমরা বারবার করে ভারতের কাছে অনুরোধ করেছি। যে আপনারা এমন একজন খুনি তাকে জায়গা দেবেন না। যে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে নষ্ট করেছে। সে অনেক গণহত্যার আসামি হয়েছে। কিন্তু তারা এখনো কোনো কিছু বলেনি। আমি বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের কাছে আহ্বান জানাবো অবিলম্বে গণহত্যাকারী, দেশ ধ্বংসকারী ও রাষ্ট্রবিরোধী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে অভিযোগগুলোর ভিত্তিতে বিচারের দাবিতে ভারতের কাছে চিঠি দেন তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন যে, নতুন সরকার আমাদের প্রফেসর ইউনূস সাহেবের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে। তিনি বিরাট মানুষ, নোবেল পুরস্কার পেয়েছে। সারা পৃথিবীর মানুষ তাকে শ্রদ্ধা করে। গরিব মানুষের জন্য তিনি অনেক কাজ করেছে। তার গ্রামীণ ব্যাংকসহ সব মিলিয়ে তিনি গোটা পৃথিবীর মানুষের কাছে একজন শ্রদ্ধেয় মানুষ। দেশের কয়েকজন বিশেষ ব্যক্তিত্বকে নিয়ে তিনি সরকার গঠন করেছেন। এ অন্তর্র্বতী সরকারকে আমরা দায়িত্ব দিয়েছি যে, গত ১৫-১৬ বছরে আওয়ামী লীগ যে জঞ্জাল সৃষ্টি করেছে এ জঞ্জালগুলোকে খুব অল্প সময়ের মধ্যে দূর করে একটা পরিবেশ তৈরি করেন। যেখানে সব রাজনৈতিক দলগুলো একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারে। তিনি এটা নিয়ে কাজ শুরু করেছেন।
তিনি বলেন, কথা পরিস্কার আমরা ভোট দিতে চাই। ভোট দিয়ে আমরা পার্লামেন্ট নির্বাচন করতে চাই। আমরা আমাদের সরকার নির্বাচন করতে চাই। আমরা ওই কথাটা বিশ্বাস করি আমার ভোট আমি দেবো যাকে খুশি তাকে দিবো। আওয়ামী লীগ এতদিন কি করেছে যে, আমার ভোট আমি দেবো, তোমার ভোটও আমি দিবো।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সালাহউদ্দিন সরকার।
সমাবেশে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ.জেড. এম জাহিদ হোসেন, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি এ.কে.এম ফজলুল হক মিলন, গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি মো. শওকত হোসেন সরকার, বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবির, মজিবুর রহমানসহ বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।