নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, শিয়ালের কাছে বারবার মুরগি বরগা দেয়া যায় না। একবারই দেয়া হয়েছে, ২০১৪ সালের নির্বাচনে ১৫৩ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতিয়ে নিয়ে ক্ষমতায় গেছেন, এবার আর তা হবে না।
শনিবার (১৫ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক সমাবেশে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। সমাবেশ শেষে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে থেকে একটি নীরব পদযাত্রা বের হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আইনজীবী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কৃষিবিদ, সাংবাদিক, শিক্ষক, কবি-সাহিত্যিকসহ বিভিন্ন পেশার নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
তিনি বলেন, আমরা তার কথায় নির্বাচনে গিয়েছিলাম। কিন্তু তার আগেই আমাদের ২৩ জন নেতাকে গ্রেফতার করল! আমাদের বিরুদ্ধে দেয়া হলো ময়লার গাড়ি পোড়ানোর মামলা! তারা পুরনো মামলায় সাজা দিতে চাচ্ছে। অনেকের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে সাজা দিয়েছে। সুতরাং এদের অধীনে নির্বাচন?
তিনি আরো বলেন, আজকে আমাদের সামনে কোনো পথ খোলা নেই। আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও জাতিকে রক্ষা করতে হলে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এক দফা শুধু বিএনপি বা দলের ব্যক্তির ডাক নয়। এটা সমগ্র জাতির ঘোষণা। ভিসা নীতি বা কী আসছে এগুলো দেখার বিষয় নয়। এটা যাদের দেখার বিষয় তারাই দেখবে। আমরা দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে সমাধান করব। আমাদের লক্ষ্য টেক ব্যাক বাংলাদেশ।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা আজকে চরম সঙ্কট ও ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন আমাদের তরুণ প্রজন্মের নেতা দেশনায়ক তারেক রহমান।
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে এক দফা দাবিতে সকল পেশাজীবী নেতৃবৃন্দকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সবাইকে আবারো জোটবদ্ধ হয়ে সমগ্র মানুষকে জাগ্রত করে এই সরকারের পদত্যাগ ঘটাতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা এখন অস্তিত্বের ক্রান্তিকাল পার করছি। আমরা জাতি হিসেবে বেঁচে থাকতে পারব কি না, ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য নিরাপদ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে পারব কি না- এগুলো আজ খুবই জরুরি। আজকে ক্ষমতাসীনরা রাষ্ট্রযন্ত্রের ব্যবহার করে জোর করে ক্ষমতা দখল করে রেখেছে। তারা দেশের সকল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ও রাষ্ট্রীয় সম্ভাবনাকে ধংস করে ফেলেছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা সবচেয়ে বেশি অসহায় বোধ করি বিচার ব্যবস্থার কাছে। আজকে শুধু জুডিশিয়াল ক্রাইমের মাধ্যমে গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় নেতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়েছে। হাইকোর্ট যে রায় দেয় ল’ইয়ার কোর্ট সেটি বাতিল করে দেয়। আমরা যাবো কোথায়? জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী খাদিজাতুল কোবরা এর জামিন বাতিল করেছে। তার কী অপরাধ? শুধু ইউটিউবে একটি অনুষ্ঠানে এ্যাংকরিং করেছে মাত্র। আজকে বিএনপি করলে কারো চাকরি হয় না। প্রমোশন হয় না। ব্যবসা করলেও বলা হয় বিএনপি করে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমাদের সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা হয়। আদালতে গেলে অত্যন্ত বিব্রতকর অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আজকে সাংবাদিকরা ঠিকমতো লিখতে পারে না। নিউজের ট্রিটমেন্ট দিতে হয় বিশেষ জায়গার নির্দেশে। টিভিতে লাইভ দেখানো হয়নি।
মির্জা ফখরুল বলেন, সুতরাং আজকে আমাদের ঘরে বসে থাকার সুযোগ নেই। বেরিয়ে আসতে হবে। এই সরকার টিভিতে তাদের উন্নয়ন প্রচার করছে। আর সাধারণ গরিব মানুষের ঘরে ছাদ নেই। এ যেন গায়ে কোর্ট আর পায়ে স্যান্ডেল নেই। জনগণের সঙ্গে তারা উন্নয়ন নিয়ে বিভ্রান্ত করছে।
পেশাজীবী ও বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকার কথা বলতে গিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যেকোনো পরিবর্তন কখনোই সম্পূর্ণ হয় না যতক্ষণ পেশাজীবী ও বুদ্ধিজীবীরা এগিয়ে আসেন। বিশ্বের বহু দেশে পেশাজীবী ও বুদ্ধিজীবীরা গণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন, স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনেও তাদের ভূমিকা ছিল অপরিসীম ও সর্বাগ্রে।
জাতি চরম ক্রান্তিলগ্নে আছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, অস্তিত্বের সংকটে জাতি। জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে রাষ্ট্রযন্ত্রগুলো ব্যবহার করে খুব সচেতনভাবে, সুপরিকল্পিতভাবে দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
সরকার বিচার ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, বেগম জিয়াকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে বন্দি করে রেখে বড় ক্রাইম করেছে সরকার। লোয়ারকোর্টে সাজা দেয়ার পর তা হাইকোর্ট বাড়িয়ে দিলো, সুপ্রিমকোর্ট আবার তা বহাল রাখলো।
মির্জা ফখরুল বলেন, জাতি আজ একটা চরম ক্রান্তিলগ্নে। এই ক্রান্তিলগ্ন কীসের? এটা জাতি হিসেবে নিজের অস্তিত্বের। জাতি হিসেবে আমি আমার কৃষ্টি এবং সংস্কৃতি নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবো কিনা। জাতি হিসেবে আমার গণতন্ত্রের জন্য কতগুলো ইনস্টিটিউশন দাঁড় করাতে পারব কি না। আজ আপনারা জানেন, কীভাবে প্রত্যেকটা পেশাকে ধ্বংস করা হচ্ছে। কীভাবে রাষ্ট্রের সমস্ত সম্ভাবনা ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, যেকোনো পরিবর্তন কখনোই সম্পূর্ণ হয় না, যতক্ষণ পর্যন্ত না পেশাজীবী, বুদ্ধিজীবীরা সামনে না আসেন। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে ডা. জোহার কথা। আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে তিনি যে ভূমিকা রাখেন। ৯০ এর দশকে ডা. মিলনের হত্যার পরই মানুষ দেশে নেমে এসেছে। আমি যে কথাটি বলতে চাই, আপনাদের ভূমিকা গোটা জাতি দেখতে চাই।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা সবচেয়ে বেশি অসহায় বোধ করি বিচার ব্যবস্থার কাছে, যখন আমরা কোর্টে যাই। আজ এ দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় গণতান্ত্রিক নেতা খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে আদালতের মাধ্যমে। নিম্ন আদালত শাস্তি দিলেন, আবার উচ্চ আদালত সেই শাস্তি বাড়িয়ে দিলেন। কোথায় যাব, কার কাছে যাব? জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের যে মেয়েটা খাদিজাতুল কোবরা, সে ইউটিউবে একটা উপস্থাপন করেছে, যার জন্য তাকে ১০ মাস ধরে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে আটকে রেখেছে। কার কাছে যাব? আমাদের কষ্ট হয়, যখন আমাদের সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়৷
ফখরুল আরও বলেন, সাংবাদিক ভাইরা অনেক চেষ্টা করে, কিন্তু তাদের ক্ষমতা নেই। আমরা ১২ তারিখে যে সমাবেশ করলাম। অদৃশ্য জায়গা থেকে বলা হলো, এটার ট্রিটমেন্ট এমনভাবে করা হয়, যাতে আমাদের আর আওয়ামী লীগেরটা একই মনে হয়। তারা বলে, আমি সব সুষ্ঠু নির্বাচন করব। আমি সব সুবিধা দেব। দেখেন না বিদেশিদের সঙ্গে কতো মিটিং করে। মানুষকে কীভাবে বোকা বানানো যায়, সেটাই তারা করে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের সব সিনিয়র নেতাদের শর্ত দিয়ে দিয়েছে। শত-শত গায়েবি মামলা দিয়েছে৷ ইকবাল মাহমুদ টুকু, আমানউল্লাহ আমানকে শর্ত দিয়েছে। আমাদের চেয়ারপার্সন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে শর্ত দিয়েছে। হাবিবকে যাবৎজীবন কারাদণ্ড দিয়েছে। কিছুদিন আগে ইশ্বরদীতে মিন্টুসহ ১৪ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। তারা নাকি শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা করেছে। চিন্তা করতে পারেন? একটা গণতান্ত্রিক দেশে একটি দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৪০ লাখ মামলা দেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে আপস? এর অধীনে নির্বাচন? আমাদের সামনে কোনো পথ নেই। আমাদের অবশ্যই এক দফা এক দাবি, হাসিনা তুই কবে যাবি এই নীতিতে থাকতে হবে। এটা কোনো দলের ডাক নয়, এটা জাতির দাবি।
সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলীর সভাপতিত্বে ও বিএসপিপির সদস্যসচিব কাদের গণি চৌধুরীর পরিচালনায় পেশাজীবী সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএসপিপির আহ্বায়ক ডা. জাহিদ হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী, সাবেক প্রোভিসি অধ্যাপক ড. আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, অধ্যাপক ড. তাজমেরী এসএ ইসলাম, ডা. আবদুল কুদ্দুস, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, অধ্যাপক ড. সদরুল আমিন, অধ্যাপক ড. আবদুল লতিফ মাসুম, অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া, অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ, ডা. মো: আবদুস সালাম, সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজী, কবি আবদুল হাই শিকদার, সাংবাদিক এম এ আজিজ, ডা. একেএম আজিজুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো: লুৎফর রহমান, প্রকৌশলী মো: হানিফ, প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিন বকুল, প্রকৌশলী মো: মোস্তাফা-ই জামান সেলিম, প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান চুন্নু প্রমুখ।
সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ডা. মো: রফিকুল ইসলাম, ডা. শফিকুল হায়দার পারভেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, ড. আল মোজাদ্দেদী আলফে ছানী, কৃষিবিদ গোলাম হাফিজ কেনেডি, শামীমুর রহমান শামীম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের অধ্যাপক ড. শামসুল আলম সেলিম, অধ্যাপক ড. মো: নুরুল ইসলাম, অধ্যাপক নজরুল ইসলাম সহ হাজারো পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।