চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি :
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, অর্থনীতিতে সকল মানুষের জন্য সমান অধিকার থাকতে হবে। শুধু রাজনীতিতে নয়, অর্থনীতিতেও গণতন্ত্রায়ন করতে হবে।
শুক্রবার (৯ মে) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর কাজির দেউড়ি আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘কর্মসংস্থান ও বহুমাত্রিক শিল্পায়ন নিয়ে তারুণ্যের ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আমির খসরু বলেন, গত ১৫ বছর অর্থনীতিতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড অনুপস্থিত ছিল। সেটিকে নিশ্চিত করতে হবে। জনসংখ্যাকে সম্পদে পরিণত করতে হবে। এটি চাকরী বা ব্যবসা যেভাবেই হোক। এর জন্য দরকার শিক্ষা। বিএনপি ক্ষমতায় থেকে জিডিপির ৫ শতাংশ শিক্ষার জন্য ব্যয় করা হবে।
তিনি বলেন, জাতিকে প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত হতে হবে। স্বচ্ছতা আনা ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হলে প্রযুক্তির উন্নয়নের বিকল্প নেই। সরকারি যত অনুমতির বিষয় রয়েছে তা অনলাইন করা হবে। বিনিয়োগকারিদের জন্য বিডা থেকে ক্যাপ্টেন নিয়োগ করা হবে। তারা বিনিয়োগকারিদের সকল বিষয়গুলো দেখভাল করবে।
তিনি আরো বলেন, বিনিয়োগ নিয়ে দেশে অনেক সার্কাস দেখতে পাচ্ছি, দুঃখের সঙ্গে বলছি। কত রকমের সার্কাস! আমার কথাগুলো বলা অনেক সময় কঠিন হয়ে যায়। তবুও বলছি—যারা বিনিয়োগ বোঝে, তারা জানে এই সার্কাসের মাধ্যমে বিনিয়োগ হবে না।
আমীর খসরু বলেন, বিনিয়োগ হতে হলে বাংলাদেশে একটি নির্বাচিত, স্থিতিশীল সরকার থাকতে হবে। তখনই বিনিয়োগকারীরা সরকারের মানসিকতা, দায়বদ্ধতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা দেখে বিনিয়োগে আগ্রহী হবে।
‘আমাদের দেশের ভেতরে কিংবা বাইরে থেকে বিনিয়োগ আনতে হলে, আগে দরকার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। সেটা তখনই সম্ভব, যখন একটি প্রকৃত অর্থে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার থাকবে। আজকে কি বাংলাদেশে সেই অবস্থা আছে? আমরা স্বৈরাচারকে বিদায় দিয়েছি, কিন্তু এখনো দেশে একটি জবাবদিহিমূলক সরকার আসেনি।’
তিনি বলেন, যতদিন পর্যন্ত একটি নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা না হবে, ততদিন বিনিয়োগ হবে না না দেশের ভেতরে, না বাইরের কেউ আসবে।
চাকরির সুযোগ বাড়াতে হলে বিনিয়োগ বাড়ানোর গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে—বাংলাদেশের জন্য এক নম্বর অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার কী, আমি বলব বিনিয়োগ। দুই নম্বরও বিনিয়োগ, তিন নম্বরও বিনিয়োগ। বিনিয়োগ ছাড়া আত্মকর্মসংস্থান বা শিল্পায়ন কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, বিএনপির রাজনীতি শুরু হয়েছে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাত ধরে, যিনি মুক্তবাজার অর্থনীতির ভিত্তি রেখেছিলেন। আমরা সেই ধারাবাহিকতায় ‘সবার জন্য অর্থনীতি’র কথা বলি, গণতন্ত্রায়ণের কথা বলি। এগুলো ছাড়া দেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্মাণ সম্ভব নয়।
সেমিনারে আমির খসরু বলেন, আমরা দেশে বিনিয়োগ চাই। আগামী দিনে আমাদের দল সরকারে এলে এটাই হবে আমাদের বিনিয়োগ নীতিমালা। আমরা লিখে দিয়েছি, জনগণকে জানিয়ে দিয়েছি। আমরা শপথ নিয়েছি—আঠারো মাসে এক কোটি চাকরির ব্যবস্থা করব। আর সেটি হবে একটি গণতান্ত্রিক পদ্ধতির মধ্য দিয়ে।
তিনি বলেন, নতুন ব্যবস্থার জন্যই ৩১ দফা দেওয়া হয়েছে। তারপরও যদি কারও মাথায় না ঢোকে, তাহলে কিছু করার নেই।
বিনিয়োগ সম্মেলনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এখানে যে সম্মেলন হয়েছে, আমরা ওদের সঙ্গে কথা বলেছি। সবশেষে তাদের প্রশ্ন তোমাদের নির্বাচন কবে?
দেশি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের যাতে আমলাদের কাছে যেতে না হয় সেই পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা যে টেকনোলজির কথা বলছি সেটা হবে, সব কিছুর ডিসিশন অনলাইনে হবে। বাসায় বসে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যে কোনো কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন করা যাবে। এক্ষেত্রে যতো ধরনের সরকারি অনুমতির বিষয় আছে সব কিছু অনলাইনে করা যাবে।
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য বিএনপি যে পদক্ষেপের কথা বলছে তা দক্ষিণ এশিয়ার কোথাও নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা বিদেশ থেকে বিনিয়োগ করতে আসবে তাদের প্রত্যেকের জন্য বিডা থেকে একজন করে ক্যাপ্টেন নিয়োগ করবো। দেশের ইয়ং শিক্ষিত ছেলে-মেয়েরা এই ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব পালন করবে।