নিজস্ব প্রতিবেদক :
শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার বলেন, শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া নিয়ে সরকার কাজ করছে। বাড়ি ভাড়ার বিষয়টির প্রতি আমরা সংবেদনশীল। এ বিষয়ে সরকার কাজ করছে। আমরা বিশ্বাস করি নতুন বেতন কমিশনের সুপারিশে আমরা আগামী বছর আরও একটি সুন্দর বেতন কাঠামো নিশ্চিত করতে পারব।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ নিয়ে সচিবালয়ের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, শিক্ষকদের দাবির প্রতি সরকার শ্রদ্ধাশীল ও সংবেদনশীল। নতুন বেতন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী আগামী বছর আরও সম্মানজনক একটি কাঠামোর দিকে এগোনোর সুযোগ তৈরি হবে।
অধ্যাপক সি আর আবরার বলেন, শিক্ষকরা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার প্রাণ। শুরু থেকেই আমি শিক্ষকদের বেতন, প্রশিক্ষণ ও মর্যাদা বাড়ানোর পক্ষে সোচ্চার। আমার সহকর্মী ও অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্যরাও এ বিষয়ে সহানুভূতিশীল। বর্তমানে শিক্ষক সংগঠনগুলো শতাংশভিত্তিক বাড়িভাড়া ২০ শতাংশ বাড়ানোসহ বিভিন্ন দাবি তুলেছেন। আর্থিক বাস্তবতা অনুযায়ী সরকার ৫ শতাংশ বৃদ্ধি এবং ন্যূনতম ২০০০ টাকার বিষয়ে আলোচনা করছে। আমরা বিশ্বাস করি, নতুন বেতন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী আগামী বছর আরও সম্মানজনক একটি কাঠামোর দিকে এগিয়ে যেতে পারবো।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, শিক্ষকদের দাবির প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সংবেদনশীল সরকার। সামর্থ্য অনুযায়ী শতাংশভিত্তিক বাড়িভাড়া দেওয়ার বিষয়টি সরকার সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে। একই সঙ্গে শিক্ষকদের পেশাগত উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাকে আধুনিক করার কাজও চলছে, কারণ শুধু বেতন নয়, সম্মান ও সক্ষমতাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, আমরা তিনটি নীতিতে এগোতে চাই। প্রথমত— বাস্তবতা থেকে মুখ না ফেরিয়ে বাস্তবতাকে বুঝে এগোনো। দ্বিতীয়ত দোষারোপ নয়, সমাধান খোঁজা। তৃতীয়ত— সংখ্যা নয়, শেখার মানকে সাফল্যের মাপকাঠি করা। এ ফলাফল আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। হয়তো এটি কষ্টের, কিন্তু সত্যের পথে ফেরার সূচনা। আমরা দায়িত্ব নিচ্ছি, শুনছি ও শিখছি। আমাদের লক্ষ্য একটাই— একটি সৎ, জবাবদিহিমূলক ও শিক্ষাভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা গঠন করা। যেখানে প্রতিটি ফলাফলই বাস্তব শেখার প্রতিফল হবে।
চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল কেন খারাপ হলো তা পর্যালোচনা করে খুঁজে বের করা হবে বলে জানিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, এবারের ফলাফল সবাইকে বিস্মিত করেছে। এতদিন ফলাফল ভালো দেখাতে গিয়ে শিক্ষার প্রকৃত সংকট আড়াল করা হয়েছে। এই ফলাফলের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় কোনোভাবেই দায়িত্ব এড়াতে পারে না। আমরা ফলাফলকে আত্মসমালোচনার সুযোগ হিসেবে দেখছি। ফলাফল কেন খারাপ হলো তা পর্যালোচনা করে খুঁজে বের করা হবে। শিক্ষার্থীদের মঙ্গলের জন্য এবার প্রাপ্য নম্বরই দেয়া হয়েছে।
এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় এবার পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমেছে। তবে কী কারণে এইচএসসির ফলাফল খারাপ হয়েছে, আগামী সপ্তাহেই বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এ বিষয়ে পর্যালোচনা করা হবে বলে জানিয়ে অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আববার বলেন, এবারের এইচএসসির ফলাফল অস্বস্তিকর। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ধরনের ফলাফলের দায় এড়াতে পারে না। তবে এবারের ফলাফল হয়েছে বাস্তবভিত্তিক। কেন এ ধরনের ফলাফল হয়েছে, তার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ডাটাভিত্তিক পর্যালোচনা করা হবে।
আগে পাসের হার এবং জিপিএ-৫ এর সংখ্যাই ছিল তৃপ্তির মানদণ্ড মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা চাই শিক্ষার ফলাফল আবার বাস্তবতায় ফিরে আসুক। দেশে ফলাফলের এমন এক সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল, যেখানে সংখ্যাই বড় সত্য হয়ে উঠেছিল।
তিনি আরো বলেন, ফলাফল ভালো দেখাতে গিয়ে শেখার সংকট আড়াল করার এই সংস্কৃতি আমরা বন্ধ করতে চাই। চাই, শিক্ষা ব্যবস্থা আবার বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করুক।
উপদেষ্টা বলেন, শিক্ষকদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল, বিশেষ করে এইচএসসিতে সীমান্তরেখায় থাকা শিক্ষার্থীদের প্রতি যেন ন্যায্যতা বজায় রাখা হয়।
শিক্ষা সচিব রেহানা পারভীন বলেন, আমরা শিক্ষকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। বিষয়টি নিয়ে প্রতিমুহূর্তে কাজ করছি। যদিও অর্থ উপদেষ্টা ও সচিব বর্তমানে দেশের বাইরে রয়েছেন। তবুও আমরা রাতদিন পরিশ্রম করে যাচ্ছি। যতটা করা যায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। আলোচনায় বসলে সমাধান আসবে। লামছাম বরাদ্দ থেকে শতাংশভিত্তিক ব্যবস্থা ইতিবাচক একটি পদক্ষেপ। কিছুদিনের মধ্যে জাতীয় বেতন স্কেল হবে ইনশাল্লাহ। তখন এটার একটা ইতিবাচক প্রভাব থাকবে। এই প্রচেষ্টায় সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। আমরা দাবি করছি এবং চেষ্টা করছি। এটার প্রভাব দেখতে কিছুটা সময় লাগবে।