নিজস্ব প্রতিবেদক :
অবকাঠামো এক জায়গায় থামাতে হবে। শুধু অবকাঠামো তৈরি করে কোনো দেশ উন্নতি করতে পারেনি। অবকাঠামো যদি মানবসম্পদের সঙ্গে না মেলে তা হবে কঙ্কাল— এ কথা বলেছেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে অর্থনৈতিক সাংবাদিকদের সংগঠন ইআরএফ আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি। আরও বলেছেন, শুধু বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করলেই হবে না, মানসম্পন্ন শিক্ষা দরকার।
সভায় ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ প্রশ্ন রাখেন, দেশের মধ্যে ঋণ নিয়ে মানুষ পরিশোধ করে না। তাহলে কোন সাহসে বিদেশ থেকে ডলারে ঋণ নেয়া হলো?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই অধ্যাপক বলেন, ব্যবসায়ীদের সুবিধা দেয়ার জন্য সুদের হার এক জায়গায় ধরে রাখা হয়। পুঁজি পাচার হচ্ছে, বেগমপাড়া আছে। সিঙ্গাপুরের চেইন হোটেলে বাংলাদেশিরা বিনিয়োগ করছে। ডামি কোম্পানি তৈরি করে অর্থপাচার হচ্ছে। অনিশ্চয়তায়ও পাচার বাড়ে। বৈধ আয় হলেও দেশের ওপর আস্থা না থাকলে অর্থপাচার হয়।
তিনি বলেন, রিজার্ভের ডলার নিজেদের জন্য খরচ করা উচিত না। এই ডলার দেখিয়ে আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আনতে পারি। তাই দেখানোর জন্যই রিজার্ভ সংরক্ষণ করে রাখা উচিত।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, রিজার্ভ একটা সময়ে ব্যাপকভাবে বেড়েছে। তখন আমরা আত্মতুষ্টিতে ভুগেছি। রিজার্ভে প্রচুর ডলার ছিলো বলে যখন তখন বড় বড় প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছিলো। তখন কোন চিন্তা করা হয়নি, কারণ অনেক ডলার ছিলো। তবে এখন রিজার্ভ থেকে ডলার কমতে থাকায় চিন্তা বাড়ছে।
এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা বের হয়ে গেছে। কেউ তো এই অর্থ ব্যাগে করে নিয়ে যায়নি। ব্যাংকিং সিস্টেমেই পাচার হয়েছে, কিন্তু সবকিছু ডিজিটাল হলেও তা ধরা যায়নি।
অপ্রিয় সত্য কথা বলা অর্থনীতিবিদদের এ দেশের সরকার পছন্দ করে না উল্লেখ করে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, এই সংস্তৃতি এখনও তৈরি হয়নি। আমার মতো অর্থনীতিবিদ একুশে পদক পাবে না।
তিনি বলেন, আমাদের অর্থনীতি মানব সম্পদে অনেক দুর্বল। অবকাঠামোর জন্য অর্থনীতি আটকে থাকবে না। এখানের মেধাবী মানবসম্পদ বিদেশে চলে যাচ্ছে। ভারত থেকেও অনেক মানবসম্পদ বাহিরে চলে গিয়েছিলো। তারা পরবর্তীতে ফিরিয়ে এনে কাজে লাগিয়েছে। তবে আমরা সেরকমভাবে ফিরিয়ে এনে কাজে লাগাতে পারছি না। মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য আমরা কিছুই করছি। তাই এদিক থেকে আমাদের অর্থনীতি পিছিয়ে যাচ্ছে।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, কম খরচের প্রযুক্তি দিয়ে শিক্ষাখাত পরিচালনা করা যাবে না। বিশ্বের বহু দেশ শিক্ষা খাতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারে এগিয়ে গিয়েছে। তাই আমাদের দেশের শিক্ষা খাতে এখন দরকার উন্নত প্রযুক্তি। যদিও অনেক সময় আমরা কম খরচের প্রযুক্তি দিয়ে অনেক কিছু করতে পারি। তারপরেও এগুলো পর্যাপ্ত না। তাই শিক্ষা খাতে ব্যয় বাড়াতে হবে। একইসঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এসব কাজ করতে দরকার অনেক বরাদ্দ। এজন্য রাজস্ব আয় আরও বাড়াতে হবে বলেও জানান এই অর্থনীতিবিদ।