Dhaka মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫, ৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শেখ মুজিবের স্বৈরতন্ত্র ফিরিয়ে আনেন হাসিনা : আলী রীয়াজ

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, গত ১৬ বছর ধরেই কেবল ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ১৯৭০ সালের পরে শেখ মুজিবুর রহমানের স্বৈরতন্ত্র, শেখ হাসিনার মধ্য দিয়ে আবার ফিরে আসে।

শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ইস্কাটনে আঞ্চলিক লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ‘গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশ: সুশাসন ও গণতন্ত্র’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। সেমিনারটির আয়োজন করে সেন্টার ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড গুড গভর্ন্যান্স।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, ‘১৯৭২ সালে তৈরি করা সংবিধানের মধ্য দিয়েই দেশে ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। সাংবিধানের একাধিক সংশোধনী আনার পরও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে ন্যস্ত করে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ব্যক্তিকেন্দ্রিক করা হয়।’

ড. আলী রীয়াজ বলেন, ‘গত ১৬ বছর ধরেই কেবল ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ১৯৭০ সালের পরে শেখ মুজিবুর রহমানের স্বৈরতন্ত্র, শেখ হাসিনার মধ্য দিয়ে আবার ফিরে আসে।’

তিনি বলেন, ‘শুধু ব্যক্তির অবসান নয়, গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে কাঠামোগত পরিবর্তনের যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, দেশের পরিবর্তনের যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে- সেটি বাস্তবায়নে সব রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার এটাই পথ।’

আলী রীয়াজ বলেন, জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে বিভিন্ন রকম জন-আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ ঘটেছে। ইতিমধ্যে আপনারা জানেন এই গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বে ছিলেন তরুণ ও ছাত্ররা। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও শক্তি। সেজন্য আকাঙ্ক্ষার এই ভিন্নতা থাকা স্বাভাবিক।

আলী রীয়াজ বলেন, সাধারণভাবে বলা হয়ে থাকে এটা নিঃসন্দেহে কেবলমাত্র একটি ফ্যাসিবাদী শাসন বা একজন ফ্যাসিবাদী শাসককে ক্ষমতা থেকে সরানোর উদ্দেশ্যে এই আন্দোলন হয়নি। তবে এটাও সত্য যে, এই আন্দোলনে যুক্ত থাকার আকাঙ্ক্ষা কারও কারও অতীতেও ছিল ও এখনো আছে। এই বাস্তবতাটা আমাদের স্বীকার করা দরকার।

জুলাই আন্দোলন পরবর্তী জন-আকাঙ্ক্ষার কথা তুলে ধরে এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেন, আজকে যখন আমি এই জন-আকাঙ্ক্ষার কথাটা বিবেচনা করি, তখন আমার কাছে যেটা মনে হয়, সেখানে দুটো বিষয় খুবই স্পষ্ট। সেটা হচ্ছে, যেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য আছে এবং যারা অংশগ্রহণ করেছেন তাদের মধ্যেও ঐকমত্য আছে। প্রথমত, বাংলাদেশে যাতে আর স্বৈরতন্ত্র ফিরে না আসে। এ বিষয়ে ঐকমত্যের কোনো পার্থক্য নেই। দ্বিতীয়ত, সকলে চান বাংলাদেশে যাতে একটা জবাদিহিতামূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা হয়। এগুলোকে আপনি নূন্যতম বলে বিবেচনা করুন, এগুলোকে আপনি মনে করে বিবেচনা করুন। রাজনৈতিক দল, সিভিল সোসাইটি, বিভিন্ন রকম পেশাজীবী সংগঠন, যারা আন্দোলনে প্রাণ দিয়েছে তাদের পরিবার ও যারা আহত হয়েছেন তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করুন। অন্ততপক্ষে এই দুটো জায়গায় তাদের ঐকমত্য আছে কি-না। এই দুটো জায়গা থেকে যদি আমরা শুরু করি, তাহলে বুঝতে পারবো আমাদের পথরেখাটা কী রকম হওয়া উচিত।

বাংলাদেশে ব্যক্তিতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্রের ইতিহাস তুলে ধরে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান আলী রীয়াজ বলেন, ‘বাংলাদেশে গত ১৬ বছর যাবত যে একটি ব্যক্তিতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেটা কিন্তু প্রথম বারের মতো ঘটেছিল তা কিন্তু নয়। বাংলাদেশে এর আগে আরেক দফা ব্যক্তিতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। ‘এক নেতা, এক দেশ’ এই স্লোগান ২০০৯ সালের পর বাংলাদেশে প্রথম উচ্চরণ হয়েছে তা নয়। ১৯৭৩ সালের পারে ১৯৭৫ সালে এক দলীয় ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত এবং পরবর্তী সময়ে ব্যক্তি, দল ও রাষ্ট্রকে একাকার করে দিয়ে এক ব্যক্তির শাসনের যে রূপ আমরা দেখতে পেয়েছিলাম, সেটাই আবার ফিরে এসেছিল ২০১৪ সালের মধ্যে। বিশেষত ২০২১ সালের পরে শেখ হাসিনার শাসনের মধ্য দিয়ে।’

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

শেখ মুজিবের স্বৈরতন্ত্র ফিরিয়ে আনেন হাসিনা : আলী রীয়াজ

প্রকাশের সময় : ০৯:৩৪:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, গত ১৬ বছর ধরেই কেবল ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ১৯৭০ সালের পরে শেখ মুজিবুর রহমানের স্বৈরতন্ত্র, শেখ হাসিনার মধ্য দিয়ে আবার ফিরে আসে।

শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ইস্কাটনে আঞ্চলিক লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ‘গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশ: সুশাসন ও গণতন্ত্র’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। সেমিনারটির আয়োজন করে সেন্টার ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড গুড গভর্ন্যান্স।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, ‘১৯৭২ সালে তৈরি করা সংবিধানের মধ্য দিয়েই দেশে ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। সাংবিধানের একাধিক সংশোধনী আনার পরও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে ন্যস্ত করে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ব্যক্তিকেন্দ্রিক করা হয়।’

ড. আলী রীয়াজ বলেন, ‘গত ১৬ বছর ধরেই কেবল ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ১৯৭০ সালের পরে শেখ মুজিবুর রহমানের স্বৈরতন্ত্র, শেখ হাসিনার মধ্য দিয়ে আবার ফিরে আসে।’

তিনি বলেন, ‘শুধু ব্যক্তির অবসান নয়, গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে কাঠামোগত পরিবর্তনের যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, দেশের পরিবর্তনের যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে- সেটি বাস্তবায়নে সব রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার এটাই পথ।’

আলী রীয়াজ বলেন, জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে বিভিন্ন রকম জন-আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ ঘটেছে। ইতিমধ্যে আপনারা জানেন এই গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বে ছিলেন তরুণ ও ছাত্ররা। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও শক্তি। সেজন্য আকাঙ্ক্ষার এই ভিন্নতা থাকা স্বাভাবিক।

আলী রীয়াজ বলেন, সাধারণভাবে বলা হয়ে থাকে এটা নিঃসন্দেহে কেবলমাত্র একটি ফ্যাসিবাদী শাসন বা একজন ফ্যাসিবাদী শাসককে ক্ষমতা থেকে সরানোর উদ্দেশ্যে এই আন্দোলন হয়নি। তবে এটাও সত্য যে, এই আন্দোলনে যুক্ত থাকার আকাঙ্ক্ষা কারও কারও অতীতেও ছিল ও এখনো আছে। এই বাস্তবতাটা আমাদের স্বীকার করা দরকার।

জুলাই আন্দোলন পরবর্তী জন-আকাঙ্ক্ষার কথা তুলে ধরে এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেন, আজকে যখন আমি এই জন-আকাঙ্ক্ষার কথাটা বিবেচনা করি, তখন আমার কাছে যেটা মনে হয়, সেখানে দুটো বিষয় খুবই স্পষ্ট। সেটা হচ্ছে, যেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য আছে এবং যারা অংশগ্রহণ করেছেন তাদের মধ্যেও ঐকমত্য আছে। প্রথমত, বাংলাদেশে যাতে আর স্বৈরতন্ত্র ফিরে না আসে। এ বিষয়ে ঐকমত্যের কোনো পার্থক্য নেই। দ্বিতীয়ত, সকলে চান বাংলাদেশে যাতে একটা জবাদিহিতামূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা হয়। এগুলোকে আপনি নূন্যতম বলে বিবেচনা করুন, এগুলোকে আপনি মনে করে বিবেচনা করুন। রাজনৈতিক দল, সিভিল সোসাইটি, বিভিন্ন রকম পেশাজীবী সংগঠন, যারা আন্দোলনে প্রাণ দিয়েছে তাদের পরিবার ও যারা আহত হয়েছেন তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করুন। অন্ততপক্ষে এই দুটো জায়গায় তাদের ঐকমত্য আছে কি-না। এই দুটো জায়গা থেকে যদি আমরা শুরু করি, তাহলে বুঝতে পারবো আমাদের পথরেখাটা কী রকম হওয়া উচিত।

বাংলাদেশে ব্যক্তিতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্রের ইতিহাস তুলে ধরে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান আলী রীয়াজ বলেন, ‘বাংলাদেশে গত ১৬ বছর যাবত যে একটি ব্যক্তিতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেটা কিন্তু প্রথম বারের মতো ঘটেছিল তা কিন্তু নয়। বাংলাদেশে এর আগে আরেক দফা ব্যক্তিতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। ‘এক নেতা, এক দেশ’ এই স্লোগান ২০০৯ সালের পর বাংলাদেশে প্রথম উচ্চরণ হয়েছে তা নয়। ১৯৭৩ সালের পারে ১৯৭৫ সালে এক দলীয় ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত এবং পরবর্তী সময়ে ব্যক্তি, দল ও রাষ্ট্রকে একাকার করে দিয়ে এক ব্যক্তির শাসনের যে রূপ আমরা দেখতে পেয়েছিলাম, সেটাই আবার ফিরে এসেছিল ২০১৪ সালের মধ্যে। বিশেষত ২০২১ সালের পরে শেখ হাসিনার শাসনের মধ্য দিয়ে।’