নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ব্যাংকের টাকা বন্ধ করে দুর্নাম দিতে চেয়েছিল যে পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি হয়েছে। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম দুর্নীতি করতে আসিনি, মানুষের সেবা করতে এসেছি। শেখ মুজিবের মেয়ে দুর্নীতি করে না।
মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) বিকাল ৩টার দিকে ভাঙ্গার কাজী আবু ইউসুফ স্টেডিয়ামে ফরিদপুরে জেলা আওয়ামী লীগের জনসভায় তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামান্য এমডি পদের লোভে একজন পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধে তৎপর হন। দুর্নীতির অপবাদ দেয়া হয়। বলেছিলাম, শেখ মুজিবের মেয়ে দুর্নীতি করে না। পদ্মা সেতু করতে চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম, অনেকে বলেছিল, সম্ভব না। মানুষ পাশে থাকলে অসাধ্য সাধন করা যায়।
শেখ হাসিনা বলেন, শেখ মুজিব বলেছিলেন বাংলাদেশের মানুষকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না, আসলেই আর কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের জন্য কাজ করে, দেশের কল্যাণে কাজ করে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা কাজ করছি। দেশকে আমরা আরো উন্নত করতে চাই।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ করার জন্য ২০০১ সালে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় এসে বন্ধ করে দেয়। আসলে ধ্বংস করাই তাদের চরিত্র। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে আবার উদ্যোগ নিই। অনেকে বলেছিল এটা সম্ভব না। অনেক ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত আছে, কিন্তু আমার ভরসা মানুষে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি গ্রামে স্কুলগুলো উন্নত করে দিচ্ছি। রাস্তাঘাটের উন্নতি করে দিয়েছি। শিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত করে দেওয়ার জন্য আমরা প্রায় প্রতি জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি। আমি জানি ফরিদপুরে কোনও বিশ্ববিদ্যালয় নাই। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো- ফরিদপুরে যে মেডিক্যাল কলেজ ছিল মাত্র ২৫০ বেডের। আমি সরকারে আসার পর সেই মেডিক্যাল কলেজের উন্নতি করে দিয়েছি। বিভাগে এখন পর্যন্ত চারটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি।
ফরিদপুর সবচেয়ে পুরনো একটা শহর হলেও সব সময় অবহেলিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই ফরিদপুরের সার্বিক উন্নয়ন, সেই সঙ্গে প্রতিটি উপজেলায় নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে বলেই সমগ্র দেশের উন্নতি হয়েছে।
তিনি বলেনম ফরিদপুরে, আমি জানি সকলের অনেক দিনের আশা, এখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয় করার। ইনশাআল্লাহ, আগামীতে সরকারে আসতে পারলে আমরা সেই বিশ্ববিদ্যালয় করে দেবো।
শেখ হাসিনা বলেন, অনেক ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত আছে, কিন্তু দেশের মানুষই আমার ভরসা। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বলেই দেশের উন্নয়ন হয়েছে। ভোটের অধিকারে সংগ্রাম করে আওয়ামী লীগ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় দেশের মানুষ উপকার পাচ্ছে। নৌকায় ভোট দিয়ে মানুষ যেভাবে স্বাধীনতা পেয়েছে, সেভাবে দেশব্যাপী উন্নয়ন পেয়েছে। আওয়ামী লীগ জনগণ ভোটে ক্ষমতায় এসেছে বলেই মানুষ উপকৃত হচ্ছে। গত সাড়ে ১৪ বছর যোগাযোগ ব্যবস্থায় সবচেয়ে বশি গুরুত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বজন হারিয়ে এই দেশে ফিরে এসেছিলাম ছয় বছর পর। যখন আওয়ামী লীগ আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করেছিল, একটা প্রত্যয় নিয়েই এসেছিলাম। আমার বাবা এই দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন, এই দেশের মানুষের ভাতের কষ্ট থাকবে না। কেউ গৃহহীন হয়ে থাকবে না। প্রত্যেকের দোরগোড়ায় চিকিৎসা পৌঁছে দেব। শিক্ষার মান উন্নত করবো। উন্নত জীবন দেব।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেকটি উপজেলায় আমরা কারিগরি স্কুল করে দিচ্ছি। আমাদের ছেলে-মেয়েরা কারিগরি-ভোকেশনাল ট্রেনিং যাতে পায়, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়, সেটা আমরা করে দিচ্ছি।
মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক করে দেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মেয়েদের কাজের সুযোগ করে দিয়েছি। প্রাইমারি শিক্ষক মেয়েরাও ৬০ পার্সেন্ট পাবে, সেইভাবে আমরা ব্যবস্থা করে দিয়েছি।
২০০৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ওয়াদা দিয়েছিলেন, তা স্মরণ করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। এখন সকলের হাতে মোবাইল ফোন। সবাই অনলাইন ব্যবহার করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি কখনো কোনোদিকে তাকায়নি। আমি তাকিয়েছি এ দেশের মানুষের দিকে। কারণ আওয়ামী লীগ দেশের জন্য, মানুষের জন্য কাজ করে। পদ্মা সেতু করে দিয়েছিলাম, আজ রেল চালু করে দিয়ে গেলাম। আপনাদেরকে পদ্মাসেতু, রেল উপহার দিয়েছি। একমাত্র নৌকায় ভোট দিলেই উন্নয়ন সম্ভব।
শেখ হাসিনা বলেন, আমার বাবা-মা, ভাই-বোন কেউ নেই। আছে শুধু বাংলাদেশের জনগণ। তাদের জন্যই আমার কাজ। জিয়া-এরশাদ-খালেদা লুটপাট আর দুর্নীতিতে মত্ত ছিল। তাদের সময়ে কেউ ভোট দিতে পারেনি। লুট করেছে তারা। আমরা সরকারে এসে সব ধরনের সেবা নিশ্চিত করেছি। কমিউনিটি ক্লিনিক, স্কুল-কলেজ, রাস্তাঘাট করে দিয়েছি।
আবারো নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে তিনি বলেন, আপনাদেরকে পদ্মাসেতু, রেল উপহার দিয়েছি। একমাত্র নৌকায় ভোট দিলেই উন্নয়ন সম্ভব।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় দেশের মানুষ উপকার পাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, নৌকায় ভোট দিয়ে মানুষ যেভাবে স্বাধীনতা পেয়েছে, সেভাবে দেশব্যাপী উন্নয়ন পেয়েছে। জনগণ ভোটে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে বলেই মানুষ উপকৃত হচ্ছে। স্বাধীনতার মার্কা নৌকা। উন্নয়নের প্রতীক নৌকা। নৌকায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছেন। এ নৌকায় ভোট দেওয়ার কারণে এত উন্নয়ন সমৃদ্ধি। এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে নৌকায় ভোট দিন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, লুটেরা বিএনপি এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করেছে। দুর্নীতি করে সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি বিএনপির নেতা। জামায়াত যুদ্ধাপরাধী। এরা দেশকে ধ্বংস করে দেবে। ধ্বংসের হাত থেকে নৌকাই আপনাদের রক্ষা করবে।
শেখ হাসিনা বলেন, গৃহহীন ও ভূমিহীনদের ভূমি এবং গৃহ দিচ্ছি। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বীর নিবাস করে দিয়েছি। তৃতীয় লিঙ্গদের ঘরবাড়ি দিয়েছি। কেউ পিছিয়ে থাকবে না। সবাইকে নিয়ে আমরা এগিয়ে যাবো।
ফের আবাদের পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারাদেশের সব জায়গা আবাদের আওতায় আনতে হবে। নিজেরা উৎপাদন করবো, নিজেদের চাহিদা পূরণ করবো। প্রয়োজনে অন্যদের দেবো। পাশাপাশি আমাদের বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের ধর্ম যাতে মানুষ ঠিকমতো জানে, সেজন্য সারাদেশে মডেল মসজিদ করে দিয়েছি। আমাদের দেশে সব ধর্মের মানুষ তার ধর্ম পালন করবে। এখানে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি নেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংরাদেশের মানুষ পাশে থাকলে অসাধ্য সাধন করা যায়। পদ্মা সেতু করে দিয়ে সেটা আবারও প্রমাণ করলাম। জাতির পিতা বলেছিলেন, বাংলাদেশের মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না। আসলেই পারেনি।
তিনি বলেন, ব্যাংকের এমডি থাকতে দেইনি বলে সেই ক্ষোভে হিলারি ক্লিনটনকে বলে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছিলেন। আমি চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম, বলেছি নিজেদের অর্থে করবো, করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, মিলিটারি ডিক্টেটরের আমলে কেউ ভোট দিতে পারতো না। কথাই তো আছে, ১০টা হোন্ডা ২০টা গুন্ডা ভোট ঠান্ডা।
কৃষক ও কৃষির উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের এখনো অনেক খাদ্য মজুত আছে। ১৮ মেট্রিক টন চাল মজুত আছে। আবার ধান উঠছে মাঠ থেকে। এ ধান কাটতে আমাদের ছাত্রলীগ, কৃষক লীগ ও আওয়ামী লীগ নেম গিয়েছিল। এটাইতো রাজনীতি।
ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হকের সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ। জনসভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও অংশ নেন।
এর আগে বেলা ১১টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার মাওয়া রেলওয়ে স্টেশনে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ঢাকা-ভাঙ্গা অংশের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন তিনি। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আংশিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। যাত্রী হিসেবে টিকিট কেটে ট্রেনে উঠেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সঙ্গে ছিলেন বোন শেখ রেহানা ও নাতি-নাতনিরা।
উদ্বোধনের পর কাউন্টার থেকে টিকিট কাটেন শেখ হাসিনা। এরপর প্রধানমন্ত্রী নিজেই হুইসেল (বাঁশি) বাজান এবং সংকেত দেন ট্রেন ছাড়ার। আর মাওয়া প্রান্ত থেকে ভাঙ্গার উদ্দেশে ট্রেনও ছুটে চলে।
বিকাল ৪টায় ভাঙ্গা থেকে গোপালগঞ্জ যাবেন প্রধানমন্ত্রী। সাড়ে ৫টায় টুঙ্গিপাড়ায় পৌঁছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাতে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাতে টুঙ্গিপাড়ায় নিজ বাড়িতে থাকবেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।