স্পোর্টস ডেস্ক :
ফুটবলের প্রায় সব রেকর্ডই নিজের করে নিয়েছিন তিনি। নিজেকে নিয়ে গেছেন সর্বকালের সেরাদের কাতারে। তিনি লিওনেল মেসি। ফুটবলের এই মহতারকরা ৩৬তম জন্মদিন। ১৯৮৭ সালের ২৪ জুন আর্জেন্টিনার রোজারিও শহরে জন্মগ্রহণ করেন বিশ্বকাপজয়ী এই ফুটবল জাদুকর। বিশ্বকাপ জয়ের পর প্রথম জন্মদিন হওয়ায় বিশ্বজুড়ে চলছে বিশেষ উদযাপন। গতকাল থেকেই বিশ্বের কোটি কোটি ভক্তদের শুভেচ্ছায় ভাসছেন ইন্টার মায়ামি তারকা।
জর্জ মেসি ও সেলিয়া কুচেত্তিনির সংসারের তৃতীয় সন্তান হিসেবে জন্ম নেন লিওনেল মেসি। এখন যে মেসির পায়ের জাদুতে মুগ্ধ পুরো বিশ্ব সেই মেসির শৈশবটা ছিল খুবই কঠিন। ১১ বছর বয়সে তার শরীরে গ্রোথ হরমোনজনিত জটিলতা দেখা দেয়। সমস্যা আরও বাড়ে কারণ তার বাবা মার চিকিৎসা করার সামর্থ্য না থাকায়। সেই চিকিৎসার জন্যই বার্সেলোনা পাড়ি দেয় মেসির পরিবার।
নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সাধ্য ছিলনা চিকিৎসায় এ রোগ সারানোর। যে কারণে শৈশবেই ফুটবলে ঝলক দেখানো মেসির প্রতি আর্জেন্টাইন ক্লাব রিভার প্লেট আগ্রহ দেখালেও হয়ে ওঠেনি যোগদান। তবে এরপরই স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনার নজরে আসেন তিনি। কথিত আছে নিজের প্রিয় ক্লাবের সাথে ফুটবল ইশ্বরের প্রথম চুক্তিটি নাকি হয়েছিল এক ন্যাপকিন পেপারে।
কাতালান ক্লাবটি রাজি হয় মেসির চিকিৎসার সকল ব্যবয়ভার বহন করার। এরপর তাঁর পরিবারও পাড়ি জমান স্পেনের বার্সেলোনায়। রোগ সারানোর পাশাপাশি মেসিকে ভর্তি করা হয় বার্সার একাডেমি লা মাসিয়ায়। এরপরের ইতিহাস শুধুই সাফল্য, অর্জন আর বিশ্বজয়ের। যে উপাখ্যানে জড়িয়ে আছে হৃদয়ভাঙার গল্পের সাথে স্বপ্নপূরপণের সফলতা।
মেসির সুপারস্টার হওয়াটা সেই বার্সাতেই ছিল বলেই হয়তো সৃষ্টিকর্তা স্পেনের এ শহরে নিয়ে যান তাকে। একাডেমি হয়ে মেসি ২০০৪ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে বার্সেলোনা মূল স্কোয়াডে সুযোগ পান। এরপরের গল্পটা সবার জানা। গত ২ দশকে ফুটবল শৈলীতে বিশ্বকে মোহিত করে রেখেছেন লিও।
এক ক্যালেন্ডারে বছরের সেরা খেলোয়াড়কে দেয়া হয় যে ট্রফি সেই ব্যালন ডি’অর মেসি জিতেছেন রেকর্ড ৭ বার। মেসির এ রেকর্ড অদূর ভবিষ্যতে কবে ভাঙবে কিংবা আদৌ ভাঙবে কিনা সেটা নিয়ে আছে বিতর্ক। কারণ মেসির অনন্য এই রেকর্ডের সবচেয়ে কাছের প্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর বর্ষসেরার ট্রফির সংখ্যা আরও দুটি কম।
এমনকি কোন একটি দেশের সব খেলোয়াড়ের মোট ব্যালন ডি’অর ট্রফিও টপকাতে পারেনি মেসিকে। মেসি-রোনালদোর মতো এক টানা এত মৌসুম দারুণ ফুটবল খেলা সামনের দিনগুলোতে ফুটবলারদের ফিটনেস বিবেচনায় সম্ভব হবে কিনা সেটা সময় বলে দিবে। আপাতত মেসি যে এই রেকর্ড নিজের কাছে রাখবেন বহু বছর সেটা বলে দেওয়া যায়।
নিজের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে মেসি খেলেছেন রোনালদিনহো, আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, জাভি, কার্লোস পুয়োলদের মত সব তারকার সাথে। জোহান ক্রুইফের পর আর্জেন্টাইন জাদুকরের হাত ধরেই সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছে বার্সেলোনা। মেসির সাথে একে একে ১০ টি লা লিগা, ৮ টি স্প্যানিশ সুপার কাপ, ৭ টি কোপা দেল রে, ৪ টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ৩ টি ক্লাব বিশ্বকাপ ও ৩ টি ইউরোপিয়ান সুপার কাপ জিতে বার্সা।
এমনকি ক্লাবের হয়ে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডটিও নিজের করে নিয়েছেন তিনি। বার্সেলোনার হয়ে ৭৭৮ ম্যাচে ৬৭২ গোল আর পিএসজির হয়ে ৭৫ ম্যাচে ৩২ গোল করেছেন আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার। জাতীয় দলের হয়ে ১৭৫ ম্যাচে এখন পর্যন্ত নামের পাশে ১০৩ গোল এলএমটেন। ক্লাব ও আন্তর্জাতিক ম্যাচ মিলিয়ে ১০২৮ ম্যাচে ৮০৭ গোল করেছেন এই সুপারস্টার।
২০২১ সালে আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে মেসির আন্তর্জাতিক ট্রফি জয়ের স্বপ্নপূরণ হয়। সেবার কোপা আমেরিকা জিতেছিলেন মেসি। তারপর ২০২২ সালে ফিনালিসিমা। অবশেষে ২০২২ সালে কাতার বিশ্বকাপ জিতে নিজের সবথেকে বড় স্বপ্নটা পূরণ করেন মেসি। বিশ্বজয়ী হওয়ার পর প্রথম জন্মদিন পালন করবেন মেসি। ভক্ত-সমর্থকরা এরই মধ্যে শুভেচ্ছাবার্তার বন্যা বইয়ে দিয়েছেন।