Dhaka রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫, ১ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিক্ষা ব্যয় প্রাথমিকে বেড়েছে ২৫ শতাংশ, মাধ্যমিকে ৫১

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

গত বছর ছয় মাসে পারিবারিক শিক্ষা ব্যয় তার আগের বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রাথমিকে বেড়েছে ২৫ শতাংশ এবং মাধ্যমিকে বেড়েছে ৫১ শতাংশ। এর আগে ২০২২ সালে প্রাথমিকের একজন শিশুর জন্য পারিবারিক গড় ব্যয় ছিল ১৩ হাজার ৮৮২ টাকা, মাধ্যমিকে ছিল ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা। যা গ্রাম ও শহরে কিছু ভিন্নতা আছে।

শনিবার (৩০ মার্চ) সিরডাপ মিলনায়তনে গণসাক্ষরতা অভিযানের আয়োজিত ‘বাংলাদেশ বিদ্যালয় শিক্ষা:মহামারী উত্তর টেকসই পুনরুত্থান’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। এডুকেশন ওয়াচ- ২০২৩ প্রতিবেদনে এমন চিত্র পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন উপস্থাপনে বক্তারা জানান, দ্রব্যমূলের ঊর্ধগতিতে অভিভাবকদের আর্থিক সক্ষমতা কমেছে। অন্যদিকে বেড়েছে শিক্ষা ব্যয়।

এ কারণে দিনে দিনে শিক্ষা অর্জন অপশনাল হয়ে পড়ছে। প্রতিবেদনের তথ্য জানিয়ে তারা বলেন, করোনা সময়ে শ্রেণিকক্ষে যথাযথ পাঠদান না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা গাইডবইয়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।

প্রতিবেদনের তথ্য মতে, করোনা পরবর্তী সময়ে নোটগাইডের প্রতি নির্ভরতা ছিল প্রাথমিকে ৯২% এবং মাধ্যমিকে ৯৩%। এ সময় উভয় স্তরের প্রায় ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী জানায়, শ্রেণি কক্ষে তাদের পাঠ বোঝার ক্ষেত্রে অসুবিধা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এডুকেশন ওয়াচের আহ্বায়ক ড. মোশতাক রেজা চৌধুরী, সঞ্চালকের বক্তব্য দেন গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী এবং উপ-পরিচালক ড. মুস্তাফিজুর রহমান। অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্য দেন এডুকেশন ওয়াজের চেয়ারপারসন ড. কাজী খখলীকুজ্জমান আহমদ। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন এডুকেশন আছে এর মুখ্য গবেষক ড. মনজুর আহমদ, গবেষক দলের সদস্য ড. সৈয়দ শাহাদাত হোসেন, অধ্যাপক মাহফুজা খানম এবং ড. মোস্তাফিজুর রহমান।

অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরেন গণসাক্ষরতা অভিযানের উপপরিচালক ও গবেষক দলের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান। সারাদেশের আটটি বিভাগের ১৬টি জেলার মধ্যে থেকে ২৬টি উপজেলা ও পাঁচটি সিটি করপোরেশন এলাকা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে গবেষণাটি করা হয়েছে। গবেষণার জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষা কর্মকর্তা ও জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা মিলিয়ে মোট সাত হাজার ২২৫ জন কাছ থেকে তথ্য নেওয়া হয়েছে।

মোস্তাফিজুর রহমান জানান, শিক্ষার্থীদের ব্যয়ের চিত্রটি বের করা হয়েছে পঞ্চম শ্রেণি এবং নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার খরচের ভিত্তিতে। তিনি বলেন, ২০২২ সালে (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর জন্য বার্ষিক পারিবারিক গড় ব্যয় ছিল ১৩ হাজার ৮৮২ টাকা। তবে শহরাঞ্চলে এই খরচ বেশি। মফস্বল এলাকায় প্রাথমিক শিক্ষার্থীপিছু বার্ষিক পারিবারিক ব্যয় ছিল ১০ হাজার ৬৩৭ টাকা; যা শহরাঞ্চলে ছিল ১৮ হাজার ১৩২ টাকা। কিন্তু পরের বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসেই প্রাথমিকে এই খরচ ২৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে আট হাজার ৬৪৭ টাকা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে মাধ্যমিক স্তরের একজন শিক্ষার্থীর জন্য পরিবারের ব্যয় ছিল ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা। মফস্বল এলাকায় এ খরচ ২২ হাজার ৯০৯ টাকা এবং শহরাঞ্চলে ৩৫ হাজার ৬৬২ টাকা। কিন্তু গত বছরের প্রথম ছয় মাসে এই খরচ ৫১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৭১২ টাকা।

গবেষণার তথ্য বলছে, প্রাথমিক পর্যায়ে ৫৬ দশমিক ৫ শতাংশ ও মাধ্যমিকে ৫২ দশমিক ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী মহামারির পরে তাদের নতুন শ্রেণির পাঠ অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে। কিন্তু প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী পাঠ বোঝার ক্ষেত্রে অসুবিধায় ছিল।

প্রাথমিক পর্যায়ের ৪১ শতাংশ ও মাধ্যমিকের ৫৮ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী জানিয়েছে তাদের ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। তাদের বেশির ভাগই স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। তবে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৮ শতাংশ ও মাধ্যমিকের ১৭ শতাংশ স্কুলের কাজে বা লেখাপড়াসংক্রান্ত কাজে ইন্টারনেটের ব্যবহারের কথা উল্লেখ করেছে।

গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার সংক্রমণজনিত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের একটি বিদ্যালয় ছাড়ার পর আর ফিরে আসেনি। ২০২০ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণি এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে লেখাপড়া করত এমন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২০২৩ সালে এসে দেখা গেছে তাদের মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেণির ৪ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ষষ্ঠ শ্রেণির ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়েছে।

গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ওই ঝরে পড়া মহামারির জন্য প্রভাবিত। এজন্য যে কারণগুলো উঠে এসেছে, সেগুলো হলো, মহামারির কারণে নিম্ন-আয়ের পরিবারগুলোর আরও কমে যাওয়া, বিদ্যালয়ে পড়ালেখার জন্য অভিভাবকদের খরচ বৃদ্ধি, মহামারির কারণে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয় বন্ধ থাকা এবং বিদ্যালয় থেকে যথাযথ নির্দেশনার অভাব।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নিলে বিদেশে-অনলাইনে পরে থাকতে হবে : তারেককে ইঙ্গিত করে পাটওয়ারী

শিক্ষা ব্যয় প্রাথমিকে বেড়েছে ২৫ শতাংশ, মাধ্যমিকে ৫১

প্রকাশের সময় : ০৮:০৩:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ মার্চ ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

গত বছর ছয় মাসে পারিবারিক শিক্ষা ব্যয় তার আগের বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রাথমিকে বেড়েছে ২৫ শতাংশ এবং মাধ্যমিকে বেড়েছে ৫১ শতাংশ। এর আগে ২০২২ সালে প্রাথমিকের একজন শিশুর জন্য পারিবারিক গড় ব্যয় ছিল ১৩ হাজার ৮৮২ টাকা, মাধ্যমিকে ছিল ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা। যা গ্রাম ও শহরে কিছু ভিন্নতা আছে।

শনিবার (৩০ মার্চ) সিরডাপ মিলনায়তনে গণসাক্ষরতা অভিযানের আয়োজিত ‘বাংলাদেশ বিদ্যালয় শিক্ষা:মহামারী উত্তর টেকসই পুনরুত্থান’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। এডুকেশন ওয়াচ- ২০২৩ প্রতিবেদনে এমন চিত্র পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন উপস্থাপনে বক্তারা জানান, দ্রব্যমূলের ঊর্ধগতিতে অভিভাবকদের আর্থিক সক্ষমতা কমেছে। অন্যদিকে বেড়েছে শিক্ষা ব্যয়।

এ কারণে দিনে দিনে শিক্ষা অর্জন অপশনাল হয়ে পড়ছে। প্রতিবেদনের তথ্য জানিয়ে তারা বলেন, করোনা সময়ে শ্রেণিকক্ষে যথাযথ পাঠদান না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা গাইডবইয়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।

প্রতিবেদনের তথ্য মতে, করোনা পরবর্তী সময়ে নোটগাইডের প্রতি নির্ভরতা ছিল প্রাথমিকে ৯২% এবং মাধ্যমিকে ৯৩%। এ সময় উভয় স্তরের প্রায় ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী জানায়, শ্রেণি কক্ষে তাদের পাঠ বোঝার ক্ষেত্রে অসুবিধা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এডুকেশন ওয়াচের আহ্বায়ক ড. মোশতাক রেজা চৌধুরী, সঞ্চালকের বক্তব্য দেন গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী এবং উপ-পরিচালক ড. মুস্তাফিজুর রহমান। অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্য দেন এডুকেশন ওয়াজের চেয়ারপারসন ড. কাজী খখলীকুজ্জমান আহমদ। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন এডুকেশন আছে এর মুখ্য গবেষক ড. মনজুর আহমদ, গবেষক দলের সদস্য ড. সৈয়দ শাহাদাত হোসেন, অধ্যাপক মাহফুজা খানম এবং ড. মোস্তাফিজুর রহমান।

অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরেন গণসাক্ষরতা অভিযানের উপপরিচালক ও গবেষক দলের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান। সারাদেশের আটটি বিভাগের ১৬টি জেলার মধ্যে থেকে ২৬টি উপজেলা ও পাঁচটি সিটি করপোরেশন এলাকা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে গবেষণাটি করা হয়েছে। গবেষণার জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষা কর্মকর্তা ও জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা মিলিয়ে মোট সাত হাজার ২২৫ জন কাছ থেকে তথ্য নেওয়া হয়েছে।

মোস্তাফিজুর রহমান জানান, শিক্ষার্থীদের ব্যয়ের চিত্রটি বের করা হয়েছে পঞ্চম শ্রেণি এবং নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার খরচের ভিত্তিতে। তিনি বলেন, ২০২২ সালে (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর জন্য বার্ষিক পারিবারিক গড় ব্যয় ছিল ১৩ হাজার ৮৮২ টাকা। তবে শহরাঞ্চলে এই খরচ বেশি। মফস্বল এলাকায় প্রাথমিক শিক্ষার্থীপিছু বার্ষিক পারিবারিক ব্যয় ছিল ১০ হাজার ৬৩৭ টাকা; যা শহরাঞ্চলে ছিল ১৮ হাজার ১৩২ টাকা। কিন্তু পরের বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসেই প্রাথমিকে এই খরচ ২৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে আট হাজার ৬৪৭ টাকা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে মাধ্যমিক স্তরের একজন শিক্ষার্থীর জন্য পরিবারের ব্যয় ছিল ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা। মফস্বল এলাকায় এ খরচ ২২ হাজার ৯০৯ টাকা এবং শহরাঞ্চলে ৩৫ হাজার ৬৬২ টাকা। কিন্তু গত বছরের প্রথম ছয় মাসে এই খরচ ৫১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৭১২ টাকা।

গবেষণার তথ্য বলছে, প্রাথমিক পর্যায়ে ৫৬ দশমিক ৫ শতাংশ ও মাধ্যমিকে ৫২ দশমিক ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী মহামারির পরে তাদের নতুন শ্রেণির পাঠ অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে। কিন্তু প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী পাঠ বোঝার ক্ষেত্রে অসুবিধায় ছিল।

প্রাথমিক পর্যায়ের ৪১ শতাংশ ও মাধ্যমিকের ৫৮ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী জানিয়েছে তাদের ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। তাদের বেশির ভাগই স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। তবে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৮ শতাংশ ও মাধ্যমিকের ১৭ শতাংশ স্কুলের কাজে বা লেখাপড়াসংক্রান্ত কাজে ইন্টারনেটের ব্যবহারের কথা উল্লেখ করেছে।

গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার সংক্রমণজনিত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের একটি বিদ্যালয় ছাড়ার পর আর ফিরে আসেনি। ২০২০ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণি এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে লেখাপড়া করত এমন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২০২৩ সালে এসে দেখা গেছে তাদের মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেণির ৪ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ষষ্ঠ শ্রেণির ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়েছে।

গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ওই ঝরে পড়া মহামারির জন্য প্রভাবিত। এজন্য যে কারণগুলো উঠে এসেছে, সেগুলো হলো, মহামারির কারণে নিম্ন-আয়ের পরিবারগুলোর আরও কমে যাওয়া, বিদ্যালয়ে পড়ালেখার জন্য অভিভাবকদের খরচ বৃদ্ধি, মহামারির কারণে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয় বন্ধ থাকা এবং বিদ্যালয় থেকে যথাযথ নির্দেশনার অভাব।